অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজকুমার সূত্রধর, সাগর: আজ, বুধবার মেলা প্রাঙ্গণ ছোঁয়া সাগরতটে প্রবচন ও ধ্যান
কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন হচ্ছে।
সেই মঞ্চ থেকে ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে আগত বিদেশী পুনার্থীরা বিশ্ব শান্তির বার্তা দেবেন। কারণ, ওই বিদেশী
পুনার্থীরা মনে করেন, কপিলমুনির তপস্থলিকে কেন্দ্র করে মহামানবের এই মিলন মেলা হয়। যা শান্তি আর ঐক্যের
বার্তা দিয়ে থাকে। কপিলমুনি এখানে সেই উদ্দেশ্য নিয়ে মধ্যপ্রদেশের অমরকন্টকের নর্মদাতট থেকে দীর্ঘ
তপস্যার পর সাগরের এই পাতাল প্রদেশে এসে সমাহিত হয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবে সেই শান্তির বাতাবরণের স্থান
এই সাগরসঙ্গম এখন তা আর ভারতের ভিতর সীমাবদ্ধ নেই। নেট প্রযুক্তির দৌলতে গোটা বিশ্ব দুনিয়ার মানুষের
কাছে এই মেলা সমাদর লাভ করেছে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার ভিতর অনেকদিন ধরে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ চলছে। শ‘য়ে শ‘য়ে
লোক মারা গিয়েছে। আগামী দিনেও আরও কতজন শেষ হয়ে যাবে তা কারও জানা নেই। স্বাভাবিকভাবে ইউক্রেন ও
রাশিয়া থেকে আগত অতিথি ভক্তরা এই পবিত্র স্থান থেকে তাই গোটা বিশ্বের কাছে শান্তির কথা বলতে চান। যাতে
রাশিয়া ও ইউক্রেন এই ভয়ঙ্কর যুদ্ধ থেকে বরাবরের মতো বিরতির দিকে চলে যায়। পাশাপাশি আগামী দিনে যাতে এমন
হিংসাশ্রয়ী যুদ্ধ-র সঙ্গে বিশ্বের আর কোনও দেশ যুক্ত না হয়, সেটাও তারা চান। মোদ্দা কথা শান্তি চান। এমন
মানবিক আবেদন নিয়ে তাঁদের এই মেলায় আসা। গঙ্গাসাগর মেলায় একটি বড় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হিসেবে মায়াপুরের
ইস্কন পরিচালন কর্তৃপক্ষ বড় ভূমিকা নিয়ে থাকে। ৫ নম্বর রাস্তার গায়ে ইস্কনের নিজেদের আশ্রম। সেখানে এসে
উঠেছেন বিশ্বের ১৫ টি দেশের ৬০ জন পুরুষ ও মহিলা পুনার্থী। এর ভিতর রাশিয়া, ইউক্রেন ছাড়াও ইউরোপের অনেকে
রয়েছেন। বুধবার সকালে সাগরের বাস টার্মিনাস থেকে মেলায় আসা সমস্ত স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে একটি বড় ট্যাবলো
বের হচেছ। তাতেও বিদেশী ভক্তরা অংশ নিতে পারে। মায়াপুর ইস্কনের মিডিয়ার মুখপাত্র রমেশ মহারাজ বলেন, এবার
করোনার ভয় নেই।তাই প্রচুর মানুষের সমাগম হবে। আমাদের বিদেশ থেকে ভক্তরাও এসেছেন। প্রবচন ও ধ্যান
কেন্দ্রর উদ্বোধনের সময় তাঁরা সকলে বিশ্ব শান্তির জন্য প্রার্থনা জানাবেন। এ বিষয়ে তাঁদের অভিপ্রায় খুলে
বলবেন। তিনি জানান, এবার আমরা এক লাখ মানুষের খাওয়ার আয়োজন করেছি। এছাড়াও মেডিকেল সহ অন্য
ব্যবস্থাও রাখা হচেছ।
অন্যদিকে, পিছিয়ে নেই সাগরের ভারত সেবাশ্রম সংঘ। এখন মেলা নিয়ে সার্বিকভাবে সরকারিস্তরে যতটা তৎপরতা
দেখানো হয়। এখন থেকে ৫০ বছর আগে সরকারি কোনও সাহায্য দূর কেউ ফিরেও তাকাতো না। কলকাতা থেকে
বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপে এই মেলার ব্যাপারে মূল উদ্যোগ ছিল সাগরের ভারত সেবাশ্রম সংঘের। তখন এত রাস্তা হয়নি।
কাকদ্বীপ ও কচুবেড়িয়ার ভিতর ভেসেল কিংবা এত পাকা জেটি ছিল না। নৌকা করে প্রবল ঢেউয়ের ভিতর দিয়ে
তীর্থযাত্রীদের সাগরমেলায় আসতে হত। ভারত সেবাশ্রম সংঘের সম্পাদক ও কর্মবীর নিমাই মহারাজ বলেন, তখন
আমাদের এই আশ্রম থেকে তৎকালীন শীর্ষ গুরু মহারাজরা দায়িত্ব নিয়ে পায়ে হেঁটে কচুবেড়িয়া যেতেন। এর ভিতর
যার নাম করতেই হয়, তিনি কানাই মহারাজ। তীর্থযাত্রীদের সঙ্গে করে নিয়ে আসতেন। ভারত সেবাশ্রম সংঘের এই
সব শ্রদ্বেয় পুজনীয় মহারাজদের নেতৃত্বে কয়েকশো স্বেচ্ছাসেবকরাই সেই সময় মেলায় আসা তীর্থযাত্রীদের থাকা,
খাওয়া থেকে অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করত। কেউ হারিয়ে গেলে তাঁকে তার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কাজ
করতে হত। হাসিমুখে তা করত সকলে। তখন এখানে বিদ্যুতের আলো ছিল না। অনেক কষ্ট করে ভারত সেবাশ্রম সংঘ
তীর্থযাত্রীদের সেবা করত। এখন অবশ্য সরকার অনেক বেশি উদ্যোগ নিয়েছে। খুব ভালো। তবে এখনও ভারত
সেবাশ্রম সংঘ ও তার স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী আগের মতো তৎপর। মেলার সময় আগত তীর্থযাত্রীদের থাকা ও
খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও বাইরে বাস টার্মিনাস থেকে সাগরতট ও মেলা প্রাঙ্গণে ভিড় সামাল দিতে
স্বেচ্ছাসেবকরা রাতদিন কাজ করে। নিমাই মহারাজ বলেন, এবারও সাগরের জল কলসি করে তুলে মেলার সূচনা করা
হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমাদের এখানে অনেক তীর্থযাত্রী এসে গিয়েছেন। এর পাশাপাশি ৫ নম্বর রাস্তা দিয়ে কচুবেড়িয়ার
দিকে যেতে কিছুটা এগলেই বীর অভিমুন্য স্পোটিং ক্লাব। এর রিলিফ সেক্রেটারি বিষ্ণুপদ মজুমদার বলেন, এবার
তীর্থযাত্রীদের সেবা করতে তারা তৈরি। এই ক্লাবের ভিতরে ছাড়াও হেলিপ্যাডের কাছে ক্যাম্প করা হয়েছে। সব
মিলিয়ে ১০০০ জনের থাকা ছাড়াও খাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে প্রতিদিন। অন্য কোথাও জায়গা না পেলে এখানে সাদর
আমন্ত্রণ সাগরে আগত অতিথিদের।
[8:19 pm, 10/01/2023] Boudi Press: আজ বুধবার রবীন্দ্র সদন বাংলা একাদেমীতে শুরু হচ্ছে জাঁকজমকপূর্ণ পাঁচদিন ব্যাপী সাহিত্য মেলা
সুদীপ্ত বিশ্বাস ঃ “শতাব্দী শেষ হয়ে আসছে, একটু পা চালিয়ে, ভাই”, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের এই বিখ্যাত লাইনটিকে পাথেয় করে আজ বুধবার থেকে শুরু হতে চলেছে নতুন বছরের সাহিত্য উৎসব ও লিটল ম্যাগাজিন মেলা। রবীন্দ্রসদন বাংলা আকাদেমী চত্বরে পাঁচদিন ব্যাপী এই সাহিত্য উৎসব চলবে। বাংলা সংস্কৃতির বিবিধতায় সুসজ্জিত এই অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৩৫০টি ক্ষুদ্র পত্র-পত্রিকা এবং বিশিষ্ঠ সাহিত্যিকরা অংশ গ্রহণ করছেন।
সাহিত্য উৎসব ও লিটল ম্যাগাজিন মেলা যুগ্মভাবে উদ্বোধন করবেন কথাকার অমর মিত্র এবং কবি দেবদাস আচার্য। এছাড়াও উপস্থিত থাকবেন আকাদেমির সম্মানীয় সদস্যগণ সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। মফঃস্বলের ক্ষুদ্র পত্রপত্রিকা, নতুন লেখক-লেখিকাদের কাছে এই মেলার গুরুত্ব অনেকখানি। এবারের উৎসব উপলক্ষ্যে প্রায় ৩৯৬ জন কবি তাঁদের স্বরচিত কবিতা পাঠ করবেন। কীভাবে এক গল্পের অবধারণা সৃষ্টি হয়, আর কিভাবে সেই ধারণার পটভূমি সেজে ওঠে বইয়ের পাতায়। এমনই সব আকর্ষক বিষয়ও আলোচনা করবেন বিশিষ্ট লেখকরা। মেলার কয়েকদিন প্রকাশিত হবে বহু ছোট বড়ো উপন্যাস, কবিতা সংগ্রহ। বিশিষ্ট কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত-র দ্বিশতজন্মবর্ষের প্রাক্কালে একটি বিশেষ স্মারক গ্রন্থ ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত: ফিরে দেখা’ প্রকাশিত হচ্ছে। আকাদেমির তরফ থেকে প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমনটাই জানানো হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবছরও সান্ধ্যকালীন সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে সাজবে আকাদেমির মঞ্চ।
মেলার আয়োজন নিয়ে পত্রিকা সম্পাদক, বিভিন্ন প্রকাশক সংস্থা এবং সাহিত্য প্রেমীদের মনে এক খুশির রেশ রয়েছে। বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে এই মেলা শুরু করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে তৃণমূল সরকারের আমলে এই মেলা আরও জাঁকজমকপূর্ণ রূপ নিয়েছে।