Tuesday, May 21, 2024
spot_img
Homeরাজ্যআগামী ১৯ এপ্রিল উত্তরবঙ্গে প্রথম দফার ভোটে তিন লোকসভা ক্ষেত্র জলপাইগুড়ি, আলীপুরদুয়ার...

আগামী ১৯ এপ্রিল উত্তরবঙ্গে প্রথম দফার ভোটে তিন লোকসভা ক্ষেত্র জলপাইগুড়ি, আলীপুরদুয়ার ও কোচবিহারে জোড়া না পদ্ম, চর্চা তা নিয়ে

অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: আগামী ১৯ এপ্রিল লোকসভার প্রথম দফার ভোটে নজর
থাকবে উত্তরবঙ্গের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের দিকে। তা হল, জলপাইগুড়ি, আলীপুরদুয়ার এবং
কোচবিহার। হিসেব কষলে আর মাত্র দশ দিন বাকি। ফলে টানটান উত্তেজনা রয়েছে ওই তিনটি
লোকসভা কেন্দ্রে। এর ভিতর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেদের দলের প্রার্থীদের জন্য সেখানে গিয়ে প্রচার করেছেন। এবার ভোটাররা
তাদের মতামত ইভিএম এ দেবেন। প্রসঙ্গত, বিগত লোকসভা ভোটে ওই তিনটি কেন্দ্রে বিজেপি
জয়ী হয়েছিল। তৃণমূল সেইভাবে কিছুই করতে পারেনি। এবার কি সেই ফল বিজেপি ধরে রাখতে
পারবে? না কি সেখানে তৃণমূল ভাগ বসিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারবে? এই প্রশ্ন নিয়ে গোটা
উত্তরবঙ্গের ওই তিন জেলা জলপাইগুড়ি, আলীপুরদুয়ার ও কোচবিহারে এখন চর্চা চলছে। সকাল
থেকে রাত পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলিও তা নিয়ে ব্যস্ত। এটাও বাস্তব যে, আগে এই তিনজেলায়
সিপিএম ও কংগ্রেসের একটা শক্ত সংগঠন ছিল। এক সময় সিপিএমের হাতে ছিল এমপি র আসন।
ধীরে ধীরে তৃণমূলের উত্থান সেই সংগঠনকে একেবারে নষ্ট করে দিয়েছে। আর কংগ্রেসের
নিজেদের ভিতরের কোন্দলে তা এখন সাইবোর্ডে পরিণত। সিপিএমে দুর্বল হলেও শহর ও গ্রামে
কোথাও কোথাও পুরাতন ও নতুন কিছু যুক্ত হয়েছে। কিন্তু এই লোকসভা ভোটে সিপিএম ও কং
জোট বাঁধলেও তিনটি আসনের ভিতর একটিও ধরে রাখার মতো সেই ক্ষমতা নেই। ফলে এবারে
ভোটে লড়াই হতে যাচ্ছে বিজেপি ও তৃণমূল এই দু’টি দলের ভিতর। বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলার
সভাপতি বাপী রায়ের দাবি, গতবারের মতো ৩ টি আসনই এবার বিজেপি ধরে রাখতে সক্ষম হবে।
কারণ, মানুষের ভিতর তৃণমূলের সম্পর্কে ঘৃণা তৈরি হয়েছে। কারণ, উত্তরবঙ্গের জন্য সেইভাবে
কিছুই করেনি তৃণমূল সরকার। মানুষ যে তৃণমূলকে আর চায় না, তার প্রমাণ এবারের
প্রধানমন্ত্রীর সভা। তিনি জলপাইগুড়ি, আলীপুরদুয়ার ও কোচবিহারে তিনটি সভা করেছেন।
সবগুলিতে জনজোয়ারে ভেসে গিয়েছে। ধূপগুড়িতে মানুষের ঢল এত ছিল যে, অনেকটা দূর থেকে
প্রধানমন্ত্রী নিজের গাড়ির সামনের আসনে বসে জানলা খুলে পদ্ম ফুল হাতে নিয়ে রাস্তার দু’
ধারে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার মানুষের শুভেচ্ছা নিয়েছেন। তাঁদের আবেগকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন
হাসিমুখে। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী এখানে সভা করেছেন। তাঁর সভায় তিন থেকে চার হাজার মানুষ
এসেছেন। যা আগে কখনও দেখা যায়নি। এটা তৃণমূলের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার একটা বড়
সঙ্কেত। জলপাইগুড়ি শহরে দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মচারী ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত
ছিলেন অখিলেশ চৌধুরি। একেবারে কট্টর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্ধ ভক্ত। বাম আমলে
নানাভাবে অত্যাচারিত হয়েছেন এই কারণে। কিন্তু তৃণমূল ছেড়ে যাননি। অখিলেশবাবুর কথায়,
তৃণমূলের দলের স্বচ্ছতা নানা কারণে এখন প্রশ্নের মুখে। আগের সেই ফেস ভ্যালু নষ্ট হয়ে
গিয়েছে। না হলে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় লোক কম আসবে কেন? কাউন্সিলাররা সভা শেষ হওয়ার
আগে চলে যাচ্ছেন। এটা আগে কখনও জলপাইগুড়িতে দেখা যায়নি। আমরাও পুরাতনীরা
তিতিবিরক্ত। ফলে এবারও তৃণমূলের ঢেউ মানুষের ভিতর কতটা ধাক্কা দেবে তা নিয়ে সন্দেহ
আছে। এর সঙ্গে সহমত হতে পারেননি জলপাইগুড়ি শহরের সিনিয়র এক তৃণমূল নেতা। সাংগঠনিক
ওঠানামার অনেক ঘটনার সাক্ষী। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে এই তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের সম্পর্কে
নিবিড় খোঁজখবর রাখেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি যা বলেছেন তা হল, এবার বিগত
লোকসভার মতো অতটা সুবিধা পাবে না বিজেপি। বিশেষ করে লক্ষীভাণ্ডার। গতবার মহিলা
ভোটাররা এজন্য মমতা দিদির তৃণমূলকে বেশি করে ভোট দিয়েছিলেন। এবার টাকা আরও বেড়েছে।
তাতে করে বিগত দিনের চেয়ে আরও ১০ শতাংশ ভোট বাড়বে। যার সুবিধা পাবে তৃণমূল। বিজেপির
এটা মাইনাস পয়েন্ট। এছাড়া বিগত দিনে জলপাইগুড়িতে দলীয় কোন্দলে সব ছন্নছাড়া ছিল। এবার
গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হওয়াতে দলের সমস্ত গোষ্ঠীর লোকজন একজোট হয়ে নেমেছে। ফলে এখানে বিজেপি সেই ভোট ভাগের সুবিধা পাবে না। আলীপুরদুয়ারের ভোট হয় চা বাগানের উপর ভিত্তি করে।
চা বাগানের শ্রমিক সংগঠন যে দলের হাতে থাকবে, সেই দল জিতবে। বিগত লোকসভা ভোটে জন
বালা বিজেপির প্রার্থী ছিলেন। তাঁর হাতে অধিকাংশ চা বাগানের নিয়ন্ত্রণ ছিল। তাই বিজেপি
বেরিয়ে গিয়েছে। এবার তাঁকে টিকিট দেয়নি পদ্ম দল। সেখানে মনোজ টিক্কা কে টিকিট দিয়েছে।
ফলে কোন্দল তৈরি হয়েছে। চা বাগানের ভোট যদি জন বালা ঘুরিয়ে দেয়, তা হলে বিজেপির পায়ের
তলা থেকে মাটি সরে যাবে। ওই তৃণমূল নেতা বলেন, কোচবিহারেও এবার তৃণমূলের হাওয়া ভালো।
কারণ, জগদীশ বাসুনিয়া নামে যাঁকে তৃণমূল প্রার্থী করেছে। তিনি দলের সকলকে নিয়ে চলতে
পারেন। সেই কারণে এবার সেখানেও বিজেপির আগের সেই ভোট ব্যাঙ্ক অনেকটা ধ্বস নেমেছে।
তাছাড়া, নিশীথ প্রামাণিক সব সময় দিল্লি থাকতেন। এটা মানুষ সেভাবে মেনে নিতে পারেনি। যা
জোড়া ফুলের দিকে যাবে। বাস্তবিক নেতারা যাই দাবি করুন, শেষ পর্যন্ত আমজনতাই ঠিক জোড়া
নাকি পদ্ম কাকে বাছাই তালিকায় রাখবেন।

Most Popular

error: Content is protected !!