রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল, মৌসুনী: ঘর থেকে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টাল থানার মৌসুনী গ্রাম পঞ্চায়েতের কুসুমতলা এলাকায়। দেহ উদ্ধার করতে গেলে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার সকালে। মৃত গৃহবধূর নাম প্রতিমা মণ্ডল। বয়স ২৩ বছর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাত বছর আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টাল থানার মৌসুনী গ্রাম পঞ্চায়েতের কুসুমতলার বাসিন্দা প্রতিমার সঙ্গে ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকারই বাগডাঙ্গার বাসিন্দা অরুন মণ্ডলের দেখাশোনা করেই বিয়ে হয়। তাঁদের চার বছরের সন্তানও রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বুধবার স্বামী প্রতিমাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। সন্ধ্যা নাগাদ প্রতিমা মৌসনীর কুসুমতলাতে বাপির বাড়িতে চলে আসেন। এরপর বেশ কয়েকবার সেখানে আসেন প্রতিমার স্বামী। সন্তানকে জোর করে নিয়ে চলে যান। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মারধরের অভিযোগে এর আগে বেশ কয়েকবার সালিসি সভা করা হয়।
বুধবার সন্ধ্যায় বেশ কয়েকবার প্রতিমাকে শারীরিক অত্যাচার করেন তাঁর স্বামী এবং বাপের বাড়ির লোকেদের হুমকি দিয়ে যান। ঘটনার দিন বাড়িতে প্রতিমার বোন বিজলী দাস ও ভাই শুভজিৎ দাস ছিলেন। প্রতিমার বাবা বর্তমানে ভিনরাজ্যে কাজের জন্য রয়েছেন। রবিবার প্রতিমার মায়ের অপারেশন হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন প্রতিমার মা। স্থানীয়দের দাবি, প্রতিমার বাপের বাড়িতে তাঁর বাবা-মা ছিলেন না।
সেই সুযোগেই বাড়িতে গিয়ে ওই গৃহবধূর ওপর অমানবিক শারীরিক অত্যাচার চালিয়েছে। এদিন সকালে গৃহবধূর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় তাঁর বাপের বাড়ি থেকে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টাল থানার পুলিশ। পুলিশ ওই গৃহবধূর মৃতদেহ উদ্ধার করতে গেলে তাঁর স্বামীর গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা।
এই ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কুসুমতলা এলাকা। পুলিশ অভিযুক্ত অরুণ মণ্ডলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। দীর্ঘ প্রায় চার ঘণ্টা পর পুলিশের আশ্বাসে বিক্ষোভ তুলে নেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তাঁরা অভিযুক্তের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তির দাবি করেছেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন নামখানা শ্রমজীবী মহিলা সমিতির সদস্যারা।
তাঁদের পক্ষ থেকেও অভিযুক্তের শাস্তির দাবি করা হয়েছে। মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, অভিযুক্ত যদি লঘু শাস্তি পায়, তাহলে আগামীতে এই অপরাধ বেড়েই যাবে সমাজে। প্রতিমার বাপির বাড়ির লোকজন ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টাল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। লিখিত অভিযোগ পেয়ে পুলিশ মৃতার স্বামী অরুণ মণ্ডলকি গ্রেপ্তার করেছে।
ধৃতকে শুক্রবার কাকদ্বীপ আদালতে তোলা হবে। ধৃতকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। মৃতদেহটিকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
