Sunday, May 5, 2024
spot_img
Homeরাজ্যফের বাজি বিস্ফোরণে মৃত্যুমিছিল, মৃতদেহ গিয়ে পড়লো পাশের বাড়ির চিলেকোঠায়

ফের বাজি বিস্ফোরণে মৃত্যুমিছিল, মৃতদেহ গিয়ে পড়লো পাশের বাড়ির চিলেকোঠায়

স্টাফ রিপোর্টার : রাজ্যে ফের বেআইনি বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ গেল কমপক্ষে ৬-৭ জনের৷ পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার পর এবার ঘটনাস্থল উত্তর ২৪ পরগণার দত্তপুকুরের নীলগঞ্জ৷ জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে আচমকাই বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে বারাসত লাগোয়া দত্তপুকুর থানার নীলগঞ্জ ফাঁড়ির নীলগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মোষপোল পশ্চিমপাড়া অঞ্চল। প্রায় ধূলিসাৎ হয়ে যায় একটি দোতলা বাড়ি। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল আশেপাশের বাড়িগুলিও কেঁপে ওঠে। ক্ষতিগ্রস্তও হয়।স্থানীয়দের দাবি, সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে বাজি কারখানাটি চলছিল।কেরামত এবং সামসুল দু’জনে মিলে বেআইনিভাবে বাজি তৈরি করত। ওই বাজি দোতলা বাড়িতে মজুত করে রাখা হত। তা ফেটেই এমন বীভৎস ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় বাজি কারখানা চললেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলেই অভিযোগ। পরিবর্তে পুলিশ এখান থেকে তোলাবাজি করত বলেও দাবি স্থানীয়দের।তবে বিস্ফোরণে ঠিক কতজনের প্রাণ গিয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি। বিস্ফোরণের পর বিস্ফোরণস্থলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে বহু দেহাংশ। বিস্ফোরণের অভিঘাত এতটাই ছিল যে, একটি মৃতদেহ পাশের দোতলা বাড়ির চিলেকোঠায় উঠে গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে৷ বিস্ফোরণস্থল থেকে কয়েক মিটার দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিন্নভিন্ন রক্তাক্ত দেহ৷ উদ্ধার হয়েছে ছিন্নভিন্ন হাত-পা, দেহাংশ৷স্থানীয়রা মনে করছেন কমপক্ষে ৬-৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন অনেকেই। তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে দমকল। আগুন নেভানোর কাজ চলতে থাকে। আসে পুলিশও। যদিও পুলিশকে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়।স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, আজ এত পুলিশ নিয়ে এসে কী লাভ হবে? আগে ব্যবস্থা নিলে তো আজকের দিনটা দেখতে হত না। তাঁদের দাবি, ওই কারখানায় বেআইনিভাবে বাজি তৈরি করা হত। তৈরি হত বোমাও। তা নিয়ে পুলিশ এবং প্রশাসনের কাছে বারবার অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। হাত-পা গুটিয়ে বসে থেকেছে পুলিশ-প্রশাসন। এক স্থানীয় বাসিন্দার দাবি, বেআইনি বাজি কারখানার লোকজনের থেকে টাকা পেতেন পুলিশকর্মীরা। হাত ছিল তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদেরও। এমনকী রাজ্যের এক মন্ত্রীও টাকা পেতেন বলে অভিযোগ তুলেছেন।এরপর বারাসত পুলিশ জেলার সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে যান। পুলিশের তরফে দুপুর ১টা পর্যন্ত চার জনের মৃতের খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। যদিও মৃতের সংখ্যা আরও বেশি বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা। পুলিশ সুপার ভাস্কর বলেন, ‘‘এখনই সব কিছু বলা সম্ভব নয়। পুলিশ তৎপরতার সঙ্গে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’ ঘটনাস্থলে যান সিআইডি-র বম্ব স্কোয়াডও৷এর আগে মে মাসে এগরার খাদিকুলে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছিল। মৃত্যু হয়েছিল কম পক্ষে নয় জনের। সেই ঘটনার সাড়ে তিন মাস কাটতে না কাটতেই আবারও বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল বাংলা। এ বারও কাঠগড়ায় সেই বেআইনি বাজি কারখানা। এর ফলে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠছে। প্রশাসন একাধিকবার সতর্ক করার পরও যে টনক নড়ছে না তা আরও একবার আঙুল দিয়ে দেখাল মোছপোল।এদিকে এই বিস্ফোরণ নিয়ে একে ওপরের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছে রাজনৈতিক নেতারা। বারাসতের বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পর থেকেই খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের দিকে আঙুল তুলেছেন এলাকাবাসী।এলাকাবাসীর দাবি, রাজ্যের মন্ত্রী সবটাই জানতেন।যদিও সেই দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে মন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি কিছুই জানতেন না।তিনি বলেছেন, “জানতে পেরেছি এই কাজের সঙ্গে আইএসএফ-এর একটি ছেলে যুক্ত। ওর নাম রমজান। সে এই বাজির কারখানা চালায়। উল্টোদিকে খুদে বলে একটি এলাকার লোক আছে। যার বাড়িতে বিভিন্ন শ্রমিকরা আসেন। ওরা ওই বাড়িতে বসে খাওয়া-দাওয়া করছিল। সেই সময় ব্লাস্ট হয়। এখনও পর্যন্ত সনাক্ত করা যায়নি।এই বিস্ফোরণের পিছনে আইএসএফ থাকতে পারে।” এছাড়াও এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “কারা কোথায় অভিযোগ জানিয়েছেন আমি জানি না। আমি কোনও অভিযোগ পাইনি। কারণ নীলগঞ্জের নারায়ণপুর বলে একটি জায়গা আছে। যেখানে বাজি তৈরি হত। সেখানে প্রশাসনিক স্তরে পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে। এটা জানতাম না।” এদিকে মন্ত্রীর দাবির পাল্টা দিয়েছেন ভাঙড়ের বিধায়ক তথা আইএসএফ নেতা নওশাদ সিদ্দিকি। আইএসএফ বিধায়কের কথায়, “মুর্শিদাবাদের লোকজনকে নিয়ে এই কাজ করানো হত। এই ঘটনায় আমাদের বুথ সভাপতির মা মারা গিয়েছেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতা যে এর সঙ্গে যুক্ত সে পলাতক। মালিককে খুঁজে বের করলেই সবটা জানা যাবে। এছাড়াও, কারামত আলি, আজিবর আলি এদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সত্য উদঘাটন হবে। তৃণমূল এখন বিরোধীদের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে খালাস হতে চাইছে।” এই ঘটনার পর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, ”এগরায় অত বড় বিস্ফোরণের পর মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধে ব্যবস্থা নেবেন। লম্বা-চওড়া কথা বলেছিলেন। কিন্তু কোথায় কী? উনি ব্যস্ত চোরেদের বাঁচাতে। আর এদিকে যা হওয়ার তাই। গোটা রাজ্যটাই তো বেআইনি।বাজি ক্লাস্টার তৈরির নামে প্রকাশ্যে নাটক করেছে সরকার, তাই নীলগঞ্জের বিস্ফোরণে মরতে হল মানুষকে।”এমনকী এই বেআইনি বাজি কারখানাগুলির পিছনে তৃণমূল নেতারা রয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।সুকান্ত মজুমদারের দাবি, ”ওসব জায়গা থেকে তো তৃণমূল নেতারা তোলা আদায় করে। যতদিন এখানে তৃণমূলের সরকার থাকবে, ততদিন এসব হবে। মুখ্যমন্ত্রী চাইছেনটা কী? গোটা রাজ্য শ্মশানে পরিণত হোক?” বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য এনআইএ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।এদিকে, এদিন উত্তরবঙ্গে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। তাঁকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি জানান যে ঘটনা সবিস্তারে জানার পর এ বিষয়ে মন্তব্য করবেন। তবে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। তদন্ত চলবে।প্রশাসনকে তৎপর করতে যা যা করার আমি করব।

Most Popular