Wednesday, May 8, 2024
spot_img
Homeজেলাক্যানিংয়ের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শ্মশানে মকরস্নানে ডুব দেবেন ৫০ হাজার পুণ্যার্থী

ক্যানিংয়ের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শ্মশানে মকরস্নানে ডুব দেবেন ৫০ হাজার পুণ্যার্থী

বান্টি মুখার্জি, ক্যানিং: একদিকে দূরত্ব, অন্যদিকে আর্থিক অক্ষমতার জেরে পুণ্য অর্জনের জন্য সুদূর গঙ্গাসাগরে যেতে না পেরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মধ্যযুগের দাপুটে পিয়ালি নদীর তীরে কালিগঙ্গা শ্মশান মেলায় পঞ্চাশ হাজারেরও অধিক পুণ্যার্থী মকরস্নান করবেন বলে আশাবাদী মেলা কমিটি।

ক্যানিংয়ের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শ্মশানে মকরস্নানে ডুব দেবেন ৫০ হাজার পুণ্যার্থী

প্রায় ১৫০ বছর আগে কলেরায় ভুগে অনেক লোকজন মারা গেলে কাছাকাছি কোনও শ্মশানঘাট না থাকার কারণে সৎকার করা দুর্বিসহ হয়ে ওঠে।ফলে পিয়ালি নদীতে মৃতদেহ ফেলে দেওয়া কিংবা নদীর তীরে পুঁতে ফেলা হত। এভাবেই চলত মৃতদেহের শেষকৃত্য। প্রায় ৬৭ বছর আগে বিজয় সরদার, কানাই শিকারী, মোহন সরদার, ঘনশ্যাম নস্কর,

ক্যানিংয়ের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শ্মশানে মকরস্নানে ডুব দেবেন ৫০ হাজার পুণ্যার্থী

নন্দ মণ্ডল, কালীপদ নস্কর, ওয়াদেজ গাজী, ভবসিন্ধু নস্কর, ইউনুস মণ্ডল, চন্দ্রশেখর নস্কর, উপেন অধিকারী সহ গ্রামের মোড়ল মাতব্বরদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়। সেই সময় বধুকুলার বেশকিছু গ্রামবাসী মিলিত ভাবে জমি দান করেন। মৃতদেহ সৎকারের জন্য পিয়ালি নদীর তীরে গড়ে তোলেন শ্মশান এবং কালী মায়ের মন্দির।

ক্যানিংয়ের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শ্মশানে মকরস্নানে ডুব দেবেন ৫০ হাজার পুণ্যার্থী

সেই থেকেই নাম করণ হয় কালীগঙ্গা শ্মশান।
বর্তমানে এই শ্মশান এবং কালীমন্দির ঘিরে গড়ে উঠেছে মানুষের এক মহামিলন ক্ষেত্র মেলা। প্রতি বছর মাঘ মাসের প্রথম তিনদিন মকরস্নান উপলক্ষে মেলা বসে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা, বাসন্তী, ক্যানিং, জয়নগর, কুলতলি, মগরাহাট, মথুরাপুর, মন্দিরবাজার, বাইরুপুর সহ জেলার অন্যান্য প্রান্তের সাধারণ মানুষ এসে এখানে ভিড় জমায়।

ক্যানিংয়ের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শ্মশানে মকরস্নানে ডুব দেবেন ৫০ হাজার পুণ্যার্থী

কেউ আসেন পুণ্যার্জনের জন্য, আবার কেউ বা আসেন মেলায় ঘুরতে। তিনদিনের মেলায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়।
কালীগঙ্গা শ্মশান দীর্ঘদিন অবহেলিত ভাবে পড়ে থাকলেও বর্তমান রাজ্য সরকারের সাহায্যে শশ্মানে গড়ে উঠেছে যাত্রী প্রতিক্ষালয়, বৈতরণী প্রকল্পের আধুনিক মানের মৃতদেহ সৎকারের জন্য চুল্লি, যাত্রী প্রতীক্ষালয়, পানীয় জলের কল সহ শৌচালয়।ঐতিহ্যবাহী মেলা হলেও বেশকিছু অসাধু ও সমাজবিরোধীদের দাপটে মেলার মাঠে চলত চটুল নাচ,

ক্যানিংয়ের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শ্মশানে মকরস্নানে ডুব দেবেন ৫০ হাজার পুণ্যার্থী

জুয়া, মদের আসর এমনকী ড্যান্স হাঙ্গামা।চলতি বছরে ঐতিহ্যবাহী এই মেলা হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। তবে সে সমস্ত জল্পনাকে কোনওপ্রকার আমল না দিয়ে মেলার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তৎপর হয় গোপালপুর পঞ্চায়েতের নবনির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রধান আকচার মণ্ডল। তিনি ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশরাম দাস ও ক্যানিং ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি উত্তম দাসের নজরে আনেন মেলার প্রসঙ্গ।

ক্যানিংয়ের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শ্মশানে মকরস্নানে ডুব দেবেন ৫০ হাজার পুণ্যার্থী

এরপরই শুরু হয় তোড়জোড়। বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের উদ্যোগে মহামানবের মিলন ক্ষেত্র ঐতিহ্যবাহী এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলায় কোনও প্রকার অপসংস্কৃতি থাকবে না। গ্রামীণ এই ঐতিহ্যবাহী মেলা হবে মহামানবের মিলন ক্ষেত্র। মেলায় থাকবে না কোনও জুয়ার আসর, মদের আসর, অশ্লীল নাচ এবং গান।

ক্যানিংয়ের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শ্মশানে মকরস্নানে ডুব দেবেন ৫০ হাজার পুণ্যার্থী

অন্যদিকে, স্থানীয় মানুষের দাবি, একসময় এই শ্মশানঘাটে কোনও পরিষেবা ছিল না। বর্তমানে মৃতদেহ সৎকারের জন্য রাজ্য সরকারের একান্ত সদিচ্ছায় চুল্লি হলেও জ্বালানি কাঠের কোনও ব্যবস্থা নেই। তাছাড়াও রাতে দুষ্কৃতীদের উপদ্রব হয়।শ্মশানে কোনও আলোর ব্যবস্থা নেই। শ্মশানের যত্রতত্র ময়লা আবর্জনায় ভরপুর।

ক্যানিংয়ের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শ্মশানে মকরস্নানে ডুব দেবেন ৫০ হাজার পুণ্যার্থী

এছাড়াও যাত্রী নিরাপত্তায় জোর দেওয়া উচিত শ্মশানের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের। তাহলে আগামী দিনে এই কালীগঙ্গা শ্মশান মেলার ঐতিহ্য বাড়বে।যদিও মেলা কমিটির সদস্যরা সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে জানিয়েছেন, শ্মশানে সমস্ত পরিষেবাই পাওয়া যাবে। তার কাজ শুরু হয়েছে। তবে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে।

Most Popular