বৃহস্পতিবার বীরভূমের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় এবং বর্ধমান পূর্বের শর্মিলা সরকারের সমর্থনে জোড়া সভা করার কথা ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রথমটি হওয়ার কথা ছিল রামপুরহাটের বিনোদপুর মাঠে। দ্বিতীয় সভাস্থল ছিল কালনার বৈদ্যপুর রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠ মাঠ। কিন্তু এদিন দুপুর ১২টা থেকেই প্রবল ঝড়বৃষ্টি শুরু হয় এবং টানা বজ্রপাত, বৃষ্টি চলতে।
সেই দুর্যোগের মাঝে পড়ে অভিষেকের চপার অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও সভাস্থলের কাছে তৈরি হেলিপ্যাডে নামতে পারেনি। ফলে প্রকাশ্য জনসভার বদলে ভারচুয়ালি দলীয় প্র্রার্থীদের হয়ে ভোটপ্রচার করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।আর এই ভার্চুয়ালি প্রচার থেকে একের পর এক বিজেপিকে নিশানা করে তুমুল কটাক্ষ ছুড়ে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
সন্দেশখালি প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক বলেন, “সন্দেশখালির বেলুনে আলপিন ফুটে গেছে৷ কলুষিত করার চক্রান্ত সামনে চলে এসেছে৷ গঙ্গাধর কয়াল বলছেন নির্যাতন, ধর্ষণ হয়নি। কয়েকটা ভোটের জন্য বিজেপি দেশের কাছে বাংলাকে অসম্মান করেছে৷ রেখা পাত্রর একটা ভিডিও এসেছে সামনে। তিনি বলছেন, যে বিজেপি যাদের রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে গিয়েছে তারা আসল নয়।”
তিনি বলেন, “যাঁরা বাংলাকে কালিমালিপ্ত করতে চেয়েছিল তাঁদের স্বরূপ সামনে চলে এসেছে। আমি নবজোয়ারে থাকার সময়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি৷ আমি রামপুরহাট লোকসভায় আগে মিটিং করেছি। যারা বাংলাকে পরিকল্পিতভাবে মান সম্মান, মর্যাদা ছিনিয়ে কলুষিত করতে চেয়েছিল তাদের চেহারা সামনে চলে এসেছে।”
নাম না করে শুভেন্দুকে খোঁচা দিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘সন্দেশখালির ঘটনা সামনে আসার পর যেখানে পথসভা করে মায়েরা গর্জে উঠেছিলেন যে, সন্দেশখালির অপমান মানব না, সেই রাস্তায় বুধবার বিজেপির এক নেতা যে শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন, আপনারা দেখেছেন। যাঁরা নারী ক্ষমতায়ন নিয়ে যাঁরা কথা বলেন, তাঁদের দেখুন।’’
একইসঙ্গে এসএসসি দুর্নীতি মামলার প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক বলেন, “এসএসসি নিয়ে বলেছিল এমন বোম ফেলব যে তৃণমূল বেসামাল হয়ে যাবে৷ চাকরি খাওয়ার চক্রান্তে সুপ্রিম কোর্ট আলপিন ফুটিয়ে দিয়েছে৷ এদের বাড়া ভাতে কার্যত ছাই দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। হাইকোর্টের আদেশের ওপর সম্পূর্ণ স্থগিতাদেশ দিয়েছে দেশের সুপ্রিম কোর্ট।
আমরা এখনও মনে করি দেশের বিচার ব্যবস্থা কিছু মেরুদণ্ড সোজা রাখা ব্যক্তির জন্য বেঁচে আছে।” অভিষেক বলেন, ‘‘যাঁরা বাংলাকে অপমান করছেন, তাঁদের ভোট নয়। দেশের প্রধানমন্ত্রী সভা করে বলছে, যাঁরা মাছ খায়, তাঁরা দেশবিরোধী। আপনারা হাত তুলুন যাঁরা মাছ খান। দেখতে চাই, কত জন দেশবিরোধী? আপনাদের এ রকম আখ্যা দিচ্ছে। আপনারা কি এক মত?
যাঁরা বঙ্গবাসীর অপমান করেন, তাঁদের কি ভোট দেবেন? তাঁদের কি উচিত শিক্ষা দেবেন? যাঁরা টাকা আটকে রেখেছে যাঁরা, তাঁদের উচিত শিক্ষা দেবেন কি না! বাংলার মায়েদের সম্ভ্রম যাঁরা বিক্রি করেছেন ২০০০ টাকায়, তাঁদের উচিত শিক্ষা দেবেন কি না! ’’ অভিষেক আরও বলেন, ‘‘বিজেপির নেতারা অশালীন শব্দবন্ধ ব্যবহার করছেন।
তিন মাস ধরে মমতাকে অপমান করতে গিয়ে বাংলার মানুষকে অপমান করেছে। রবীন্দ্রনাথের কর্মভূমি বীরভূম জেলায়, শান্তিনিকেতনে কবিগুরুর ফলক থেকে তাঁর নাম মুছেছে জনবিরোধী মোদী সরকার। বদলে নাম রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। সে কারণে এরা বাংলা বিরোধী। এরা রবীন্দ্রনাথ, স্বামী বিবেকানন্দকে অপমান করেছেন।’’ অভিষেকের বীরভুমবাসীর কাছে আবেদন,
“আগামী ১৩ তারিখের ভোটে কেন্দ্রে উন্নয়ন মূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত করবেন৷ তৃণমূলের হাত শক্তিশালী করা মানে, ইন্ডিয়া জোটের হাত শক্তিশালী করা। কয়েকটা ভোটের জন্য নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করেছে৷ সন্দেশখালি পরিকল্পিত করে করা হয়েছে৷ এর জবাব দিতে হবে। বিজেপিকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে৷
রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজেও ভোটের লাইনে দাঁড়াতে হবে৷ রামপুরহাট বিধানসভা থেকে এবার যেন এই লোকসভার মধ্যে সবথেকে বেশি ভোট আসে তৃণমূলের ভোটবাক্সে৷ বিধায়ক আশিষদা আছেন, পুরসভার চেয়ারম্যান আছেন, তাঁদের বলছি, এবার সবথেকে বেশি ভোট পেতে হবে।”