স্টাফ রিপোর্টার : হকের চাকরির দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করেই যাচ্ছেন নবম থেকে দ্বাদশ স্তরের মেধাতালিকাভুক্ত চাকরিপ্রার্থীরা।শনিবার তাঁদের আন্দোলন পড়ল ১০০০ দিনে।আর এই হাজার তম দিনে ধর্মতলার সেই ধর্নামঞ্চে মাথা মুড়িয়ে প্রতিবাদ করলেন এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীরা।
এদিন হকের চাকরির দাবিতে রাস্তাতেই মাথা ন্যাড়া হতে দেখা যায় রাসমণি পাত্র নামে এক মহিলা আন্দোলনকারীকে।প্রতিবাদী ওই মহিলা চাকরিপ্রার্থী জানান, “যন্ত্রণার হাজার দিনে আর কোনও পথ খুঁজে না পেয়ে মাথা নেড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পাইনি। সংসার ছেড়ে ধরনামঞ্চে বসে আছি। পাচ্ছি না কিছুই।”
ওই চাকরিপ্রার্থীর আবেদন, অবিলম্বে তাঁর মতো চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হোক।তাঁর আবেদন, ‘‘রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আপনারা সবাই আমাদের সমস্যার সমাধান করুন…। কেউ শুনতে পাচ্ছেন? আমাদের চাকরি দিন।’’ রাসমণিদের অভিযোগ, যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা চাকরি পাচ্ছেন না। অযোগ্যরা চাকরি করছেন।
আর আইনের জট কাটানোর ক্ষমতা কেবলমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে বলে মনে করছেন এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীরা। বুকে প্ল্যাকার্ড নিয়ে এক চাকরিপ্রার্থী রাসমণিকে দেখিয়ে বলেন, ‘‘আর কী কী ভাবে প্রতিবাদ করলে আমরা চাকরি পাব!’’ আর এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘‘এখন মাথার চুল দিলাম আমরা।
এ বার চাকরির দাবিতে জীবনও দেব। তখন হয়তো চাকরি দেবে এই সরকার!’’ চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, ২০১৬ সালের এসএলএস-টির নম্বরভিত্তিক মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়নি। সামনের সারির মেধাকে বঞ্চিত করে পিছনের সারির প্রার্থীদের নিয়োগ করা হয়েছে। এবং এসএমএসের মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগ হয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালে ২৯ দিন অনশন করেছিলেন ওই চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও তাঁরা চাকরি পাননি— এই অভিযোগে আবার অনশনে বসেন কয়েকশো যুবক-যুবতী। ২০২১ সালে সল্টলেকে ১৮৭ দিন ধর্না দেন।
তার পর গত ১০০০ দিবারাত্রি কেটেছে রাস্তায়। কিন্তু চাকরি হয়নি। অনশন মঞ্চে ১০০০ দিনে অন্য রকম ভাবে প্রতিবাদ করে রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলেন রাসমণিরা।।এদিকে এদিন দুপুরে চাকরিপ্রার্থীদের ধর্নামঞ্চে যান তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি চাকরিপ্রার্থীদের পাশে থেকে তাঁদের সঙ্গে ধরনায় বসেন।
আর তাঁকে দেখেই আন্দোলনকারীদের একাংশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি নিয়ে ‘চোর’ লেখা পোস্টার হাতে স্লোগান তুলতে থাকেন। যদিও এঁরা সকলে বিজেপি সমর্থক বলে অভিযোগ চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের।যদিও কুণাল ঘোষ এসবকে গুরুত্ব না দিয়ে সংক্ষেপে জানান, ন্যায্য চাকরির দাবিতে আন্দোলনকারীকে নেড়া হতে দেখে তিনি এই মঞ্চে এসেছেন।
ওঁদের ধরনায় কিছুক্ষণ শামিল হতে চান বলে জানান। এদিন ধরনায় যোগ দিয়ে কুণাল ঘোষ চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। সেখান থেকে তিনি ফোনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।এদিন বেশ কিছুক্ষণ ধরে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে কথা বলেন কুণাল।
পরে তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, অভিষেক ব্যানার্জি এবং শিক্ষামন্ত্রী চান এঁদের চাকরি হোক। জটিলতার জন্য আটকে আছে চাকরি। বিষয়টি আদালতেও গড়িয়েছে। গোটা বিষয়টির সমাধান সূত্র বের করতে আগামী সোমবার বিকেল ৩টেয় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে এঁরা বৈঠকে বসবেন।”
এরপরেই কুণাল বলেন, “সরকার যদি ভুল করে থাকে তবে সরকারের তরফেই প্রায়শ্চিত্ত করা হবে।” এদিকে এই সময়েই ওই মঞ্চের কাছে ছিলেন কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী । তাঁর সঙ্গে কুণাল ঘোষের সাময়িক বচসা বাঁধে।সংবাদমাধ্যমের সামনেই ‘চোর ধরো জেলে ভরো’ স্লোগান তুলতে থাকেন কৌস্তভ বাগচি।
কৌস্তভ বাগচি বলেন, ‘সরকারি দলের প্রতিনিধিরা এখানে কী নাটক করতে এসেছেন? যদি হিম্মত থাকে তাহলে রাজ্য সরকার কাউকে নিয়োগপত্র দিয়ে পাঠাক। আসলে একটাই কথা বলতে হবে চোর ধরো আর জেলে ভরো।’ অন্যদিকে কুণাল ঘোষ যাওয়ার খানিক আগেই এই মঞ্চে পৌঁছেছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।
তিনি কুণালের আগমনে কার্যত খেপে ওঠেন। বিমান বসুর বক্তব্য, একই সময়ে ওঁর এই মঞ্চে আসা ঠিক হয়নি। রাজ্য সরকারের যে প্রতিনিধি এলেন, তাঁর লজ্জা হওয়া উচিত। বাড়ি গিয়ে স্ত্রীকে বলা উচিত যে আজ চাকরির ন্যায্য দাবিতে একজন নারী মাথা মুণ্ডন করেছেন।