স্টাফ রিপোর্টার: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ল্যান্ডফল হতে চলেছে মঙ্গলবার ভোরে। তবে তা পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে নয়, বাংলাদেশ উপকূলে।হাওয়া অফিস জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর থেকে নিম্নচাপ ক্রমশ উত্তর পশ্চিম দিকে এগিয়েছে। আপাতত তার গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার। আরও উত্তর পশ্চিমে এগিয়ে এই নিম্নচাপ আজ সকালের মধ্যে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে চলেছে। তার পর সাগরেই দিক পরিবর্তন হতে পারে নিম্নচাপের।
উত্তর পূর্ব অভিমুখে এগোতে এগোতে সোমবার সকালের মধ্যে মধ্য বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ পরিণত হবে ঘূর্ণিঝড়ে।ঘূর্ণিঝড় সিত্রং এরপর ক্রমশ উত্তর ও উত্তর পূর্বে এগিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। মঙ্গলবার সকালে তা তিনকোনা দ্বীপ এবং সন্দ্বীপের কাছে বাংলাদেশ উপকূলে আছড়ে পড়বে।আবহাওয়া দফতরের তরফে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সতর্কতা জানিয়ে বলা হয়েছে, আজ উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল এলাকায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। যে কারণে কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এদিন কলকাতা, হাওড়া, হুগলি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের কোনও কোনও জায়গায় মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে।সোমবার উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সঙ্গে নদিয়া জেলাতের কোনও কোনও জায়গায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে।মঙ্গলবার দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির সঙ্গে আবহাওয়া দফতরের তরফে ঝোড়ো হাওয়ার সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, সোমবার উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে দমকা হাওয়ার বেগ সর্বোচ্চ হতে পারে ঘন্টায় ৬৫ কিমি। এছাড়া কলকাতা, হাওড়া, হুগলি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে ঘন্টায় সর্বাচ্চ ৪০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।অন্যদিকে মঙ্গলবার উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দমকা হাওয়ার সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘন্টায় ১০০ কিমি। পূর্ব মেদিনীপুরে তা হতে পারে সর্বাচ্চ ঘন্টায় ৮০ কিমি।
এছাড়া কলকাতা, হাওড়া, হুগলি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের এই ধোড়ো হাওয়ার সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘন্টায় ৬০ কিমি।সতর্কবার্তা হিসেবে মৎস্যজীবীদের জন্য রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস হতে পারে সোম ও মঙ্গলবার সেই কারণে দুই চব্বিশ পরগণায় বাঁধের ক্ষতি হতে পারে।সমুদ্র তীরবর্তী সমস্ত বিনোদনমূলক রাইড বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুই ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরের সমস্ত ফেরি চলাচল শ্রম ও মঙ্গলবার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।ঘূর্ণিঝড় সিত্রং নিয়ে আগাম সতর্ক হতে চাইছে কলকাতা পুরসভা। এ ক্ষেত্রে আমপানের সময়কার ভুলগুলি থেকে শিক্ষা নিয়ে এগোতে চায় পুরসভা। শনিবার এমনই জানিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।আমপানের সময় শহরের রাস্তায় বড় গাছ পড়ে গিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছিল।
শহরের অনেক জায়গাতেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কোনও কোনও জায়গায় ভেঙে পড়া গাছ সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতেই দু-তিন দিন সময় লেগে যায়। ঘূর্ণিঝড়ে গাছ পড়ার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক বৈদ্যুতিন কুঠারের বন্দোবস্ত করেছে পুরসভা। গাছ কাটায় পারদর্শী কর্মীদের মোতায়েন রাখার কথা বলা হয়েছে।
আজ থেকে সাইক্লোন পরিস্থিতি মোকাবিলার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের ছুটি বাতিল করেছে নবান্ন। যাঁরা যাঁরা ছুটিতে রয়েছেন, ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সচিবরা সাইক্লোন মোকাবিলায় নজরদারি করবেন বলেই নবান্নের তরফে জারি করা হয়েছে নির্দেশিকা।
পাশাপাশি ইন্টিগ্রেটেড কন্ট্রোল রুমের সঙ্গেও তাঁরা যোগাযোগ রাখবেন ২৪ অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত, মুখ্যসচিব তেমনটাই নির্দেশিকা জারি করেছেন।পাশাপাশি, আসন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় জোর কদমে প্রস্তুতি শুরু করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। সাগর, ফ্রেজারঞ্জ, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, ক্যানিং, গোসাবা ও বাসন্তী জুড়ে মাইকিং করা হচ্ছে।