Wednesday, May 15, 2024
spot_img
Homeদেশ৭ দফায় ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু লোকসভা নির্বাচন

৭ দফায় ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু লোকসভা নির্বাচন

দেশের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন। এ বছর দেশের সাধারণ নির্বাচন হবে ৭ দফায়। নির্বাচন শুরু ১৯ এপ্রিল।১ জুন হবে সপ্তম দফার ভোটগ্রহণ। ভোটগণনা ৪ জুন। শনিবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করেন কমিশনের ফুল বেঞ্চ। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার এদিন জানিয়েছেন, সাত দফার ভোট হবে যথাক্রমে ১৯ এপ্রিল, ২৬ এপ্রিল, ৭ মে, ১৩ মে, ২০ মে, ২৫ মে এবং ১ জুন।প্রথম দফায় (১৯ এপ্রিল) ভোট হবে — পশ্চিমবঙ্গ, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ছত্তীসগঢ়, তামিলনাড়ু, পুদুচেরি, লক্ষদ্বীপ, আন্দামান নিকোবার, বিহার, সিকিম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অসম, অরুণাচলপ্রদেশে।দ্বিতীয় দফা (২৬ এপ্রিল)— কেরল, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, জম্মু ও কাশ্মীর, অসম, মণিপুর, ত্রিপুরায়।তৃতীয় দফায় (৭ মে ) ভোট হবে — জম্মু ও কাশ্মীর, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ছত্তীসগঢ়, গোয়া, দাদরা-নগর হভেলী ও দমন-দিউতে।চতুর্থ দফায় (১৩ মে) ভোট হবে— মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ডে।পঞ্চম দফায় (২০ মে) ভোট হবে— লাদাখ, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্রে।ষষ্ঠ দফায় (২৫ মে) ভোট হবে— দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশায়।সপ্তম দফায় (১ জুন) ভোট হবে— হিমাচল প্রদেশ, পঞ্জাব, চণ্ডীগড়, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশায়।পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফায় (১৯ এপ্রিল) ভোট হবে— কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতে।দ্বিতীয় দফায় (২৬ এপ্রিল) ভোট হবে— রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, দার্জিলিং-এ।তৃতীয় দফায় (৭ মে) ভোট হবে— মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুরে।চতুর্থ দফায় (১৩ মে) ভোট হবে— বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বোলপুর, বীরভূম, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোলে।পঞ্চম দফায় (২০ মে) ভোট হবে— শ্রীরামপুর, ব্যারাকপুর, হুগলি, বনগাঁ, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, আরামবাগে।ষষ্ঠ দফায় (২৫ মে) ভোট হবে— পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, কাঁথি, তমলুক, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, বিষ্ণুপুরে।সপ্তম দফায় (১ জুন) ভোট হবে— উত্তর কলকাতা, দক্ষিণ কলকাতা, যাদবপুর, জয়নগর, বসিরহাট, বারাসত, মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবার, দমদমে।ভোটের দিনগুলিতে কোথায় কত দফা বাহিনী থাকবে, সে বিষয় এখনও স্পষ্ট করেনি কমিশন। সূত্রের খবর, সামনের সপ্তাহে ফের রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে। সোমবার বেলা ১২.৩০ নাগাদ রাজ্যের সমস্ত জেলাশাসক, রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনায় বসবেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব। সেখানেই ঠিক হতে পারে রাজ্যের ৭ দফায় ভোটের বাহিনী বিন্যাস।কেন এবার ৭ দফায় নির্বাচন করা হচ্ছে এবং ৩ রাজ্যে কেন ৭ দফায় নির্বাচন করা হবে, তার কারণও জানান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার।এ দিন জাতীয় নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, “দেশের ভৌগলিক চিত্র দেখুন। নদী থেকে পাহাড়, মরুভূমি। নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত নিরাপত্তা বাহিনীর কথা ভাবুন। তাদের উপরে কী চাপ দেখুন। ২-৩ দিনের সময়ের মধ্যে তাদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হবে। এর মাঝে হোলি থেকে শুরু করে রাম নবমী-হাজারো উৎসব রয়েছে। তার মাঝে নির্বাচনের দিনক্ষণ স্থির করতে হয়।” একাধিক দফায় নির্বাচন নিয়ে বিরোধীদের যে অভিযোগ রয়েছে, তার জবাব দিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, “কারোর সুবিধার জন্য বিভিন্ন দফায় ভেঙে নির্বাচন করানো হয় না। এই ভুল ধারণা রাখবেন না। প্রত্যেকটি রাজ্য আলাদা। কোনও রাজ্যে এক দফায় নির্বাচন হচ্ছে, কোনও রাজ্যে সাত দফায় নির্বাচন হচ্ছে। যে রাজ্যগুলিতে সাত দফায় নির্বাচন হচ্ছে, সেখানে লোকসভা আসন সংখ্যা বেশি, কেন্দ্র বেশি।” এ দিন লোকসভার দিন ঘোষণার পর ইভিএম নিয়ে প্রশ্নে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, “হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট ৪০ বার ইভিএম নিয়ে মামলা দেখেছে। ইভিএম চুরি হয়ে যায়, ইভিএম খারাপ হয়ে যায়, ভোট কারচুপি করা হয়, ১৯ লক্ষ ইভিএম নিখোঁজ। ইভিএম নিয়ে কখনও বলা হয়েছে রিগিং হয় না, কখনও বলা হয়েছে একটির বদলে ৫টি ভিভিপ্যাড গণনা করুন। আমরা সব করেছি। এখন জরিমানাও করা হচ্ছে। দিল্লি কোর্ট ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। সুপ্রিম কোর্ট ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।” তিনি বলেন, “ইভিএম কখনও হ্যাক হওয়া সম্ভব নয়। বারবার এটা প্রমাণ হয়েছে। যে কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় ইভিএম নিয়ে বসে যায়, এদের অনেকে তো এক্সপার্টও হয়ে গিয়েছেন। কীসের এক্সপার্ট জানি না। ওনারা একটা বাক্স নিয়ে বসেন, একটা বোতাম টিপলে নাকি অন্য স্লিপ বের হচ্ছে। আপনারা যতবার প্রশ্ন করবেন, আমরা উত্তর দেব। ইভিএমের কারণেই অনেক রাজনৈতিক দল অস্তিত লাভ করেছে। সব ইভিএমের তিনবার মক পোল হয়। প্রার্থীদের সামনেই মক পোল হয়। আমাদের ওয়েবসাইটে ইভিএম নিয়ে ঘনঘন করা প্রশ্ন ও তার উত্তর রয়েছে। দয়া করে সেটা অন্তত করুন।” মুখ্য নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, “আমি আপনাদের আশ্বস্ত করে বলছি, ইভিএম ১০০ শতাংশ সুরক্ষিত। বিগত ২ বছরে আমরা অনেক উন্নতি করেছি। প্রত্যেকটি ইভিএমের নম্বর কোন বুথে যাচ্ছে, তা প্রার্থীদের দেওয়া হবে।” ভোটারদের প্রভাবিত করতে কোথাও কোনও টাকা-পয়সা বিলির ঘটনা ঘটলে, বা কোনও উপহার দেওয়ার ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।এমনটাই জানান কমিশনার।কমিশনার রাজীব কুমার জানান, যদি কোনও নাগরিক কোনও অভিযোগ জানাতে চান, তাহলে সি-ভিজিল অ্যাপের মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের অভিযোগ জানাতে পারবেন। ভোটারদের প্রভাবিত করতে কোথাও কোনও টাকা-পয়সা বিলি বা অন্য কিছু বিলির কোনও ঘটনা দেখতে পেলে, নাগরিকদের সঙ্গে সঙ্গে একটি ছবি তুলে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে কমিশন থেকে জানানো হয়েছে, ১৯৫০ -এই নম্বরে অভিযোগ জানালে সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ করা হবে। অভিযোগ পাওয়ার ১০০ মিনিটের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, অভিযোগ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে যিনি অভিযোগ পাঠাচ্ছেন, তাঁর মোবাইলের লোকেশন পেয়ে যাবে কমিশন। অভিযোগকারী কোথায় রয়েছেন, তা সেই লোকেশন দেখে বুঝে যাবেন কমিশনের অফিসাররা। সেই মতো সঙ্গে সঙ্গে লোক পাঠিয়ে ১০০ মিনিটের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার।উল্লেখ্য, অতীতে নগদ টাকা থেকে শুরু করে মদ, প্রেশার কুকার, শাড়ি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের জিনিস বিলি করে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠে এসেছে। এসব ঘটনার বন্ধ করতে এবার কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করছে কমিশন।এছাড়াও এদিন জাতীয় নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানান, কোনও দল যদি অপরাধের ইতিহাস থাকা কাউকে প্রার্থী করে, তবে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাতে হবে। পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক বা স্বেচ্ছাসেবী কোনও কর্মীকে নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে না।তারকা প্রচারকদের নির্বাচন কমিশনের গাইডলাইন দিতে হবে। তারকা প্রচারক বা বড় বড় প্রার্থীদের সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের তরফে নির্বাচন কমিশনের গাইডলাইনের নোটিস দিতে হবে। তারা নির্বাচনী প্রচারে যেন ঘৃণামূলক মন্তব্য না করেন এবং বিপক্ষ প্রার্থীদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আক্রমণ না করেন, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়।একইসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকেও নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কোনও দলের তরফে যদি সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া হলে, তা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে হবে।এদিন কমিশনার স্পষ্ট করে দিলেন সুষ্ঠভোটের জন্য ভুয়ো খবরের সঙ্গেও লড়বে কমিশন। ভুয়ো খবর প্রচারে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।নির্বাচনের প্রচারে কোনওভাবে শিশুদের ব্যবহার করা যাবে না। কড়া নির্দেশ কমিশনের। এর পাশাপাশি আর্থিক লেনদেনের যাবতীয় ডিজিটাল রেকর্ডও থাকবে কমিশনের কাছে।রাজীব কুমার এদিন জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে দেশে প্রায় ৯৬.৮০ কোটি ভোটার রয়েছেন। নতুন ভোটার প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ। যুব ভোটারের (২০-২৯ বছর বয়সি) সংখ্যা ১৯.৭৪ কোটি। এবার ৮৫ বছরের বেশি বয়সি ভোটারের সংখ্যা ৮২ লক্ষ। মোট পুরুষ ভোটার ৪৯.৭০ কোটি। এ বছর মহিলা ভোটার ৪৭.১০ কোটি। তৃতীয় লিঙ্গ বা ট্রান্সজেন্ডার ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৪৮ হাজার। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১০ লক্ষ। এ বছর নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে ৫৫ লক্ষ।

Most Popular