বান্টি মুখার্জি, ক্যানিং: প্রত্যন্ত সুন্দরবনের সংখ্যালঘু অধুষ্যিত এলাকা রামচন্দ্র খালি পঞ্চায়েতের কলাহাজরা গ্রাম। গ্রামের হতদরিদ্র এক পরিবারে লিলুফা মোল্লার জন্ম। বাবা লুরমতির মোল্লা পেশায় ভাঙাচোরার ব্যবসা করেন। মা লুৎফা মোল্লা গৃহবধূ।পরিবারে এক ছেলে ও এক মেয়ে। পড়াশোনায় ছোট থেকে মেধাবী লিলুফা।
নুন আনতে যে পরিবারের পান্তা ফুরায়, সেই পরিবারে জন্মগ্রহণ করে পড়াশোনা করে বড় হওয়া ভীষণ কঠিন। পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে একসময় পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় লিলুফার। পড়াশোনার জন্য আবারও জেদ চেপে বসেছিল। নিজের জেদের জন্য বাবা-মায়ের হাত ধরে আবারও ভর্তি হয়েছিল বাসন্তীর নির্দেশখালির সুন্দরবন আল-মানার গার্লস স্কুলে।
সেখানে নিখরচায় পড়াশোনার সুযোগ পায় দরিদ্র এই মেধাবী ছাত্রী। সুযোগ পেয়েই নিজেকে বিকশিত করে তোলার চেষ্টা করে হতদরিদ্র সংখ্যালঘু পরিবারের একমাত্র মেয়ে।জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক। সুন্দরবন আল-মানার গার্লস স্কুল থেকে ১০ জন মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। ১০ জন সংখ্যালঘু ছাত্রী মধ্যশিক্ষা পর্ষদের মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেছে।
তাদের মধ্যে হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে লিলুফা ১০ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে। চারটি বিষয়ে লেটার মার্কস সহ লিলুফার মোট প্রাপ্ত নম্বর ৫৩৬।বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৬৫, অঙ্কে ৪৫, ভৌত বিঞ্জানে ৬৫, জীবন বিঞ্জানে ৯৬, ইতিহাসে ৮১ এবং ভূগোলে ৯৪ নম্বর পেয়েছে।লিলুফা হতে চায় একজন দক্ষ চিকিৎসক।
তার কথায়, গ্রামের অসংখ্য হতদরিদ্র মানুষ দুরারোগে রোগে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। অনেক সময় চিকিৎসার জন্য ক্যানিং, বারুইপুর এমনকী কলকাতায় ছুটতে হয়। যাতে করে গ্রামের মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা পায়, তার জন্য চিকিৎসক হতেই হবে। সুন্দরবন আল-মানার গার্লস স্কুলের শিক্ষক আবুল কাশেম লস্কর জানিয়েছেন, লিলুফা মাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
আগামী দিনে আরও এমন লিলুফা যাতে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৈরি করা যায়, সেজন্য আমারা কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যাবে। পাশাপাশি লিলুফা যাতে তার স্বপ্ন বাস্তবে রূপায়িত করতে পারে, তার জন্য সুন্দরবন আল-মানার গার্লস স্কুল সর্বদা পাশে থাকবে।
লিলুফার এমন অভাবনীয় সাফল্যে সুন্দরবন আল-মানার গার্লস স্কুলের সচিব আনোয়ার হোসেন কাসেমি যথেষ্ট খুশি।
তিনি জানিয়েছেন, হতদরিদ্র পরিবার কিংবা স্কুলছুট ছাত্রীদের নিয়েই আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নারী জাতিকে যদি শিক্ষার আলোয় আনা যায়, তবে দেশ ও দশের উন্নতি সাধন সম্ভব। লিলুফার মতো আরও দরিদ্র মেধাবী ছাত্রীরা যাতে সমাজের বুকে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে তার জন্য আমাদের এই কর্মযঞ্জ।
অন্যদিকে, স্থানীয় প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক সাইদুল ইসলাম গাজি প্রতিবেশী দরিদ্র পরিবারের মেয়ে লিলুফার সাফল্যে খুশি। তিনি জানিয়েছেন, লিলুফা কলাহাজরা গ্রামের গর্ব।