অমিত মন্ডল ও রবীন্দ্রনাথ মন্ডল, নামখানা : মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল জনপ্রিয় ইউটিউবার বাইশ বছরের অমিত মণ্ডলের। মঙ্গলবার দুপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ফ্রেজারগঞ্জের মুন্সির রোড এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে একটি স্কুটার। গুরুঅমিত মণ্ডল, ফ্রেজারগঞ্জ: না ফেরার দেশে ইউটিউবার অমিত। সবাইকে কাঁদিয়ে আজ তিনি বহু দূরে। মঙ্গলবার দুপুরে ফ্রেজারগঞ্জের মুন্সি রোড বাসস্ট্যান্ডের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে শিবপুর জংশন এলাকার বাসিন্দা ইউটিউবার বছর কুড়ির অমিত মণ্ডল।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে তাঁর মামা এবং মামিমাকে সঙ্গে নিয়ে একটি স্কুলটিতে করি বকখালিতে বেড়াতে এসেছিলেন অমিত। বাড়ি ফেরার পথে অমিতের মামা স্কুটি চালানোর আবদার করে বসেন। অমিত মাঝখানে বসেছিলেন। ফ্রেজারগঞ্জের মুন্সি রোড বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি মোটরভ্যানকে সাইড দিতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে স্কুটি। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশেই থাকা একটি দোকানের পিলারে ধাক্কা খায় সেটি।
স্কুটি থেকে তিনজনেই ছিটকে পড়েন। গুরুতর জখম অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। অমিত এবং অমিতের মামার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কাকদ্বীপ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে তাঁদের দু’জনকে ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতাল স্থানান্তরিত করা হয়। ধীরে ধীরে অমিতের অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ইউটিউবার অমিত সকলকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান।
অমিতের মৃত্যুর খবর পাওয়া মাত্রই তাঁর পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি বন্ধু-বান্ধব থেকে তাঁর সমস্ত শুভাকাঙ্ক্ষী ভেঙে পড়েছেন। তাঁর বাবা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, এই বাড়িতে আর ভিডিও করবে কে? মাও বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।হাঁটাচলার সামর্থ্য ছিল না অমিতের। যদিও সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি সেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু সাফল্য ছুঁয়ে দেখেও নিজের পরিশ্রমের সুফল পুরোপুরি উপভোগ করা হল না তরুণটির। বরং পথ দুর্ঘটনায় বেঘোরে মৃত্যু হল ইউটিউব তারকা অমিত মণ্ডলের।
অমিত ফ্রেজারগঞ্জের শিবপুর জংশন এলাকার বাসিন্দা। অভাবী পরিবারের ছেলে তিনি। মা-বাবা স্থানীয় পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন বাজারে ঘুরে ঘুরে সাফাইকর্মী হিসেবে কাজ করেন। সেই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও হাল ছাড়েননি অমিত। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে কলেজে ভর্তি হন তিনি। নামখানা কলেজে প্রথম বর্ষের পড়ুয়া ছিলেন। সম্প্রতি ইউটিউবে ব্লগ বানাতে শুরু করেন অমিত।
নিজের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থেকে পছন্দ-অপছন্দ, সব বিষয় নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতেন। অল্পদিনের মধ্যে তাঁর সেই ভিডিওগুলি তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। লক্ষ লক্ষ দর্শক ছিলেন তাঁর ভিডিও-র। ছোটবেলা থেকে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বেড়ে ওঠা অমিতও নতুন ভাবে চিনতে শুরু করেন চারপাশ। কিন্তু আকস্মিক মৃত্যুতে শেষ হল অমিতের লড়াই।