Monday, May 20, 2024
spot_img
Homeদেশকোন দিকে গুজরাট, তাকিয়ে দেশ

কোন দিকে গুজরাট, তাকিয়ে দেশ

বিমল বন্দ্যোপাধ্যায়, কোলকাতা :
এবার গুজরাটে কি হতে পারে? পদ্ম শিবির কি ফের আসতে পারে? না কি জনমত কংগ্রেস না হলে আপকে নতুন করে রাজ্য প্রশাসনের কুর্সিতে নিয়ে আসার কথা ভাবছে? একদা শ্রীকৃষ্ণের আশ্রয়স্হল দ্বারকা যা এই গুজরাটের অন্যতম স্হান। সেই গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হতেই এই প্রশ্ন গোটা দেশ জুড়ে চর্চা হচ্ছে। এই পশ্চিমবঙ্গ তার থেকে ব্যতিক্রম নয়।

কোন দিকে গুজরাট, তাকিয়ে দেশ

শুনলে অবাক হতে হবে এই চর্চায় মশগুল এই রাজ্য থেকে গুজরাটে যাওয়া হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক। যাঁদের অনেকের বাড়ি দুই ২৪ পরগণা , হাওড়া ও মেদিনীপুরে। গুজরাটের বিভিন্ন জায়গাতে তাঁরা কাজ করছেন। মোবাইলে তাঁদের অনেকের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হতেই এই প্রশ্ন উঠে এসেছে। এবার গুজরাট বিধানসভা ভোটের ফল কি হতে পারে? সুরাটে কর্মসূত্রে থাকেন সুবীরেশ মন্ডল।

কোন দিকে গুজরাট, তাকিয়ে দেশ

তিনি একজন পরিযায়ী শ্রমিক। বললেন, গেরুয়া শিবিরকে চাপে রাখার মতো বিরোধী দল হিসেবে কংগ্রেসের আগের মতো সেই সাংগঠনিক শক্তি নেই। এই ভোটের মুখে কংগ্রেস শিবির ত্যাগ করে এক বড় নেতা বিজেপিতে চলে গিয়েছেন। তাঁকে সামনে রেখে জোরদার প্রচার চালাচ্ছে গেরুয়া শিবির। শোনা যাচ্ছে তলে তলে কংগ্রেসের আরও অনেকে পদ্ম ফুলের দিকে যাওয়ার জন্য যোগাযোগ করছেন।

কোন দিকে গুজরাট, তাকিয়ে দেশ

সুবীরেশ বাবুর কথায়, বিজেপির ভিতর অন্তর্কলহের চোরাস্রোত রয়েছে। এই কারণে বিজেপির সিদ্ধপুর আসন থেকে চারবারের জিতে আসা বিধায়ক ও প্রাক্তন স্বাস্থ্য মন্ত্রী জয় নারায়ণ ভিইয়াদ দল ছাড়ার কথা এদিন ঘোষণা করেছেন। তিনি শনিবার সাংবাদিদের কাছে বলেছেন, বিজেপির নেতৃত্বর প্রতি তিতিবিরক্ত হয়ে দল ছাড়তে বাধ্য হলাম। কানাঘুষো হল তিনি এখন নিজের সিদ্ধপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ফের দাঁড়াতে চান।

কোন দিকে গুজরাট, তাকিয়ে দেশ

এজন্য কংগ্রেস ও আম আদমি তথা আপের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক দিক থেকে বিজেপি এগিয়ে থাকলেও এই সব কারণে স্বস্তিতে নেই।দক্ষিণ ২৪ পরগণার ছেলে অলীক সামন্ত পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে গুজরাটের রাজধানী গান্ধীনগরে এখন কাজের সূত্রে আছেন। তাঁর এ নিয়ে মূল্যায়ন হল, দীর্ঘদিন ধরে বিজেপি এখানে ক্ষমতায়। কেন্দ্রেও বিজেপি। ফলে একটা শক্তপোক্ত জায়গা পদ্মফুলের রয়েছে। সেই হিসেবে ভোট মেশিনারি থেকে পুলিশ ও প্রশাসন সবে গেরুয়া শিবিরের প্রভাব।

কোন দিকে গুজরাট, তাকিয়ে দেশ

ফলে বিজেপিকে সরিয়ে দিতে হলে বিরোধী দল কংগ্রসের যতটা জনমত তৈরি থেকে সাংগঠনিক পরিকাঠামো থাকা উচিত ছিল, তা নেই। এমনিতে গোটা দেশে কংগ্রেসের দিক থেকে জনমত মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। তার নেতিবাচক প্রভাব এখানে পড়েছে। ফলে ভোটারদের অধিকাংশ পদ্ম শিবিরের দিকে রয়েছে। এটা হওয়ার আরও একটা বড় কারণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজি।

কোন দিকে গুজরাট, তাকিয়ে দেশ

তাঁর হোম স্টে হল গুজরাট। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শিক্ষা গ্রহণ থেকে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া তারপর সেই স্হান থেকে এখনও পর্যন্ত ক্ষমতার এই গগণচুম্বী উত্থান, সবটাই তাঁর হোম স্টে থেকেই পাওয়া। ফলে প্রধানমন্ত্রী দিল্লির কুর্সিতে বসলেও তাঁর একটা নজর সব সময় গুজরাতের দিকে থাকে। এই জায়গার সার্বিক উন্নতির দিকে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। এটা এখানকার ভোটাররা দেখছে।

কোন দিকে গুজরাট, তাকিয়ে দেশ

তা থেকে বিশ্বাস করছে যে গুজরাটকে আগামী দিনে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন মোদিজি। ফলে সংগঠন যেমন শক্তপোক্ত হয়েছে দিনের পর দিন। তার সঙ্গে প্রতিনিয়ত গুজরাটের ভোট ব্যাঙ্ক বিজেপির প্রতি আস্হা রেখে এসেছে। তার পরিণতি সেই ৯৫ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত যতগুলি বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে, তার কোনটিতে হার হয়নি। প্রতিবার সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে গুজরাট বিধানসভা নিজেদের দখলে রাখতে পেরেছে।

কোন দিকে গুজরাট, তাকিয়ে দেশ

বিগত ২০১৭ সালে শেষ বিধানসভা নির্বাচনে ১৮২টি আসনের ভিতর বিজেপি এখানে একাই ১১১টি আসন পেয়েছিল। কংগ্রেস পেয়েছিল ৬২টি। এছাড়াও আঞ্চলিক দল বিটিপি ২, এনসিপি ১, নির্দল ১। তবে এবার আপ তেড়েফুড়ে নেমেছে। দিল্লি দখলের পর পঞ্জাব দখল করে অরবিন্দ কেজরিয়াল চমকে দিয়েছে দেশকে। এইভাবে একটি আঞ্চলিক দল পর পর দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা দখলের নজির এখনও কেউ দেখাতে পারেনি।

কোন দিকে গুজরাট, তাকিয়ে দেশ

সেই কারণে আপ এর প্রতি একটা সহানুভূতির হাওয়া ভোটারদের একাংশ দেখাচ্ছে। বললেন সুরাটের অভিজিত। বীরভূমের ছেলে অভিজিত। একটি বড় কোম্পানীতে কাজ করেন। তাঁর কথায় পঞ্জাবে কংগ্রেস দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আপ সেখানে বাজিমাত করেছে। এইখানে কংগ্রেসের ভোট ব্যাঙ্ক দখল করে সেই চেষ্টা করছে আপ। তবে এখানে বিজেপির শিকড় এতটা গভীরে যে, পঞ্জাবের মতো সুবিধা করতে পারবে না।

কোন দিকে গুজরাট, তাকিয়ে দেশ

তবে কয়েকটি আসন পেতে পারে। আর তা বিজেপি ও কংগ্রেসের যেখানে যেখানে কোন্দল আছে, সেখানে পাবে। পাশাপাশি কংগ্রেস একেবারে শেষ হয়ে যাবে না। অভিজিত বলেন, এখানকার জনমত যাচাই করে মনে হয়েছে আসন পাওয়ার দিক থেকে বিজেপি প্রথমে থাকতে পারে। দ্বিতীয় হবে কংগ্রেস। তৃতীয় জায়গাতে আপ থাকতে পারে। তবে যদি মিরাকল কিছু হয় তাহলে আপ দ্বিতীয় হয়ে যাবে।

কোন দিকে গুজরাট, তাকিয়ে দেশ

এদিকে একটি বেসরকারি সংস্থা জনমত সমীক্ষা করে বলেছে, বিজেপি ফের ক্ষমতায় আসতে চলেছে। সেখানে গত বিধানসভা ভোটের চেয়ে বেশি আসন পাবে। কংগ্রেসের আসন কমবে। আপ কয়েকটি আসন পেতে পারে। যদিও ভোটের ফলাফলে জনমত সমীক্ষা সব সময় সঠিক হয় না। ফলে এখন আমাদের সকলকে আগামী ৮ ডিসেম্বর ভোটের ফল বেরোনোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।

Most Popular

error: Content is protected !!