বছরের প্রথম দিকেই সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের বাড়িতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয়েছিল ইডি।সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকল বাংলায়। তা নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি।সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকল বাংলায়। ফের রাজ্যে আক্রান্ত কেন্দ্রীয় এজেন্সি। সন্দেশখালির পর এবার ভূপতিনগর। ভূপতিনগর বিস্ফোরণ মামলার তদন্তে গিয়ে আক্রান্ত হলেন এনআইএ আধিকারিকরা।ভেঙে দেওয়া হল তদন্তকারীদের গাড়ির কাঁচ।দুই এনআইএ আধিকারিক সামান্য আহত হয়েছেন বলেও খবর। ২০২২ সালের ২ ডিসেম্বর পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর ২ ব্লকের ভূপতিনগর থানার অর্জুন নগর গ্রাম পঞ্চায়েতের নায়ড়াবিলা গ্রামে রাত প্রায় ১১টা নাগাদ ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণ ঘটে।সেই ঘটনায় তৃণমূলের বুথ সভাপতি রাজকুমার মান্না, তাঁর ভাই দেবকুমার মান্না ও বিশ্বজিৎ গায়েনের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে এলাকায় যায় পুলিশ। স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে ঘটনার তদন্তভার হাতে নেয় এনআইএ।আদালতের নির্দেশে সেই বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্তে নেমে দফায় দফায় বেশ কয়েকজনকে তলব করা হয়েছে। যদিও কেউ তলবে সাড়া দেননি। সূত্রের খবর, বিস্ফোরণের ঘটনায় ভূপতিনগরের ২ ব্লকের অর্জুননগর এলাকা থেকে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি বলাই মাইতি এবং বুথ সভাপতি মনোব্রত জানাকে তলব করেছিল এনআইএ। কিন্তু তাঁরা নির্ধারিত দিনে হাজিরা দেননি। স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার ভোরে মনোব্রত এবং বলাইয়ের খোঁজে অভিযান চালায় এনআইএ।দু’জনকে গাড়িতে তুলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় কেন্দ্রীয় এজেন্সির গাড়ি ঘিরে ধরেন উত্তেজিত গ্রামবাসীরা। তাঁরা বলাই এবং মনোব্রতকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়ার দাবি করতে থাকেন বলে সূত্রের দাবি। কেন্দ্রীয় এজেন্সির গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলেও অভিযোগ।তদন্তকারীদের লক্ষ্য করে ইট ও পাথর ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। এর জেরে দুই এনআইএ আধিকারিক আহত হয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে। তবে সূত্রের খবর, তাঁদের চোট গুরুতর নয়।গ্রামে অভিযানে যাওয়ার কথা জানিয়ে স্থানীয় থানার কাছে বাহিনী চেয়েছিল এনআইএ। কিন্তু পুলিশ সূত্রে খবর, বাহিনী দেওয়ার আগেই অভিযানে নেমে পড়ে এনআইএ। যদিও এনআইএর সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা ছিল।পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানা যায়।ধস্তাধস্তির পরও এনআইএ অফিসাররা ওই ২ জনকে গ্রেফতার করে কলকাতায় নিয়ে এসে বিকেলে কলকাতার বিচার ভবনে হাজির করানো হয়। তাঁদের পাঁচ দিনের জন্য হেফাজতে নিচতে চেয়ে আদালতের কাছে আর্জি জানায় এনআইএ।এদিকে আক্রান্ত হওয়ার পর এনআইএ অফিসাররা স্থানীয় থনায় যান। পত্রিকাটি মুদ্রণে যাওয়া পর্যন্ত এনআইএর তরফে লিখিত অভিযোগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।এদিকে এই হামলার ঘটনায় একযোগে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলেছে বাম – কংগ্রেস ও বিজেপি।রাজ্য সভাপতি তথা বালুরঘাটের বিজেপি প্রার্থী সুকান্ত মজুমদামজুমদারের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই এই ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিচারব্যবস্থার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি। সুকান্ত বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি ঘটেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে। স্থানীয় মানুষ নন, এঁরা চিহ্নিত তৃণমূল নেতা এবং কর্মী। যে ভাবে একের পর এক কেন্দ্রীয় এজেন্সির উপর আক্রমণ হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গকে দেখে মাঝেমাঝে আমাদের মনে হচ্ছে আফগানিস্তানে পরিণত হয়ে গিয়েছে। আমার মনে হয়, কেন্দ্রীয় সরকার, কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি এবং বিচারব্যবস্থার খুব তাড়াতাড়ি হস্তক্ষেপ করা উচিত। নচেৎ, পশ্চিমবঙ্গ আগামিদিনে ভারতের অঙ্গরাজ্য থাকবে, না কি থাকবে না, তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। বার বার দেশবিরোধী শক্তির সঙ্গে তৃণমূলের নাম জড়িয়ে যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনেরও এই দল সম্পর্কে ভাবা উচিত।’’ রাজ্যসভায় বাম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের আশঙ্কা, “আদালতের নির্দেশে এনআইএ তদন্ত করছে। তখন এই গুন্ডাবাহিনীর কাছে স্পষ্ট বার্তা এই যে, তদন্ত করতে গেলে ভয় দেখিয়ে বার করে দেও। যেটা ঘয়িয়েছিল সন্দেশখালিতে শাহজাহানের ক্ষেত্রে। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যখন হয় তখন বুঝতে হবে এটা একটা সুপরিকল্পিত ব্যাপার। মুখ্যমন্ত্রী নির্লজ্জের মতো যে ভাবে এই ঘটনাকে সমর্থন করলেন, তাতে আরও পরিষ্কার হয়ে গেল, এটা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ও মুখ্যমন্ত্রীর দলের নির্দেশে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করছেন যাতে আইনি সংস্থা বাধ্য হয় নির্দিষ্ট পদক্ষেপ করতে।এনআইএ-এর ওপর আক্রমণ ঘটনার গতিপ্রকৃতি ঘুরিয়ে দিল। তৃণমূল কংগ্রেস যে গুন্ডামি করেছে। নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে সেটা প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হয়ে গেল।” লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, “আক্রমণকারীদের বাঁচানোর জন্য এসব করছেন। পশ্চিমবঙ্গে সমস্ত আক্রমণ হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে। যেমন সন্দেশখালি হয়েছিল, তেমন ভূপতিনগর। সারা বাংলার রাজনীতির পরিস্থিতি নির্বাচনের আগে তপ্ত হবে। পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন নিরব থাকবে। তৃণমূল গুন্ডারাজ কায়েম করে ভোট করার চেষ্টা করবে।” যদিও গোটা বিষয়টিকে ভোটে জিততে বিজেপির চক্রান্ত বলে অভিহিত করেছে তৃণমূল। রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘ভূপতিনগরের ঘটনা অবাঞ্ছিত, অনভিপ্রেত। কিন্তু এর পিছনে একটি গভীর প্রেক্ষিত কাজ করছে। সিবিআই, ইডি, এনআইএ— এগুলিকে ব্যবহার করছে বিজেপি। আমাদের কাছে অভিযোগ ছিল, কিছু দিন আগে বিজেপির নেতারা এনআইএর এক অফিসারের সঙ্গে বসে নাম ঠিক করে দিচ্ছেন। তৃণমূলের নেতাদের, সংগঠকদের ধরতে হবে, সমন পাঠাতে হবে। যে অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে, তা তো বিজেপির বানানো। তৃণমূল কর্মীদের নাম দিয়ে দিয়ে অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে। ফলে যখন সাতসকালে, কাকভোরে বহিরাগত অনেকে যখন তাঁদের ধরতে যাচ্ছে, স্বাভাবিক ভাবেই এলাকায় একটা উল্টো স্পন্দন ঘটছে। আমরা বলছি, এই ঘটনা অবাঞ্ছিত। কিন্তু এর পিছনে একটা অঙ্ক কষা দাবার বোর্ড রয়েছে।’’ পাশাপাশি এই ঘটনার নিন্দা করেছে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।অন্যদিকে, এই হামলার ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা নির্বাচন দফতর থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জেলা পুলিশ সুপারকেও এ নিয়ে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে।
তদন্তে গিয়ে এবার আক্রান্ত এনআইএ, গ্রেফতার ২
Html code here! Replace this with any non empty raw html code and that's it.