Tuesday, May 7, 2024
spot_img
Homeরাজ্যসন্দেশখালিতে অস্ত্রভাণ্ডারের হদিশ, রোবট নিয়ে ময়দানে নামল এনএসজি

সন্দেশখালিতে অস্ত্রভাণ্ডারের হদিশ, রোবট নিয়ে ময়দানে নামল এনএসজি

যে ছবি এতদিন রূপোলি পর্দায়, ওয়েব সিরিজে দেখা যেত তাই যেন দেখা গেল সন্দেশখালিতে। ভোটের বঙ্গে ফের শিরোনামে শেখ শাহজাহানের সন্দেশখালি। শেখ শাহজাহানের গড়ে অস্ত্রভাণ্ডারের হদিশ। আর সেই বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করতে রাজ্যে প্রথমবার ময়দানে নামল এনএসজি।সিবিআই গোপন সূত্রে খবর পায় সন্দেশখালির আগারহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মল্লিকপাড়ার তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য হাফিজুল খাঁর ভগ্নিপতি আবু তালেব মোল্লার বাড়িতে আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা মজুত করা হয়েছে। সেই খবরের ভিত্তিতে শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ১০ সদস্যের একটি দল হানা দেয়। সঙ্গে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। সিবিআইয়ের সঙ্গী বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীরাও।বাড়িটিতে কোনও মানুষ ছিল না। ছিল না বিদ্যুৎ সংযোগও। বোমা খোঁজার জন্য বিশেষ স্ক্যানারও নিয়ে যাওয়া হয়। সিবিআই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের বাড়ির মেঝে ভাঙে। সেখান থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে সিবিআই।সূত্রের খবর, বাড়ির মেঝে খুড়ে ১৫ টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা।কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ৩টি বিদেশি বন্দুক, ১টি দেশি বন্দুক, ১টি কোল্ট অফিসিয়াল পুলিশ রিভলবার, ১টি করে দেশি ও বিদেশি পিস্তল উদ্ধার হয়েছে। বলে রাখা ভালো, কোল্ট অফিসিয়াল রিভলবার একমাত্র পুলিশই ব্যবহার করে। কীভাবে তা আবু তালেবের বাড়িতে এল, তা নিয়ে দানা বেঁধেছে রহস্য। এছাড়া ১২০ রাউন্ড ৯এমএম বুলেট, .৪৫ কার্তুজ ৫০টি, ৯ এমএম কার্তুজ ১২০টি, .৩৮০ কার্তুজ ৫০টি এবং .৩২ কার্তুজ ৮টি বাজেয়াপ্ত করেছে সিবিআই। এছাড়া শেখ শাহজাহানের বেশ কয়েকটি পরিচয়পত্রও আবু তালেবের বাড়ি থেকে পাওয়া গিয়েছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে বেশ কয়েকটি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সবকটি দেশি বোমা বলেই মনে করা হচ্ছে। এরপর বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করতে খবর দেওয়া হয় এনএসজিকে। জঙ্গিদমনে এই বিশেষ বাহিনী গঠন করেছিল ইউপিএ সরকার। বিকেল ৪টে নাগাদ এনএসজির জওয়ানরা বেশ কয়েকটি গাড়িতে করে এসে পৌঁছন ঘটনাস্থলে। গাড়ি থেকে একে একে নামানো হয় বোমা নিষ্ক্রিয় করার অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি। নামানো হয় একটি রোবট।এর পর সমস্ত যন্ত্রপাতি তৈরি করে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে রোবটটিকে পাঠানো হয় বিস্ফোরক বোঝাই সেই ঘরের ভিতরে।ব্যাটারিচালিত এবং দূর থেকে নিয়ন্ত্রণযোগ্য এই রোবট নিরাপদ ভাবে বোমা ও বিস্ফোরক চিহ্নিত করার কাজে ব্যবহার করে এনএসজি, ভারতীয় সেনা এবং বিভিন্ন কেন্দ্রীয় বাহিনী। জওয়ানদের প্রাণহানির ঝুঁকি এড়িয়ে বোমা বা বিস্ফোরক খুঁজে বার করা, সরানো এবং নষ্ট করার কাজে ব্যবহার করা হয় এই রোবট। সাধারণ বিস্ফোরকের পাশাপাশি, রাসায়নিক এমনকি, পরমাণু বোমাও চিহ্নিত ও বহন করতে পারে এই রোবট।এরপর যেখানে সেখানে বিস্ফোরক মজুত থাকতে পারে, এমন অনুমান করে বাড়ির আশপাশে অটোমেটিক রোবট স্ক্যানার দিয়ে তল্লাশি করা হয়। প্রস্তুত রাখা ছিল অত্যাধুনিক অ্যাম্বুল্যান্সও। এদিন আবু তালেবের বাড়িতে ঢোকার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই একটি ব্যাগ ঝুলিয়ে বেরিয়ে আসে রোবট।রহস্যজনক ব্যাগ নিয়ে আবু তালেবের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে রোবোটিক ডিভাইস। সূত্রের খবর তাতে ভরা ছিল বিস্ফোরক।পত্রিকাটি মুদ্রণে যাওয়া পর্যন্ত সেগুলি নিষ্ক্রিয়া করার কাজ চলছে।এদিকে তল্লাশিতে আনা হয়েছিল স্নিফার ডগ, আনা হয়েছিল মাইন ডিকেটক্টরও। এদিকে সন্দেশখালির ঘটনায় ইতিমধ্যেই রিপোর্ট তলব করেছে নির্বাচন কমিশন। এসপি-র কাছে রিপোর্ট তলব করেছেন রাজ্য নোডাল অফিসার আনন্দ কুমার।এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। অন্যদিকে, সন্দেশখালিতে বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কটাক্ষ, সন্দেশখালিতে ইডি, সিবিআই, এনআইএ-র পর এনএসজিও এল! আর কী? সেনা নামাতে হবে? এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলের পোস্ট শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে যে ভাবে বেড়ে উঠেছে শাহজাহান শেখেরা, তাতে মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছেন উনি।’’ বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয়ও এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘এনএসজি মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে ওই মামলা থেকে সিবিআইকে সরাতে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘যে জঙ্গির বাড়িতে এত বিপুল পরিমাণে আগ্নেয়াস্ত্র মজুত করে রাখা, তাকে কেন আড়াল করার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?’’ পাল্টা তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘সন্দেশখালি ইস্যু জিইয়ে রাখার জন্য পরিকল্পিত চক্রান্তে অতিনাটকীয় কাজকর্ম করে ভোট প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে দিল্লির তরফ থেকে। আগাম সাজানো নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। খবর ছড়িয়ে, যন্ত্র নামিয়ে বাজার গরম করছে। পুলিশের আরও সতর্ক থাকা দরকার।’’

Most Popular