স্টাফ রিপোর্টার: কোচবিহার থেকে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারপর্ব শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।আর প্রচারের শুরুতেই তাঁর নিশানায় রইল বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকার।সোমবার কোচবিহার ১ নং ব্লকে চান্দামারি এলাকা থেকে প্রচারের শুরুতেই তিনি নিশানা করলেন বিএসএফ-কে।এই জেলাতেই একাধিকবার বিএসএফের গুলিতে মানুষের মৃত্যু হয়েছে।এদিন বিএসএফে নিহতদের পাশে দাঁড়ান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এরপর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘খবর আছে বর্ডারে গিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাবে বিএসএফ। বিএসএফ ভয় দেখালে ভয় পাবেন না। আমাদের এসে জানান। কোচবিহারে বিএসএফ-এর গুলি করে মারা যেন অধিকারের মধ্যে পড়ে গেছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘বিএসএফ ভয় দেখালে অভিযোগ জানাবেন। ভয়ে ঘরে বসে থাকবেন না। মনে রাখবেন, যে শহিদ পরিবার আজকে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে, তার বদলা নিতে পঞ্চায়েতে তৃণমূলকে ভোট দিতে হবে।
আপনার পরিবার যাতে কোনও দিন খালি না হয়ে যায় তার জন্য আপনাকেই লক্ষ রাখতে হবে।’’আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিএসএফ-কে বিজেপি রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করতে পারে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘আমি নিশ্চয় প্রশাসনকে বলব নজর রাখতে। ১৫ কিলোমিটার যেটা ছিল, সেটা গায়ের জোরে একতরফা ভাবে ৫০ কিলোমিটার করেছে।
আমার কাছে খবর আছে, নির্বাচনের সময় বর্ডারে বর্ডারে গিয়ে আপনাদের তাঁরা ভয় দেখাবে। বলবে তুলে নেব। সিবিআই লাগাব, ইডি লাগাব। আমি বলি কিছু করতে পারবে না। আইনত আইন-শৃঙ্খলা রাজ্য সরকারের আওতায় পড়ে। কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায় পড়ে না।’’ কোচবিহারের বিজেপি সাংসদকে নিশীথ প্রামাণিককেও নাম না-করে নিশানা করেন মমতা।
বলেন, ‘‘একজন গুন্ডাকে মন্ত্রী করেছে। তা-ও আবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই মন্ত্রী আফ্রিকা ঘুরে এসে নিজের কনভয় নিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভোটের সময় কি এটা করা যায়? আমরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাব।’’ মোদী সরকারকে আক্রমণ করতে গিয়ে পাওনা টাকার প্রসঙ্গেও সরব হন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের থেকে ১০০ দিনের কাজের টাকা আদায় করে ছাড়ব।
বাংলার বাড়ির টাকাও ওরা বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলার টাকা না দিলে আগামী দিনে বিজেপিকে রাজনৈতিক ভাবে পরাজিত করব। নতুন সরকার আসতে দিন। আমরাও দিল্লি থেকে টাকা নিয়ে আসব। আমরা বাংলার বাড়ি করে দেব। শুধু একটু ধৈর্য ধরুন।’’ তিনি অভিযোগ করেন, রাজ্যের গরিব মানুষের ১০০ দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না মোদী সরকার। আর আমেরিকা রাশিয়াকে খুশি করতে টাকা বিলোচ্ছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বলছে ডাবল ইঞ্জিন সরকার কাজ করবে। একটা ইঞ্জিন আগেই ফুটো হয়ে গেছে। আমি বলব, একটা পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিয়ে আরও বিকল করে দিন। আর একটা ইঞ্জিন আগামী বছর লোকসভা ভোটে ভোট দিয়ে বিকল করে দেবেন।আমরা ১১ বছরে যা করেছি আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি গোটা পৃথিবীর কেউ করতে পারেনি। আজকে বাংলা মডেল তৈরি হয়ে গিয়েছে।
তাই বিজেপি আমাদের উপর হিংসা করে। ওদের হিংসা করতে দিন। ওরা দেশটাকে বেচে দিতে চায়। ওদের আমরা দেশ বেচতে দেব না। মনে রাখবেন ওদের ডাবল ইঞ্জিন একটা পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফুটো হবে আর একটা লোকসভা নির্বাচনে ফুটো হবে। তাই মানুষের সরকারকে ভোট দিন। মানুষের সঙ্গে থাকুন। ’’ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের ‘সাফল্য’ তুলে ধরার পাশাপাশি সোমবার মমতা আশ্বাস দেন, পঞ্চায়েত স্তরে দুর্নীতি রুখতেও এ বার তিনি সক্রিয় হবেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এ বার থেকে পঞ্চায়েত আমরা নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করব। কাউকে চুরি করতে দেবেন না। কেউ টাকা চাইলে ছবি তুলে রাখবেন। তার পর আমাকে পাঠিয়ে দেবেন।” তাঁর কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের আগে অভিষেক, ওর টিম গোটা রাজ্যে ঘুরেছে। যুব সংগঠনও এই কাজে ছিল। ৯৯ শতাংশ আসনে প্রার্থী বাছাই হয়তো ঠিক হয়েছে। এক শতাংশ কেউ কেউ আছে, যারা চুরিও করবে আবার টিকিটও চাইবে। সেটা আমরা দিচ্ছি না।”
এদিন প্রচারে নেমেও ফের ক্ষমা চাইলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।হাত জোড় করে তিনি বলেন, ”কেউ যদি আপনাদের দুঃখ দিয়ে থাকে, তাহলে তাঁদের হয়ে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ভুল বুঝবেন না। কেউ দুষ্টুমি করলে করলে দুটো চড় মারুন। এই অধিকার আছে আপনাদের।” এদিন পচারের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় বিজেপি থাকলেও, হালকা ভাবে এক-আধ বার ছুঁয়ে গেলেও, সিপিএম বা কংগ্রেসের নামোচ্চারণও করেননি তৃণমূল নেত্রী।
সভা শেষে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এটি কি পটনার বিরোধী বৈঠকের পর ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি’র ফল? মমতার এদিনের প্রচার-বক্তৃতায় পঞ্চায়েত ভোটের পাশাপাশি একাধিক বার উঠে এসেছে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের প্রসঙ্গও। সেই নির্বাচনকে মাথায় রেখে এবং বিরোধী জোটের সম্ভাব্য সমীকরণ মাথায় রেখেই কি এই মুহূর্তে মমতার আক্রমণের লক্ষ্য শুধু বিজেপি?
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এই তত্ত্বে সায় দিচ্ছে না। দলের এক শীর্ষনেতা এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘‘এই ব্যাখ্যা ঠিক নয়। কোচবিহার তথা উত্তরবঙ্গে বিজেপির প্রভাব বেশি। বাম বা কংগ্রেসের কোনও শক্তি নেই। তাই ওদের নিয়ে বলা ওখানে শব্দের অপচয় ছাড়া কিছু নয়।’’