রেড রোডের নমাজেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে এজেন্সি ইস্যু। তোপ দাগলেন এনআইএ-ইডি-সিবিআই নিয়েও।বৃহস্পতিবার খুশির ইদে কলকাতার রেড রোডে নমাজের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।বক্তব্যের শুরুতেই ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানান মমতা।
বলেন, “এটা খুশির ইদ। এটা শত্রুদের বিরুদ্ধে ইদ। এটা সাহসের ইদ। এটা জীবনে আপনাদের এগিয়ে যাওয়ার ইদ। এটা আমাদের সাহস জোগানোর ইদ। এক মাস ধরে রোজা পালনের পরে এরকমভাবে ইদ উদযাপন, তা বড় দৃষ্টান্ত। আমরা একদিন উপবাস করলে তিনদিন খেতে হয়। আর আপনারা এক মাস ধরে রোজা করেন।
আমি ভেবেছিলাম যে গতকাল ইদ পড়বে। আজ উত্তরবঙ্গে অনেক কর্মসূচি আছে। কিন্তু রেড রোডের নমাজের অনুষ্ঠানে না এসে আমি থাকতে পারি না। এটা আল্লাহের আশীর্বাদ। সকলেই আল্লাহের দোয়া চান। সকলের আল্লাহের দোয়া পাওয়ার সৌভাগ্য হয় না। যাঁরা সৎ মানুষ, তাঁরা আল্লাহের দোয়া পান। যাঁরা সৎ মানুষ নন, তাঁরা আল্লাহের দোয়া পান না।”
তার পরেই সেই মঞ্চ থেকেই কেন্দ্রকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এবার নির্বাচনে সকলের বিরুদ্ধে এনআইএ, সিবিআই, ইডি লেলিয়ে দিচ্ছে। এর থেকে ভালো, আমি বলেছি, একটা জেলখানা বানিয়ে দিন। সকলে সেখানে চলে যাবে। কিন্তু ১৩২ কোটি মানুষকে জেলে ভরতে পারবেন তো? আমরা রয়্যাল বেঙ্গল বাঘের মতো লড়াই করি।”
বিজেপিকে নিশানা করে তাঁর অভিযোগ, নির্বাচনের সময় বেছে বেছে মুসলিম নেতাদের ফোন করছে। তাদের টোপ দেওয়ার চেষ্টা করছে।সিএএ প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেন, ‘আমরা ঘৃণা করতে জানি না। আমরা ঘৃণাভাষণ চাই না। আমরা ভাগ বাঁটোয়ারা চাই না। জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) চাই না। আমরা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন চাই না। আমরা চাই যে সকলে যেন একসঙ্গে থাকেন। আমরা জুলুম সহ্য করব না।
আমরা এককাট্টা থাকলে কেউ কিছু করতে পারবেন না। যতক্ষণ আমরা বেঁচে আছি, ততক্ষণ মৃত্যুতে কোনও ভয় নেই।’ সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না, মৃত্যু আমায় ভয় পায়।’ মোদি-শাহকে নিশানা করে মমতার খোঁচা, “জনতার ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। আমরা নাগরিক না হলে আপনারাও নাগরিক নন।” তার পরেই ফের কেন্দ্রীয় এজেন্সি নিয়ে বিজেপিকে তোপ দাগেন মমতা।
ভূপতিনগরের ঘটনার আবহেই কেন্দ্রের শাসকদলকে কটাক্ষ করে বলেন, “চকোলেট বোমা ফাটলেও এনআইএ পাঠিয়ে দিচ্ছে। সবাইকে ইডি-সিবিআইয়ের ভয় দেখাচ্ছে। এজেন্সিকে ভয় পাই না।” বক্তব্যের শেষ দিকে অবশ্য সরাসরি বিজেপির নাম করেই তাদের নিশানা করেন মমতা। বলেন, “বাংলায় আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছি। দিল্লিতে ইন্ডিয়া জোট কী হবে, বুঝে নেব।”
তার পরেই মমতা বলেন, “বাংলায় একটা ভোটও অন্য কাউকে দেবেন না।যতই দুষ্টুমি, চক্রান্ত হোক। যতই রাম-বাম-শ্যাম এক হোক। মনে রাখবেন, আপনাদের ইমানদারি বাংলার মা-মাটি-মানুষকে শান্তিতে রেখেছে। আপনারা শান্তিতে থাকবেন। আপনাদের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। আমরা থাকতে কেউ আপনাদের উপর কোনও অত্যাচার করতে পারবে না।” এর পর মমতা মাইক তুলে দেন অভিষেকের হাতে।
অভিষেক বলেন, ‘‘দিদি যা বলেছেন, তার পর বেশি কথা বলা যায় না। তবু, তিনি যখন বলতে বলেছেন, আমি বলছি। সবাই খুশির ইদে আনন্দ করুন। মনে রাখবেন, যে জল আমরা খাই, তা ভাগ হয় না। যে বাতাসে আমরা নিঃশ্বাস নিই, তা-ও ভাগ হয় না। আমাদের সকলের গায়ে যে রক্ত বইছে, তার রং লাল। কেউ কেউ এই সব কিছুর মধ্যে বিভাজন করতে চাইবে। কিন্তু আপনারা সবাই মিলে তা রুখে দেবেন। বাংলার ঐতিহ্য এই একতা।’’
যদিও রেড রোডে ইদের নমাজের মঞ্চে রাজনৈতিক বক্তব্য রাখায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একযোগে আক্রমণ করল বাম ও বিজেপি।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই বক্তব্যের সমালোচনা করেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও রাজ্যসভায় বাম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘ইদের মতো একটা ধর্মীয় মঞ্চে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে রাজনৈতিক বক্তব্য রাখছেন এতে ইদের মঞ্চকে ছোট করা হচ্ছে।
ইদের মঞ্চ থেকে এই ধরণের কথা বলা উচিত নয়, ধর্মীয় কথাই বলা উচিত। শান্তি সৌহার্দ্যের কথা বলা উচিত। সয়নে – স্বপনে মুখ্যমন্ত্রী যে সব সময় ইডি – সিবিআই দেখছেন, কেন্দ্রীয় এজেন্সি দেখছেন, এর মানে হচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভয় পাচ্ছেন, ওনার কাছের কেউ হয়তো কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে পড়তে পারে। এই ভয় ভালো। চোরেরা যদি ভয় পায় সেটা ভালো জিনিস।’ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোটাকে নষ্ট করতে চাইছেন।
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংস করতে গোটা দেশে মোদীর যেমন একটা ভূমিকা রয়েছে, মমতা পশ্চিমবঙ্গে সেটা ত্বরান্বিত করছেন। মোদীর হাতকে শক্ত করছেন। প্রত্যেকটা কেন্দ্রীয় সংস্থা এখানে আদালতের নির্দেশে তদন্ত করছে। সেই আদালতকেও এখানে অবমাননা করা হচ্ছে। এই ভদ্রমহিলা মারাত্মক ক্ষতি করছেন, গোটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ও সংবিধানের।’