স্টাফ রিপোর্টার : ধর্নার প্রথমদিনেই মঞ্চ থেকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে বুধবার ও বৃহস্পতিবার রেড রোডে ধর্না দেবে বলে জানিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো বুধবার বেলা ১২ টা নাগাদ ধরনা মঞ্চে পৌঁছে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, ইন্দ্রনীল সেন, জ্যোৎস্না মান্ডি, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশী পাঁজা প্রমুখ।এদিন ধরনার শুরুতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে দেন, পুরোটাই পার্টির কর্মসূচি। সরকারি কর্মসূচি নয়। সেকারণেই মঞ্চে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতীক রয়েছে।মঞ্চে রাখা হয়েছে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের কাট আউট। রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এই কাট আউট রাখা হয়েছে।
ধর্নামঞ্চে ওয়াশিং মেশিনও নিয়ে আসা হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বারবার অভিযোগ করা হয়েছে যে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে যাঁরা বিজেপিতে গিয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না।বিজেপিতে যোগ দিলেই কি ওয়াশিং মেশিনে কাচা হয়ে দুর্নীতি মুক্ত হয়ে যান নেতারা। সেটা বোঝাতেই ধর্না মঞ্চে একেবারে ওয়াশিং মেশিন নিয়ে এসে প্রতিবাদ দেখাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধারণা নিয়ে কটাক্ষ করে শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীরা এভাবে ধর্নায় বসতে পারে না। শুভেন্দু অধিকারীর সেই মন্তব্যের পাল্টা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আমি তো এর আগেও ধর্নায় বসেছিলাম।
রাজীব কুমারকে যখন তাঁর বাড়িতে গিয়ে গ্রেফতার করার চেষ্টা করা হয়েছিল তখনও তো আমি ধরনায় বসেছিলাম। আমি কেন জয়ললিতাও বসেছিলেন ধরনায়। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বসেছিলেন। আমি তো তবু পার্টির ব্যানারে করছি। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের টাকা আটকে রাখা হয়েছে। তাদের টাকা আদায় করার জন্য আমি একবার নয় আমি এক কোটি বার ধর্নায় বসব। ওদের কী করার ক্ষমতা আছে আমি দেখতে চাই।’ সুড় চড়িয়েছেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধেও। কেন্দ্রকে তোপ দেগে তাঁর মন্তব্য, ‘আমি দীর্ঘ দিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলাম। আমি ইউনাইটেড নেশনস অ্যাসেম্বলিতে ভাষণ দিয়ে এসেছি। আর আমাকে নতুন করে সংবিধান শেখাবেন? কথায় কথায় ডবল ইঞ্জিন সরকার বল, এখন আমি তো দুই দায়িত্বে। আমি এক বার নয়, আমি হাজার বার ধর্ণায় বসব।
কী করতে পার দেখব।’কেন্দ্রের বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের টাকা যে সফলভাবে তাঁর রাজ্যে ব্যবহার হচ্ছে সে প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘১০০ দিনের কাজে বাংলা পরপর পাঁচবার প্রথম হয়েছে।’ এই প্রসঙ্গেই এদিন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ দেখতে আসা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের আসা যাওয়ার খরচ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। মমতা বলেন, এখন ওরা আমাদের কিসব ২৭ নম্বর ধারা দেখাচ্ছে। বলছে আমার ইচ্ছা হলে আমি সব বন্ধ করে দিতে পারি। তুমি আমাদের উপর ২৭ নম্বর ধারা প্রয়োগ করেছ আমি তোমাদের বিরুদ্ধে জনগণকে দিয়ে প্রয়োগ করাব ৪২০ নম্বর ধারা। আগামীদিন ২০২৪ সালে তোমরা আসবে না। নিশ্চিন্তে থাকো। যতই চেঁচাও তোমরা আসবে না।
আগামীদিনে বিজেপিকে কেন্দ্র থেকে সরাতে বিরোধী দলগুলিকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানান তৃণমূল সুপ্রিমো। রামনবমী নিয়ে বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, “বিজেপির নেতারা বলে বেড়াচ্ছে রামনবমীর মিছিলে যে অস্ত্র পাব, হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ব। আমি বলছি, আমি রামনবমীর মিছিল আটকাব না। কিন্তু বলে রাখলাম কোনওরকম অশান্তি হলে পালটা মিছিল কিন্তু আমরাও বের করতে পারি।” এরপর আরও স্পষ্ট করে মমতা বলে দেন, ”রামনবমীর মিছিলের নামে যদি মুসলিম এলাকায় ঢুকে অশান্তি বাঁধানোর চেষ্টা করা হয়, তাহলে আইন কিন্তু আইনের পথে চলবে।” নাম না করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও কটাক্ষ করেন তৃণমূলনেত্রী। মমতা বলেন, “বিরুদ্দে কথা বললেই বিজেপি এক বাবু ইডি-সিবিআইয়ের ভয় দেখাচ্ছে। এই সব চুনো মাছদের কী বলব! এই গুলো পুকুরের গেঁড়ে গুগলি।
আমরা সহকর্মী ব্রাত্য বসু এখানে রয়েছেন। আমি তাঁকে বলব মালদা, পূর্ব মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদে চাকরি পেয়েছিল কোন এজেন্সির মাধ্যমে চাকরি পেয়েছিল তার কাজ বের করতে হবে। পুরুলিয়ার চাকরি বিক্রি করে দিয়েছিল, সেই গুলোও বের করতে হবে।” পাশাপাশি মঞ্চ থেকে এদিন বামেদেরও নিশানা করলেন তিনি। সম্প্রতি মমতার সরকারের বিরুদ্ধে বকেয়া ডিএ না মেটানোর অভিযোগ এনে লাগাতার বিক্ষোভ শুরু করেছেন রাজ্য সরকারের কর্মচারীরা। মমতা সেই বিক্ষোভকারীদের সম্বোধন করলেন ‘চোর-ডাকাত’ বলে। ধরনা মঞ্চে মন্ত্রী শশী পাঁজাকে তালিকা দেখানোর নির্দেশ দিয়ে মমতা বলেন, “এখানে গিয়ে এই চাই, ওখানে গিয়ে এই চাই করে যাচ্ছে সব। চোর ডাকাতগুলো এই কাজ করে বেড়াচ্ছে।
যে চোর ডাকাতগুলো চিরকুটে চাকরি পেয়েছিল, সব গিয়ে ডিএ-র ওখান বসে আছে। তাদের কাছে আমাকে এখন জ্ঞান শুনতে হবে! সব এক একটা ডাকাত সর্দার।” যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছে বিরোধীরা।সিপিএমের নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রাইমারি স্কুল হোক, মাধ্যমিক স্কুল হোক, যত কাগজ বেরোচ্ছে এখন সব সিপিএমের লোকেরা করছে বিভিন্ন জায়গায় বসে থেকে। ওদের একটা ফাইল খুঁজুন পাবেন না। ২০০১ সালের ফাইল খুঁজন পাবেন না। লুকিয়ে রেখেছে। ২০০২, ২০০৯, ২০২০ এর খুঁজুন পাবেন না। হয় চুরি করেছে, নয় পুড়িয়ে দিয়েছে, নয় লুকিয়ে রেখেছে। আর আজকে তোমার গলার বেশি জোর।
সিপিএমের মুখপত্রে যাঁরা চাকরি করে তাঁদের স্ত্রীরা সব শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছেন। কী করে? খুলব খাতাটা? একজন বাবু আছেন সিপিএমের রোজ কুৎসা করে বেরায় তাঁর বউ চিরকুটে ঢুকেছিল। তিনশো টাকায় ঢুকেছিল এখন প্রচুর টাকা পেনশন পায়।’ বকটুই নিয়েও তিনি বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি তো ভেবেই পাচ্ছি না বীরভূমের বগটুইতে কী হল! চাকরি দিলাম, টাকা দিলাম, ঘর দিলাম, আমাদের লোক মার্ডার হল, যাকে সিবিআই গ্রেফতার করল সে মার্ডার হল, লোক বিচার পেল না। তাঁদের সঙ্গে কত টাকার ডিল হয়েছে? তদন্ত আমিও করব। দেখব কার কাছ থেকে কত টাকা কোন খাতে কার কাছে গিয়েছে।’