রাজকুমার সূত্রধর কলকাতা
রহস্যজনক ভাবে খুন হয়েছে ঠাকুমা ও নাতি। একটি ঘরের ভিতর তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে মাথায় ভারি কিছু দিয়ে মারা হয়েছে। এই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। ঘটনাটি কলকাতা লাগোয়া দক্ষিণ পশ্চিম শহরতলি
মহেশতলার সরকারপোলের কাছে। পুলিস শুক্রবার ওইখানে একটি দোতলা বাড়ির নীচতলার ঘর থেকে ঠাকুমা মায়া মন্ডল (৫৫) ও সাত বছরের নাতি সনু মন্ডলের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে।
দুজনকে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান পুলিসের। ঘরের মেঝেতে সামান্য তফাতে পড়েছিল ঠাকুমা ও নাতি। তাদের গলায় ধারালো অস্ত্রের ও মাথায় ভারি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এমন নৃশংস ভাবে দুজনকে মারা হয়েছে, যে গোটা ঘরময় রক্তের ধারা ছড়িয়ে রয়েছে। শুধু তাই নয় রক্তের ভিতর দুটি দেহ পড়েছিল। তাতে সাত বছরের সনুর সাদা গেঞ্জি লাল রঙে র হয়ে যায়। ঘটনার খবর পেয়ে জিনজিরা বাজার ফাঁড়ির পুলিস যায়। দুজনের দেহ তুলে বেহালার বিদ্যাসাগর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সেখানে মৃত বলে ঘোষণা করে ন চিকিৎসক। রাতে ঘটনাস্হলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিএসপি নিরুপম ঘোষ যান। প্রাথমিক ভাবে পুলিস কর্তাদের ধারণা, খুনের ঘটনাটি দুপুরের পর হয়েছে। কারণ রক্তের ধারা একেবারে টাটকা ছিল। জমে যায়নি। খুনের পিছনে একজন নয়, একাধিক ব্যক্তি জড়িত বলে তদন্তকারীদের ধারণা। পুলিস এও মনে করছে, খুনীরা ওই বাড়ির পরিচিতদের ভিতর কেউ হতে পারে।
কারণ যে কৌশলে দুজনকে মারা হয়েছে তাতে ঘরে ঢোকার পর কিছু সময় গৃৃহকর্তীর সঙ্গে কথা বলার পর এই অপারেশন হয়েছে। যদিও রাত পর্যন্ত খুনের কারণ ও কারা এর পিছনে তা বের করতে পারেনি পুলিস। তবে ওই বাড়ির কাছাকাছি সিসিটিভি আছে কি না তা খতিয়ে দেখে এর সূত্র পাওয়ার চেষ্টা করছে তদন্তকারীরা। ওই বাড়ির গৃহশিক্ষক ও মৃতা মায়া মন্ডলের ছেলে শেখরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিস।
মহেশতলা পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারপোল জনবহুল ও ব্যস্ততম এলাকা। তারাতলা থেকে এর দূরত্ব খুব বেশি নয়। সরকারপোলে র বাসিন্দা হলেন তারক মন্ডল। তাঁর স্ত্রী মায়া মন্ডল। তাদের একমাত্র ছেলে শেখর। এক সময় তারকবাবুর সচ্ছল অবস্হা ছিল। সেই সময় তিনি এখানে জমি কিনে এই দোতলা বাড়ি করেন। তাঁর ছেলে শেখর বিয়ে করেন সাত থেকে আট বছরের বেশি আগে। তাদের ছেলে সনু।
এর ভিতর গৃহকর্তা তারকবাবু শারিরীক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার জেরে এখন তিনি আর একেবারে চলাফেরা করতে পারেন না। বিছানা তে শয্যাশায়ী। সেই কারণে তাঁকে দোতলায় রাখা হয়েছে। নীচতলার ঘরে তাঁর স্ত্রী ও নাতি থাকে। দু বছর আগে শেখরের সঙ্গে তার স্ত্রীর ডিভোর্স হয়ে যায়। তারপর থেকে ঠাকুমার কাছে নাতি রয়েছে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, এমন একটি বড় ঘটনা ঘটল তা পড়শিরা কেউ টের পাননি।
এদিন বিকেলে সনুকে তার গৃহশিক্ষক উৎপল মন্ডল পড়াতে গিয়েছিলেন। নীচতলার ঘরে দরজা ভেজানো ছিল। তা ঠেলে ঢোকার পর গোটা ঘরে রক্তের ধারা ও এইভাবে দুজনকে পড়ে থাকতে দেখে তিনি চিৎকার করেন। তা শোনার পর পড়শিরা চলে আসেন। এবার ভিড় জমে যায়।
কাছেই একটি ধূপকাটির কারখানাতে কাজ করেন সনুর বাবা শেখরবাবু। তিনি খবর পেয়ে চলে আসেন। এরপর জিনজিরা বাজার ফাঁড়িতে ওই দুজন খবর দেন। পুলিস ঘটনাস্হলে এসে প্রথমে পরিস্হিতি দেখে এটা খুন নাকি পড়ে গিয়ে মৃত্যু তা নিয়ে ধন্ধে ছিলেন। পরে শীর্ষ কর্তারা এসে বুঝতে পারেন এটা খুনের ঘটনা।