স্টাফ রিপোর্টার : একদিকে বাদল অধিবেশনের মণিপুর-সহ বিভিন্ন ইস্যুতে উত্তপ্ত সংসদ। অন্যদিকে মালদহ নারী নির্যাতন, নির্বাচন পরবর্তী হিংসা নিয়ে উত্তাল রাজ্যের বিধানসভাও। বুধবার দিনভর উত্তপ্ত থাকে বাংলা বিধানসভা। বৃহস্পতিবারও তেমনটাই আঁচ পাওয়া গেল।পঞ্চায়েত ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে আলোচনার দাবিতে মুলতুবি প্রস্তাব জমা দিয়েছিল বিজেপি।
বিজেপির আনা মুলতুবি প্রস্তাব গ্রহণ করেন বিধানসভার স্পিকার। বৃহস্পতিবার সেই আলোচনার সময়ে মাঝ পর্যায়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্য রাখতে শুরু করেছিলেন। সেই সময়েই একুশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠে আসে মমতার কথায়।প্রশ্ন তোলেন, ‘নন্দীগ্রামের কথা ভুলে গিয়েছেন? নন্দীগ্রামের রেজাল্ট কী করে বদলে গেল লোডশেডিংয়ে? ভুলে গিয়েছেন? এত গায়ে লাগছে কেন?’
মুখ্যমন্ত্রীর আগেই বক্তব্য রাখেন শুভেন্দু। তিনি মূলত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে শাসক দলের ভূমিকার নিন্দা করেন তাঁর বক্তৃতায়। বলেন, ‘এ বার ভোটা যা করেছেন আগামী বছর সুদে আসলে হিসাব দিতে হবে।’ এর পরেই মমতা বলতে উঠে, শুভেন্দুর নাম না নিয়েও বিরোধী দলনেতার বক্তৃতার প্রসঙ্গ টানেন। বলেন, ‘যিনি এর আগে বললেন তিনি তৃণমূলে ছিলেন।
কিন্তু তিনি আগের কথা, সিপিএম জমানার কথা বললেন না।’ মমতা ভোটে হিংসার বিষয়টি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দায়ি হিসাবে তুলে ধরে বলেন, ‘কেন্দ্র যেমন ভোট করায় না, তেমন রাজ্য সরকারও করে না।’ এর পরেই প্রশ্ন তোলেন, ‘নন্দীগ্রামে দু’ঘণ্টা লাইট বন্ধ করে দিয়ে কী হয়েছিল ভুলে গেলেন?’ মমতা এই প্রশ্ন তোলার পরেই শুভেন্দুর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
স্পিকার সকলকে বসতে অনুরোধ করলেও বিক্ষোভ চলতে থাকে। অন্য দিকে, মমতার বক্তৃতাও চলতে থাকে। তিনি বলেন, ‘যেটা আলোচনা হয়, সেটাই আমি বলছি। আমারও কথা বলার অধিকার রয়েছে। এটা নিয়ে তো মামলা হয়েছিল। সেই মামলা এখনও চলছে।’ এরপরই বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে ওয়াক আউট করেন বিজেপি বিধায়করা। অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে হাতে কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি বিধায়করা।
পরে সাংবাদিক বৈঠক করে শুভেন্দুূ বলেন, ‘আমি যখন নন্দীগ্রামের মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছিলাম, আমায় বাধা দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এটা বিচারাধীন বিষয়। আজকে সেই বিচারাধীন বিষয় নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করলেন এবং তা বিধানসভার কার্যবিবরণীতে ঠাঁই পেল।তৃণমূল গণতন্ত্র মানে না। বিধানসভার প্রতি দায়বদ্ধতা নেই শাসকদলের। বিরোধীরা আলোচনা চায়, শাসকদল এড়িয়ে যায়।
তবু আজ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে মনোজ টিগ্গার নেতৃত্বে আমরা মুলতুবি প্রস্তাব আনি। অধ্যক্ষকে ধন্যবাদ, তিনি আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করে আলোচনার কথা বলেছেন।উনি আমাকে মেদিনীপুরের নেতা করে রেখেছিলেন। বিজেপি আমাকে রাজ্যের নেতা বানিয়েছে। খুব কষ্ট ওনার। তাই বিরোধী দলনেতা বলতে চান না।’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে ‘গণতন্ত্রের লজ্জা’ বলেও উল্লেখ করেন শুভেন্দু।
এনিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের পালটা প্রতিক্রিয়া, ‘জেলা পরিষদে নন্দীগ্রামে ১০ হাজারের বেশি ভোটে শুভেন্দু হেরেছেন, সারা রাজ্য জানে তা। সেই মানসিক অবসাদ, হতাশা মেটাতে বারবার বিধানসভার অধিবেশনকে ডিসটার্ব করছেন।’