সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ১ জুন পর্যন্ত জামিনে জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।আর জামিনে মুক্ত হয়ে একাধিক ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন কেজরীওয়াল। মোদীকে আক্রমণ করে কেজরী বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, কিন্তু সব চোর তাঁর দলেই রয়েছে।
কেজরীওয়ালকে গ্রেফতার করে তাঁরা বার্তা দিতে চেয়েছিলেন, তাঁরা যাঁকে ইচ্ছে তাঁকে গ্রেফতার করতে পারে। বিজেপি সমস্ত বিরোধী নেতা-নেত্রীকে জেলে ভরে রাজনীতি খতম করে দেবে।’’ এ দিন নিজের কর্মী, সমর্থকদের সামনে এসে কেজরিওয়াল বলেন, ’’যত বিরোধী নেতা আছেন, সবাইকে জেলে পাঠিয়ে দেবে৷
আর অন্যান্য বিজপি নেতাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ শেষ করে দেবে৷ ওরা সঞ্জয় সিং, মণীশ সিসোদিয়া, সত্যেন্দ্র জৈন, কেজরিওয়ালকে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে৷ এম কে স্ট্যালিন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিক মন্ত্রীকে জেলে পাঠিয়েছেন৷ হেমন্ত সোরেনকে জেলে পাঠিয়েছে, কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর পিছনে পড়ে আছেন৷
এরা যদি ভোটে জেতে, আমায় দিয়ে হলফনামায় লিখিয়ে নিন, কিছু দিন পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলে থাকবেন৷ পিনারাই বিজয়ন, স্ট্যালিন, উদ্ধব ঠাকরে, তেজস্বী যাদব- যত বিরোধী নেতা আছেন সবাই জেলে থাকবেন৷ বিজেপির নেতাদেরও এরা ছাড়়বেন না৷ আদবাণী, মুরলী মনোহর যোশীর রাজনীতি শেষ করে দিয়েছেন৷
শিবরাজ সিং চৌহানের মতো নেতা যিনি মধ্যপ্রদেশে জিতিয়ে আনলেন, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী না করে রাজনীতিও এরা শেষ করে দিয়েছে৷ রমন সিংয়েরও একই পরিণতি হয়েছে৷ ভোটে জিতলে এবার এরা দু মাসের মধ্যে এরা উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বদলে দেবেন, যোগী আদিত্যনাথের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ শেষ করে দেবে, আমার কথা লিখে নিন৷’’
কেজরিওয়াল দাবি করেন, “নরেন্দ্র মোদি এক দেশ, এক নেতার তত্ত্বে বিশ্বাসী৷ স্বাধীনতার পর গত ৭৫ বছরে বিরোধীদের উপরে এত অত্যাচার হয়নি৷” পাশাপাশি তিনি এ-ও ব্যাখ্যা করেন, “ওরা বলছে ইন্ডিয়া জোট জিতলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, আমার প্রশ্ন, আপনাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন?” কেজরির যুক্তি, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বয়স ৭৫ বছর হচ্ছে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর।
তিনি নিজেই নিয়ম করেছেন ৭৫ বছর বয়স হলেই দলের নেতারা অবসর নেবেন। লালকৃষ্ণ আডবানী, মুরলী মনোহর জোশী, সুমিত্রা মহাজন, যশবন্ত সিনহারা এই নিয়মের বলি হয়েছেন। এবার তাহলে ১৭ সেপ্টেম্বর মোদিও অবসর নেবেন।” এর পরই কেজরিওয়ালের কৌশলী প্রশ্ন, “মোদি অবসর নিলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? মোদির গ্যারান্টি কে পূরণ করবেন?
অমিত শাহ করবেন কী? নিজের বিশ্বস্ত সঙ্গী অমিত শাহকে কুরসিতে বসাবেন মোদি। মনে রাখবেন, আপনি কিন্তু মোদিকে ভোট দিচ্ছেন না। ভোট দিচ্ছেন অমিত শাহকে। মোদি ভোট চাইছেন অমিত শাহর জন্য।” যদিও কেজরিওয়াল এ দিন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দাবি করেছেন, “রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, কর্ণাটক, বিহার, পশ্চিমবঙ্গের মতো সব রাজ্যেই বিজেপির আসন কমবে৷
বিজেপি ২২০ থেকে ২৩০টির বেশি আসন পাবে না।” এদিন তিনি এ-ও ব্যাখ্যা করেন, কেন তিনি গ্রেফতার হয়েও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেননি।কেজরীওয়াল এবং সোরেন দু’জনেই গ্রেফতার ইডির হাতে। দিল্লির আবগারি মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন প্রথম জন। দ্বিতীয় জনকে ইডি গ্রেফতার করেছিল জমি কেলেঙ্কারি মামলায়।
গ্রেফতার হওয়ার আগে সোরেন রাজভবনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে আসেন। কিন্তু কেজরীওয়াল সেই পথে হাঁটেননি। তাঁর গ্রেফতারি পর থেকেই আম আদমি পার্টি (আপ) বার বার দাবি করে, জেল থেকেই সরকার চালাবেন কেজরীওয়াল।শনিবারের সাংবাদিক বৈঠকে কেজরীওয়াল মোদীকে নিশানা করে বলেন, ‘‘আপনি যদি গণতন্ত্রকে জেলে বন্দি করেন, তবে জেল থেকেই গণতন্ত্র চলবে।
এমনকি, হেমন্ত সোরেনের পদত্যাগ করা উচিত হয়নি।’’ তার পরই কেজরীওয়াল ব্যাখ্যা করেন, কেন তিনি পদত্যাগ করেননি। তাঁর কথায়, ‘‘পদত্যাগ না করে আমি জেল থেকে তানাশাহির বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমি যখন জেলে ছিলাম, কিছু লোক প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন অরবিন্দ কেজরীওয়াল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন না?
৭৫ বছরের ইতিহাসে দিল্লিতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আপ। এই ফলাফল দেখে ওরা (বিজেপি) বুঝতে পেরেছিল আপকে হারানো যাবে না। তাই কেজরীওয়ালকে জেলে পাঠানোর ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। ভেবেছিল, সরকার পড়ে যাবে। কিন্তু আমরা সেই ফাঁদে পা দিইনি।’’