বিশ্ব সমাচার,ক্যানিং: দীর্ঘদিন রোগশয্যায় চিকিৎসা চলছিল। অবশেষে রবিবার রাতে মৃত্যু হয় বছর পঞ্চাশের বীণা দাসের। হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ বাড়ির লোকের হাতে তুলে দিতে গেলে সমস্যা তৈরি হয়। স্ত্রীর মরদেহ সৎকারের ক্ষমতা নেই স্বামী অসিতরঞ্জন দাসের। অসিতবাবুর কোনও আত্মীয়-বন্ধুবান্ধব, সন্তান নেই।
এমনকী অর্থনৈতিক ভাবেও তিনি অক্ষম। স্ত্রীর দেহ নিয়ে কী করবেন ভেবে উঠতে পারছিলেন না। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপর সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে আসরে অবতীর্ণ হন সাংবাদিক সুভাষচন্দ্র দাশ ও বান্টি মুখার্জি। ক্যানিং থানার আইসি সৌগত ঘোষকে ঘটনার কথা জানানো হয়।
তিনিও এখিয়ে আসেন। এগিয়ে আসেন হাসপাতালের অস্থায়ী কর্মী নন্তু দাস, সিভিক ভলান্টিয়ার তাপস বিশ্বাস, সমাজসেবী প্রভাকর দাস,পবিত্র মণ্ডল,শ্মশানবন্ধু গোবিন্দ সরদার ও গোপাল সরদার। পূর্ণ মর্যাদায় বীণাদেবীর মৃতদেহ রাত প্রায় ১২টা নাগাদ ক্যানিংয়ের বৈতরণী শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়।সৎকার করা হয়।
জানা গিয়েছ, উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের টাকি থানার ইটাহার গ্রামে জন্ম অসিতবাবুর। তিন ভাই, পাঁচ বোন। অভাবের সংসার। কলকাতায় চলে আসেন। অভাব অনটনের জন্য ১৯৭৬ সালে স্নাতক স্তরের ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়া হয়নি, যবনিকা পড়ে পড়াশোনায়। এরপর ঢাকুরিয়া এলাকায় ফুটপাথে বইয়ের দোকান করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করেন।
রাঁচীর বীণা দেবী ঢাকুরিয়া এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতেন। অশান্তির কারণে আত্মহত্যা করার জন্য রেললাইনে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছিলেন। মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন অসিতবাবু। এরপর দু’জনের মন দেওয়া নেওয়া। কেউ কারও হাত আর ছাড়েননি। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তাঁরা। শুরু হয় দাম্পত্যজীবন।
সংসার চালানোর তাগিদে দিনমজুরের কাজ শুরু করেন অসিতবাবু। সাংসারিক খরচ বাঁচাতে দম্পতি বারুইপুরের পিয়ালিতে একটি ভাড়াবাড়িতে চলে আসেন। দিব্যি চলছিল। আচমকা ২০১৮ সালে কলকাতায় দু’টি বাসের রেষারেষিতে অসিতবাবুর দু’টি পা প্রায় অকেজো হয়ে যায়। বীণা দেবীর প্রচেষ্টায় প্রায় সুস্থ হয়ে ওঠেন।
স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। এরপর ২০১৮ সালে আবারও বিপদে পড়েন। আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন বীণা দেবী। তাঁর স্বামী স্ত্রীকে ভালো করার চেষ্টা করেন। দীর্ঘ ছয় বছর শয্যাশায়ী থাকার পর একমাস আগে স্ত্রীর ব্রেন স্ট্রোক হয় ।
তাঁকে চিকিৎসার জন্য ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শেষে মৃত্যু হয় বীণা দেবীর।
স্ত্রীর দেহ পঞ্চভূতে বিলীন হতেই চোখের জল ফেলতে ফেলতে অসিতবাবু বলেন, ‘জানি না কী অপরাধ করেছিলাম। যাঁকে মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচিয়েছিলাম, তাঁকেই কেড়ে নিল যমদূত!