লোকসভা নির্বাচনের মাঝে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৬ এসএসসি নিযোগ প্রক্রিয়ার গোটা প্যানেল বাতিল হয়েছে। চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২৫ হাজার জন।কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে যে শিক্ষকেরা চাকরি হারিয়েছেন, এবার তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই রায়কে ‘বেআইনি’ বলেও দাবি করলেন তিনি।
ভোটের প্রচারে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের জনসভা থেকে তিনি বলেন, “আমরা লড়ে যাব। লড়াই করব। যাঁদের কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ চাকরি বাতিল করা হল তাঁরা হতাশ হবেন না। চিন্তা করবেন না। কেউ জীবনের ঝুঁকি নেবেন না। আমরা আপনাদের পাশে রয়েছি। যতদূর লড়াই করার লড়াই করব।” নাম না করে তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে কড়া ভাষায়ে আক্রমণ করেন মুখ্য়মন্ত্রী।
বলেন, “একজনকে দেখলেন না বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে গেল। তাঁর অর্ডার ছিল এটা। সুপ্রিম কোর্ট এটাকে সরিয়ে দিয়েছিল। বলেছিল নতুন ডিভিশন বেঞ্চ করে আলোচনা হোক।” মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “আরে কাকে নিয়ে করবেন নতুন ডিভিশন বেঞ্চ? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।
আমি বিচারপতিদের নিয়ে বলছি না।” এরপরই আদালতের রায় নিয়ে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী চ্যালেঞ্জ ছোড়েন। বলেন, ” রায় নিয়ে বলার অধিকার আমার রয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ করছি। কারণ ২৬ হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি বাতিল মানে প্রায় দেড় লক্ষ পরিবার। বলছে কি না আট বছর তাঁরা চাকরি করেছে, চার সপ্তাহের মধ্যে সব টাকা ফেরত দিতে হবে। এটা সম্ভব?”
মুখ্য়মন্ত্রীর প্রশ্ন, “আপনারা যাঁরা এই রায়টা দিচ্ছেন, সারা জীবন আপনারা যাঁরা চাকরি করলেন, তাঁদের যদি টাকা ফেরত দিতে বলা হয় পারবেন দিতে? সব তো সরকারি টাকায় চলেন, সরকারের গাড়িতে চড়েন, সরকারি নিরাপত্তা পান। আমরা আপনাদের সম্মান করি। এই অর্ডার বেআইনি। সেই জন্যই চ্যালেঞ্জ করছি।” এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর হুংকার, “আমি এই অর্ডারকে বেআইনি বলছি। বিচারপতিকে নয়। আমরা এটা নিয়ে উচ্চ-আদালতে যাচ্ছি।”
মুখ্য়মন্ত্রী বলেন, “শিক্ষক-শিক্ষিকারা পড়ুয়ারা চিন্তা করবেন না। যখন বিপদে পড়বেন আর কেউ না থাকলেও আমি আছি। আরও একটা কথা বলি। আরও দশ লক্ষ সরকারি চাকরি রেডি।“ গত শনিবার বোমা ফাটানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তাতে তৃণমূল শেষ হয়ে যাবে বলেও দাবি করেছিলেন বিরোধী দলনেতা। সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মমতা সোমবার বলেন, “বোমা ফাটাবেন বোমা। কী বোমা?
২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বোমা। ‘‘বোমা ফাটাবেন, বোমা? ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি চলে যাবে, এমন বোমা! আমিও বলে রাখি, আমরাও লড়ে যাব। লড়াই করব। রায়কে চ্যালেঞ্জ করছি। উচ্চ আদালতে যাব। আশা রাখুন।’’ এখানেই থামেননি মমতা। নাম না করে শুভেন্দুকে আরও কটাক্ষ করেছেন তিনি। কী ভাবে শুভেন্দু সোমবারের রায়ের কথা শনিবার জেনেছিলেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
তাঁর কথায়, ‘‘ধিক্কার জানাই। কোর্ট কী রায় দেবে, তুই আগে জানলি কী ভাবে? সোমবার রায় দেবে, শনিবার জানলি কী ভাবে? যদি রায় নিজেরা লিখে না দিস? রায় নিজেরা তৈরি করে না দিস?’’ মমতা বলেন, “এই একটা হয়েছে না মন্দির না মসজিদ। বিজেপির বিচারালয়। অন্যলোকে পিল করলে দেবে তাকে কিল।
আর বিজেপি পিল করলে ব্যস। বিজেপি পিল করলে বেল। আর অন্য কেউ করলে জেল। এই তো এখানকার অবস্থা।” মমতা এও বলেছেন, “এটা বিচারপতিদের দোষ নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের দোষ। তারা বিজেপির লোক দেখে দেখে এখানে বসিয়েছেন। বিজেপি পার্টি অফিস থেকে যা বলে দেয় যাতে তারা সেই ড্রাফট করে দেয়।”
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “কী করবেন আমায় সাজা দেবেন? মানহানির মামলা করবেন? আমি তৈরি। জেলে পাঠাবেন আমি তৈরি। মানুষের কথা বলার জন্য আমি মাথা পেতে শাস্তি নেব।”