বিশ্ব সমাচার, সাগর: দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর ব্লকের অন্তর্গত ঘোড়ামারার পরিচিতি সারা বিশ্বের কাছে ডুবন্ত দ্বীপ হিসেবে। একদিকে নদীর ভাঙনে ভিটেমাটি হারানোর ভয়, আর অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই, এই দ্বীপের মানুষজনের রোজনামচা। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় হল আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন। আর সেই উন্নয়নের কাজের পরিকল্পনা আগাম অনুমোদনের জন্য মঙ্গলবার এক অভিনব গ্রামসভার আয়োজন করে ঘোড়ামারা গ্রাম পঞ্চায়েত।
জেলার সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতেই ১৪ ডিসেম্বর গ্রামসভা করার নির্দেশ থাকলেও বিশেষ অনুমতি নিয়ে ঘোড়ামারা গ্রাম পঞ্চায়েত গ্রামসভার আয়োজন করে ১৩ তারিখ। স্থানীয় মিলন বিদ্যাপীঠের মাঠে দু’দিন ধরে চলা এই গ্রামসভা দিবসে নানা ধরনের কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করলেন পঞ্চায়েত এলাকার কচিকাঁচা থেকে বয়স্করাও। এদিন পঞ্চায়েতের গ্রামসভার মাঠে গিয়ে দেখা গেল, সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আয়োজিত ম্যারাথন দৌড়ে তরুণ, যুবকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়লেন তিয়াত্তর বছরের বৃদ্ধও।
আবার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের কাছি টানা প্রতিযোগিতা জমে উঠল প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। গ্রামসভার মাঠের একদিকে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের রং তুলির আঁচড়ে যখন ফুটে উঠছিল নির্মল গ্রামের প্রতিচ্ছবি, তখন অন্যদিকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় দেখা গেল সমানে সমানে টক্কর। আবার বিশ্বকাপ ফুটবলের আমেজ গ্রামসভা দিবসে পাওয়ার লক্ষ্যে স্থানীয় খেলোয়াড়দের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ফুটবল প্রতিযোগিতা।
এদিন গ্রামসভা দিবস উপলক্ষে ‘নারী ক্ষমতায়নের হাত ধরে গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভারও আয়োজন করে গ্রাম পঞ্চায়েত। বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা পরিষদ সদস্য মহীতোষ দাসের পাশাপাশি মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশিক্ষণ ও সম্পদ কেন্দ্রের প্রশিক্ষক সঞ্চালক দেবযানী চৌধুরি, সুবর্ণা রায়, আইএসজিপি দপ্তরের ডিস্ট্রিক্ট কো-অর্ডিনেটর অনির্বাণ রায় সহ অন্যান্য আধিকারিকরা।
কীভাবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি সমবায় গঠন করে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা করেন সুবর্ণা রায়। এদিকে, জেলা পরিষদ সদস্য মহীতোষবাবু বাল্যবিবাহ রোধে মহিলাদের আর্থিক ক্ষমতায়নের ওপর জোর দেন।এদিন গ্রামসভার মাঠ সেজে উঠেছিল নানান সচেতনতা মূলক পোস্টার ও ব্যানারে। সেইসঙ্গে বকেয়া পঞ্চায়েত কর আদায়ের স্টল, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির,
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হস্তশিল্পের স্টল, ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্টলগুলি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ প্রসঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জীব সাগর বলেন, পঞ্চায়েত ব্যবস্থাপনাকে আরও জনমুখী করে তোলার উদ্দেশেই সীমিত আর্থিক ক্ষমতার মধ্যে গতানুগতিক গ্রামসভার অধিবেশন না করে এই গ্রাম সভা দিবসের আয়োজন করা হয়েছে। পঞ্চায়েতের কাজকর্মে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করাই গ্রাম পঞ্চায়েতের মূল লক্ষ্য।