কাউন্টডাউন শুরু হয়েছিল আগে থেকেই। পূর্ব ঘোষণা মোতাবেক, শুক্রবার ঠিক দুপুর ২টো ৩৫ মিনিটে চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর চন্দ্রযান-৩। শুক্রবার শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণ করা হয়। মাত্র ১৭ মিনিটে পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছনোর কথা। তবে চাঁদে পৌঁছতে বেশ খানিকটা সময় লাগবে ইসরোর তৈরি চন্দ্রযানের।
বিজ্ঞানীদের অঙ্ক বলছে, ৪০ দিন পর, আগামী ২৩ থেকে ২৪ অগস্টের মধ্যে চাঁদের বুকে নামতে পারে চন্দ্রযান। আর চাঁদ অভিযানে ভারতের এই সাফল্যে নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণার জগতে বিশাল কীর্তি। এর আগে এমন কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছে রাশিয়া, আমেরিকা, চিন। এই অভিযান সফল হলে, ভারত বসবে চতুর্থ স্থানে। ইসরোর এই চন্দ্রযানের কেন্দ্রে রয়েছে এলভিএম-৩ রকেট। যা চন্দ্রযানটিকে শক্তি জোগাবে এবং পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে ঠেলে দেবে। এলভিএম-৩ হল একটি ত্রিস্তরীয় উৎক্ষেপণ যান। এর আগে একাধিক কৃত্রিম উপগ্রহ এবং চন্দ্রযাত্রায় এই এলভিএম-৩ ব্যবহৃত হয়েছে। একে ভারতীয় রকেটের ‘বাহুবলী’ বলা হয়। এর মধ্যে দু’টি স্তরে কঠিন জ্বালানি এবং একটি স্তরে তরল জ্বালানি রয়েছে।
কঠিন জ্বালানি ১২৭ সেকেন্ড ধরে জ্বলে। উৎক্ষেপণের ১০৮ সেকেন্ডের মধ্যে জ্বলতে শুরু করে তরল জ্বালানি। তা ২০৩ সেকেন্ড ধরে রকেটটি চালনা করে। চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডারের নাম ‘বিক্রম’ এবং রোভারের নাম ‘প্রজ্ঞান’।তবে আজ নয়, উপগ্রহের অন্ধকারাচ্ছন্ন দিকে আলো ফেলার জন্য ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানীদের তৎপরতা অনেক আগে থেকেই। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে চন্দ্রযান তৈরি করে তা চাঁদে পাঠানোর চেষ্টা চলেছে। ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। কিন্তু তারপর চাঁদে অবতরণের সময় ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ বিচ্ছিন্ন হয়ে আচমকা ভেঙে পড়েছিল।কিন্তু এবার তা হওয়ার আশঙ্কা নেই। ইসরোর দাবি, আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। তাই সফলভাবেই সে চাঁদের দক্ষিণ প্রান্তে ‘সফট ল্যান্ডিং’ করতে পারবে।এদিকে দেশে থাকতে না পারলেও মুন মিশন লঞ্চ হতেই উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।সুদূর প্যারিস থেকে বসেই টুইট ককরেন প্রধানমন্ত্রী।টুইটে তিনি লেখেন, “ভারতের মহাকাশ গবেষণায় এক নয়া অধ্যায় লিখল।
এটি প্রত্যেক ভারতীয়ের স্বপ্ন এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে আর বহুদূর নিয়ে গেল। এই গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জনের সবটুকু কৃতীত্ব আমাদের বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টার ফল। আমি তাঁদের চেতনা এবং ভাবনাকে স্যালুট জানাই।” উৎক্ষেপণের আগেও ইসরোকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি লিখেছিলেন, “ভারতের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে ১৪ জুলাই দিনটি ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আমাদের তৃতীয় মুন মিশন, চন্দ্রযান-৩ এদিন থেকেই তার ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু করবে। চাঁদের উদ্দেশে দেশবাসীর স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্খা সঙ্গে নিয়ে শুরু হবে এই উড়ান।”