হাইকোর্টের রায়ে হাজার হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারির চাকরি বাতিল নিয়ে ফের সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।সোমবার হাইকোর্টের রায়ের পরই এর প্রতিবাদ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।বুধবার সুর আরও চড়ালেন তিনি। আউশগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ফুটবল ময়দানে বোলপুরের তৃণমূল প্রার্থী অসিত কুমার মালের সমর্থনে জনসভা করেন মমতা। সেখানেই তাঁর ভাষণে উঠে আসে এসএসসি সংক্রান্ত হাই কোর্টের সোমবারের রায়ের প্রসঙ্গ। আদালতের এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যেও বিজেপির চক্রান্ত রয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।মমতা বলেন, ‘‘কোন দফতর কী ভাবে চাকরি দেয়, সেটা সেই দফতরের ব্যাপার। আমি তার মধ্যে ঢুকি না। কিন্তু ২৬ হাজার শিক্ষককে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। আবার বলা হয়েছে, সুদ-সহ বেতনও ফেরত দিতে হবে। এতে আমার খারাপ লেগেছে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “ভুল তো যে কোনও কেউ করে দিতে পারে।” মমতার কথায়, ‘‘যদি বলতেন, এখানে অসুবিধা রয়েছে, এটা তোমার ভুল হয়েছে, তোমরা সংশোধন করো, আমরা করে দিতাম। সেটা না করে একতরফা রায়ে সব বাতিল করে দিল।’’ এ প্রসঙ্গে বিজেপিকে দুষে মমতা আরও বলেন, ‘‘যে সব বিজেপি নেতা এ ভাবে চাকরি খাচ্ছেন, তাঁদের জিজ্ঞেস করছি, সারা জীবন সরকারি চাকরি করার পর সেই বেতন ফেরত দিতে পারবেন তো? এই ২৬ হাজার ছেলেমেয়ে এখন কোথায় যাবে? বাংলায় কি সব স্কুল এ বার বন্ধ হয়ে যাবে? শিক্ষকের চাকরি কি আর হবে না এখানে?’’ তাঁর হাতে চাকরি থাকলেও আদালতে গিয়ে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত আটকে যাচ্ছে বলে আক্ষেপ করেন মমতা। বলেন, ‘‘আমার হাতে এখনও ১০ লক্ষ চাকরি রয়েছে। সব সরকারি দফতরের চাকরি। কিন্তু আমি দিতে পারছি না। আদালতে গিয়ে সে সব আটকে যাচ্ছে।’’ এ প্রসঙ্গেই মমতার অভিযোগ, ‘‘হাই কোর্ট টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে বিজেপি। সুপ্রিম কোর্টের কথা আমি বলছি না। সেখানে এখনও আমরা বিচারপ্রার্থী। কিন্তু হাই কোর্টে বিজেপি চাইলেই শুধু বিচার হয়। ওরা যা চায়, হয়ে যায়। আর কেউ বিচার পায় না।’’ নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকেও কটাক্ষ করেন মমতা। বলেন, ‘‘সবচেয়ে বড় গদ্দার যে, তার বিরুদ্ধে খুনের মামলা থাকলেও কোনও বিচার হয় না। তার জেল হয় না।এটা কি আইন?’’ মমতা জানান, ‘‘কোনও বিচারপতিকে নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। তবে বিচার নিয়ে কথা বলার অধিকার আমার আছে। কেউ অন্যায় করে থাকলে স্ক্রুটিনি করা যেত। তাঁকে পরামর্শ দেওয়া যেত। কিন্তু তা না করে ২৬ হাজার চাকরি খেয়ে নেওয়া হল? এটা কি মগের মুলুক?’’ যাঁদের চাকরি গিয়েছে, তাঁদের বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘শিক্ষক – শিক্ষিকাদের বলব, আজকে ২৬ হাজার ছেলে মেয়ের চাকরি খেয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে কোনও শিক্ষক শিক্ষকা, সরকারি কর্মচারী একটি ভোটও আর বিজেপিকে দেবেন না। সিপিএম কংগ্রেসকে দেবেন না। এরা চাকরি খেয়ে নিচ্ছে। আপনার ভবিষ্যৎ খেয়ে নিচ্ছে। কে জানে কাল আবার চাকরি খাবে। এরা যত তাড়াতাড়ি বিদায় নেয় তত মঙ্গল।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শুনে রাখুন মাটির কথা। আগেরবার সব জায়গায় সব সিট পেয়েও ৫৪৩-র মধ্যে ৩০৩ পেয়েছিল। এবার তার কিছুই পাবে না।বিজেপির প্রচুর টাকা, জনগণের টাকা মেরে নিজের প্রচার করছে। কিন্তু জিততে পাবে না।” পাশাপাশি, এদিন জেলবন্দি জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রতকে দরাজ সার্টিফিকেট দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তাঁর কথায়, “মাটির ছেলে কেষ্ট। আপনারা ওকে কত ভালোবাসতেন। ওর কী অগুণ আছে জানি না। কেসে কী আছে জানি না। সেটা আইন আইনের পথে চলবে। কিন্তু একটাও গরিব লোক ওর সামনে দাঁড়ালে ও ফিরিয়ে দিত না।” একইসঙ্গে বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তিনি। মমতার দাবি, “প্রতি ইলেকশনে ওকে নজরবন্দি করে রাখত। যাতে ইলেকশনের দিন বেরতে না পারেন।” এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার বাড়িতে ইডি তল্লাশির কথাও বলেন তিনি। মমতার কটাক্ষ, “চাঁদুর বাড়িতেও রেড করল। রেড করেই বলছে, হয় বিজেপিকে ভোট দাও নাহলে ইডির কাছে যাও।”