ডিসেম্বরের মধ্যেই ১১ লক্ষ বাংলার মানুষ নিজের বাড়ি বানানোর টাকা পাবেন। আর সেই টাকা দেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। জলপাইগুড়ির প্রচারমঞ্চ থেকে এমনই ঘোষণা করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।জলপাইগুড়িতে মিনি টর্নেডোর তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল বহু এলাকা। তার মধ্যে ময়নাগুড়িও ছিল।
মঙ্গলবার সেই ময়নাগুড়িতই ভোটের প্রচারে এসেছিলেন মমতা। সেখানেই আবাস যোজনার টাকা না পাওয়া এবং ঝড়দুর্গতদের টাকা দিতে কমিশনের বাধা নিয়ে কথা বলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনারা জানেন, ভোট না হলে আমার কাছে এক সেকেন্ডের ব্যাপার ছিল। কিন্তু ভোট চললে আমরা অনেক কিছু করতে পারি না।
কারণ, বিজেপির কমিশন বসে আছে। আমরা ওদের লিখেছিলাম বারবার। যাঁদের বাড়ি ঘর ভেঙে গিয়েছে, তাঁদের ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হোক। যাতে তাঁরা তাঁদের বাংলার বাড়ি পান। কিন্তু কমিশন বলল, ‘না। যা প্রচলিত নিয়ম আছে। তাতেই হবে’।’’ মমতার কথায়, ‘‘ওই নিয়ম অনুযায়ী যাঁদের বাড়ি ভেঙে গিয়েছে, তাঁরা ২০ হাজার পাবেন।
যাঁদের আংশিক ভেঙে গিয়েছে, তাঁরা পাঁচ হাজার পাবেন।’’ তবে এই অর্থে যে কারও বাড়ি বানানো সম্ভব নয়, সে কথাও বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘একটা বাড়ির উপর দিয়ে ঝড় চলে যাওয়া মানে সে বাড়ি উপড়ে ফেলার মতোই অবস্থা। আমি কথা দিচ্ছি, ১১ লক্ষ মানুষের আবাসন এই বছরেই আমরা করব। ডিসেম্বরের আগে তার টাকা রিলিজ করব।
প্রথম কিস্তি। তার মধ্যে আপনাদের বাড়িগুলোও থাকবে। বাড়িটা ভাল করে তৈরি করে নেবেন।’’ কী ভাবে কমিশনের বাধা সত্ত্বেও এই টাকা দেবেন তিনি? মমতা বলেছেন, ‘‘ডিজাস্টারে একটা নতুন রুল আগস্ট মাসে হয়েছে। আমি দেখে নিয়েছি। তাতে ২০ হাজার যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের পরে প্রশাসন ৪০ দেবে।
তার পর বিল পাশ হয়ে গেলে দ্বিতীয় কিস্তিতে আরও ৬০ হাজার পাবেন। তাই ২০ হাজার টাকা যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের কেউ বঞ্চিত হবেন না। মনে রাখবেন, যাঁদের বাড়ি সত্যিই সবটা ভেঙেছে, তাঁরা বাংলার বাড়ির জন্য টাকা পাবেন। যাঁদের আংশিক ভেঙেছে, যাঁরা কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ হাজার পেয়েছেন, আপনাদের বাড়ির জন্যও ‘বাংলার বাড়ি’তে বরাদ্দ থাকবে।’’
তবে উত্তরবঙ্গে এই ঘোষণার পাশাপাশি কিছুটা অভিমানও ঝড়ে পড়েছে মমতার কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের মানুষেরা, জঙ্গলমহলের মানুষেরা মাঝে মাঝেই বিজেপিকে ভোট দিয়ে দিচ্ছেন, ফলে বিজেপি টাকা বন্ধ করে দিচ্ছে। আপনারা বলুন তো, কে এখানে আগে আসত? কোন সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গলমহল হেসেছে? কী পাননি আপনারা! সব দিয়েছি তো।’’
একইসঙ্গে জলপাইগুড়ির সাম্প্রতিক ঝড়ের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি প্রসঙ্গে মমতা মোদিকে নিশানা করে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী এলেন কিন্তু এদের দুঃখের কথা বললেন না। আপনারা বারবার বিজেপিকে ভোট দিয়ে দিচ্ছেন। আর আমাদের টাকাগুলো ওরা আটকে রাখছে।ভোটের বাক্সে আপনাদের অধিকার আছে বিজেপিকে বন্ধ করে দিন।”
একইসঙ্গে তাঁকে উদ্দেশ্য করে ‘চোর, চোর’ স্লোগান তুলেছিলেন একদল বিজেপি কর্মী। তা নিয়ে তুমুল অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। তিনি বলেন, ‘‘আমার গাড়ি দেখে ওরা চোর বলছে। আমি কারও পিতৃদেবের টাকায় এক কাপ চা-ও খাইনি। চাইলে লক্ষ লক্ষ টাকা বেতন, পেনশন নিতে পারতাম। নিই না। কারণ আমার দরকার নেই। আমার দরকার মানুষকে।
কী সাহস ওদের, আমাকে চোর বলছে!” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “আমি ওদের জিভ টেনে নিতে পারতাম। কিন্তু ভোট বলে কিছু বলিনি। আমি নরেন্দ্র মোদি বা অমিত শাহ নই। ওঁরা বলেন বেছে বেছে জেলে পাঠাব। উলটো করে ঝুলিয়ে সোজা করে দেব। আমি সেটা বলব না। জিভ টেনে নিতে পারলেও সেটা করব না।’’