গত ৩ বছরে বাংলাকে আবাস যোজনা এবং ১০০ দিনের কাজ বাবদ কত টাকা দিয়েছে তার শ্বেতপত্র প্রকাশ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।এবার প্রধানমন্ত্রীকে শ্বেতপত্র প্রকাশের চ্যালেঞ্জ দিলেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।শুক্রবার তুফানগঞ্জের সভায় বিজেপিকে কটাক্ষ ছুঁড়ে মমতা বলেন, “তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমরা আজ দুর্নীতিবাজ বটে। আমি ১১ লক্ষ বাড়ির লিস্ট দিয়েছিলাম। এই যে বাড়িগুলো ভেঙে গেল, ৬ লক্ষ বাড়ি এই ১১ লক্ষ বাড়ির লিস্টে ছিল। তুমি বলছ, দুর্নীতি হয়েছে। সাহস থাকলে শ্বেতপত্র প্রকাশ করো। চ্যালেঞ্জ করে যাচ্ছি, বাংলায় কী দুর্নীতি হয়েছে, উত্তরপ্রদেশে কী দুর্নীতি হয়েছে, গুজরাটে কী দুর্নীতি হয়েছে সামনে আনুন।” দুর্নীতি নিয়ে মমতার বক্তব্য, “এখানে সব পঞ্চায়েত তো আমাদের নয়। কোথাও কোথাও কেউ ‘দুষ্টুমি’ করে থাকতে পারে। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন আর কোনও অভিযোগ নেই। তাও তুমি ৩ বছর টাকা আটকে রেখেছে। তা সত্ত্বেও ৭০ হাজার কোটি টাকার উপর আমরা বাংলায় খরচ করেছি। কোটি কোটি মানুষকে কাজ দিয়েছি।” মুখ্যমন্ত্রীর আক্ষেপ, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে আশ্বাস দিয়েও সে কথা রাখেননি।মমতা বলেন, “এই যে ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রাখলে। দিলে না। আমি নিজে দেখা করলাম তিন বার দিল্লি গিয়ে। কথা দিলে দেবে। ৩৫৫টা টিম পাঠালে ১০০ দিনের কাজ, আবাস আর রাস্তা দেখার জন্য। তাঁদের রিপোর্ট প্রকাশ করো। প্রকাশ করো উত্তরপ্রদেশ, গুজরাটের রিপোর্ট, প্রকাশ করো বিজপি শাসিত রাজ্যের রিপোর্ট। শুধু উত্তরপ্রদেশে ৮৫ লক্ষ দুর্নীতির কেস হয়েছে। বাংলাকে দুর্নীতির কথা বলবে না। বাংলা সবার থেকে এগিয়ে। বাংলা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।” বৃহস্পতিবার প্রথম বাংলায় এসে প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়েছিলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেসের মতো দলগুলি মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “সব পরিবারকে নাগরিকত্ব দেওয়া মোদির গ্যারান্টি।” মোদির সেই মন্তব্যের জবাব শুক্রবার তুফানগঞ্জ থেকে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।মানুষকে সতর্ক করে তাঁর বার্তা, “ওরা সিএএ চালু করেছে আপনাদের বিদেশি বানাবে বলে। বিষয়টি যদি এতই ভালো হয়, তবে বিজেপির প্রার্থীরা কেন সিএএ-তে আবেদন করছে না?” নিজেই এর উত্তর দিয়ে মমতা বলেন, “কারণ সিএএ হল মাছের মাথা। এর লেজটা এনআরসি। আবেদন করলেই আপনি বিদেশি হয়ে যাবেন। পাশের রাজ্য অসম দেখেছেন, কত লোক মারা গেছে দাঙ্গায়? ওখানকার মতোই ডিটেনশন ক্যাম্পে আপনাকে রেখে বলা হবে, বাংলাদেশ থেকে আপনার বাবা-মায়ের সার্টিফিকেট নিয়ে আসুন। পারবেন তো আনতে?” এর পরই কেন্দ্রের মোদি সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মমতা বলেন, “এনআরসি আমরা মানব না। আমি থাকতে, আমাদের সরকার থাকতে এনআরসি করতে দেব না। সিএএ করতে দেব না। আমি নাগরিক। আপনারা সকলে নাগরিক। আপনাদের ভোটে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী তৈরি হয়। যারা ১০ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী হয়ে বসে আছে, তারা কীভাবে বলে আপনি নাগরিক নন।” বৃহস্পতিবার কোচবিহারের সভা থেকে সন্দেশখালি নিয়ে রাজ্যকে তোপ দেগেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এদিন তার পালটা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “সন্দেশখালি কিন্তু সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রাম নয়। আমাদের পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছেন। যাঁরা জমি জায়গা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন, তাঁদের সব ফেরানো হয়েছে।” এর পরই হাথরাস ও বিলকিস প্রসঙ্গ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। সরাসরি নিশানা করেন মোদিকে। বলেন, “সন্দেশখালিতে কিন্তু একজনও মারা যায়নি।” সভা থেকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “খুন করত বলে তাড়িয়ে দিয়েছি। আমরা শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করেছি। তাহলে নিশীথ কীভাবে কেন্দ্রের মন্ত্রী হলেন? এত কেস থাকলে কেউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পারে কি?” এদিন তুফানগঞ্জের সভা সেরে জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের জলপাইগুড়ির এবিপিসি মাঠে সভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভা থেকে জলপাইগুড়ির ঝড় নিয়ে মোদীকে আক্রমণ করেন মমতা।বলেন, ‘‘এই তো মোদী এসেছিলেন! কিন্তু একটি কথাও বলেননি জলপাইগুড়ির ঝড় নিয়ে। কী করে বলবেন। সময় ছিল না। এখানকার মানুষকে তিনি ভুলে গিয়েছেন।’’ জলপাইগুড়ির ঝড়ে আক্রান্ত মানুষের জন্য টাকা দিয়ে সাহায্য করতে পারছেন না, তা নিয়ে আফশোস করেন মমতা। বললেন, ‘‘ঝড়ের টাকা দিতে পারছি না কমিশন অনুমতি দিচ্ছে না বলে। টাকা রেডি আছে। কমিশন বললেই দিয়ে দেব। কিন্তু বিজেপি তা করতে দেবে না।’’ মমতা বলেন, ‘‘মোদী তো গ্যারান্টির কথা বলেন। জলপাইগুড়িতে যারা ঘর হারিয়েছে , তাদের জন্য গ্যারান্টি কোথায়। ঝড়ের সময় তোমরা আসবে না, আর গ্যারান্টির দাবি করবে। মনে রাখবেন গ্যারান্টি যদি কারও কাজ করে, তবে সেটা আমাদের গ্যারান্টি।দিল্লিতে কী হবে বাংলা ঠিক করে দেবে। বাংলাই তৈরি করবে ইন্ডিয়া।’’ অনুব্রতর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন অভিষেক।জলপাইগুড়ির মঞ্চে দাঁড়িয়ে অনুব্রতর পাশে থেকে মমতা বলেন, ‘‘ ওরা যা আইন করেছে, তাতে বলা হয়েছে, যেকোনও সময় যেকোনও কাউকে গ্রেফতার করা যাবে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করে নিয়েছে। আমাদেরও কেষ্টকে গ্রেফতার করে নিয়েছে। ’’ এনআইএ তদন্ত তিনি বলেন, “মুসলিম দেখলেই গা কাঁপে ওদের একটু বেশি। রামনবমী নিয়ে নিজেরাই দাঙ্গা করল, তাতে এনআইএকে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমার কাছে ডকুমেন্ট আছে, বিজেপির নেতা জিতেন তিওয়ারি এনআইএ এসপির সঙ্গে মিটিং করছে। আমরা তার কমপ্লেন পাঠিয়েছি।এখানকার বিজেপি নেতারা বলে দেবেন, ওঁর বাড়িতে ইনকাম ট্যাক্স রেড কর, এর বাড়িতে ইডি কর, ওর বাড়িতে সিডি কর, তৃণমূল কংগ্রেস করলেই সব চোর। আর তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে! তোমার পকেট ভর্তি কালো টাকায়। তোমার সারা শরীর ঢেকে গিয়েছে কালো টাকায়।” সিপিএম, কংগ্রেস আর আইএসএফকে বিজেপির সঙ্গে এক বন্ধনীতে রেখে মমতা বলেন, ‘‘একটা মুসলিম পার্টি আছে। তারা বিজেপির শাগরেদ। মনে রাখবেন দিল্লিতে আমরা বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’য় আছি। কিন্তু বাংলায় একটা ভোটও অন্য পার্টিকে দেবেন না। ভোট ভাগ করবেন না।’’ পাশাপাশি এদিনের সভা থেকে অভিজিৎ গাঙ্গুলির নাম না করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “দেখলেন না একজন বিচারপতি চেয়ারে বসে কী কী করলেন।বিচারপতির আসনে বসে অনেকের চাকরি খেয়েছেন। এখন তৃণমূল নাম করে যা খুশি বলে বেড়াচ্ছেন। এবার কিন্তু আপনার বিচার হবে। জনগণ আপনার বিচার করবে জনগণের আদালতে। এটা জনগণের আদালত। আমি তাই আপনার বিরুদ্ধে ছাত্রনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করেছি। আমি চাই দেবাংশু ছুটে ছুটে আপনাকে হারাক। আপনি হারুন জনগণের ভোটে।”
এবার মোদিকে শ্বেতপত্র চ্যালেঞ্জ মমতার
Html code here! Replace this with any non empty raw html code and that's it.