স্টাফ রিপোর্টার: নদী ভাঙন নিয়ে রাজ্য-কেন্দ্র তরজা অব্যহত।মুর্শিদাবাদে গঙ্গা ভাঙন রুখতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার সকালে মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জে এলাকায় গঙ্গা ভাঙন পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পর শমসেরগঞ্জের সভায় গিয়ে গঙ্গা ভাঙন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান মমতা। কেন্দ্র ভাঙন নিয়ন্ত্রণে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলেও এদিন মন্তব্য করেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ফরাক্কা ব্যারেজ সংক্রান্ত সমস্যা আজকের নয়।
আমরা একাধিকবার কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলেছি। ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। এটা দিল্লির সাবজেক্ট। আমাদের নয়। তা সত্ত্বেও আমরা অনেকবার কথা বলেছি। কিন্তু ওরা আমাদের কোনও সাহায্য তো করেইনি। উল্টে ইন্দো ফরাক্কা বাংলাদেশ জলচুক্তি যখন হয়, ৭০০ কোটি টাকা রাজ্যের পাওয়ার কথা ছিল, এলাকাবাসীর উন্নয়নের জন্য, এক পয়সা আজ পর্যন্ত দেয়নি। হয়ত ২০ বছরের বেশি হয়ে গিয়েছে।গঙ্গা ভাঙন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের প্রকল্প। তা সত্ত্বেও কোনও সাহায্য করে না। শুধু রাজনীতি, অশান্তি নিয়ে মাথা ঘামায়।”
কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে সরব হওয়ার পরই গঙ্গা ভাঙন রোধে ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।মমতা বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার ৫০ কোটি টাকা ঘোষণা করেছিলাম। আজ (শুক্রবার) ১০০ কোটি টাকা ঘোষণা করলাম। ভাঙনের পার সারানো যাবে। যাঁরা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, তাঁদের পাট্টা দেওয়া হবে। একটু দূরে জায়গা নেবেন। যাঁরা এমন জায়গায় রয়েছেন, যা একেবারে জলের তলায় প্রায়। তাঁদের সরে যেতে হবে।’’
সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এবং সেচ সচিবের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, ‘‘এই কাজটা ভাল করে করতে হবে। এই বছরই তোমরা যদি ১০০ কোটি টাকার কাজ করতে পারো, তা হলে পরের বছর আমি দেখে নেব আরও।’’ এদিন মুর্শিদাবাদের বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের তীব্র কটাক্ষ করেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “মুর্শিদাবাদ বড় নেতার জন্ম দিলেও এখানে একটা কাজও হয়নি, কাজ করতে হয়েছে, সেই তৃণমূল সরকারকেই।” প্রবীণ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর নাম না করে শুক্রবার মমতা আরও বলেন, “আমাদের আগামীতেও কোনও ত্রুটি থাকবে না।
দীর্ঘদিন ধরে মুর্শিদাবাদে অনেক রাজনৈতিক নেতা বড় বড় কথা বলেছেন। কিন্তু একটাও কাজ করেননি।”অন্যদিকে প্রদেশ কংগ্রস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “যখন ভাঙনে সেখানকার মানুষ ত্রাহি ত্রাহি করছে, হাজার ঘর ভেঙে জলে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তখন আপনি কোথায় ছিলেন? আমি কেন্দ্রের জলসম্পদ দফতর, রাজ্যের সেচ দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে কলকাতায়, বহরমপুরে, দিল্লিতে বৈঠক করেছি। টাকা পাওয়া যাবে কি যাবে না সেটা পরের কথা। আগে স্কিমটা পাঠান দিল্লিতে। আজও যায়নি বলে দিল্লির বক্তব্য।”
এছাড়াও এদিন মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের সভায় বিজেপিকে আক্রমণ করার সময়ই বিরোধী ঐক্য গড়ার বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘সব বিরোধী দল এক হয়ে যান। ওয়ান টু ওয়ান ফাইট হোক। চেষ্টা করব একসঙ্গে কাজ করার।যে যেখানে শক্তিশালী, সে সেখানে লড়ুক।’’ এর আগে, রাজ্যে তৃতীয় বার সরকারে আসার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সব বিজেপি-বিরোধী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে তার পর গঙ্গা-যমুনা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। যার জেরে বিরোধী ঐক্যের ছবি অধরাই থেকে গিয়েছে। বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে বিজেপির বিজয়রথ ঠেকাতে দেশের সব বিজেপি বিরোধী দলকে এক সুতোয় বাঁধার আহ্বান ফের জানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।