স্টাফ রিপোর্টার: বুধবার বিকেল থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বসিরহাটের সন্দেশখালি থানার ত্রিমোহিনী থেকে কাহারপাড়া, দাশপাড়া ও পাত্রপাড়ার মতো একাধিক গ্রাম।বৃহস্পতিবার ফের নতুন করে উত্তপ্ত ছড়াল সন্দেশখালিতে। শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারদের গ্রেফতারির দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পথে বেরিয়ে পড়েন সন্দেশখালির মহিলারা।
হাতে লাঠি, বাঁশ নিয়ে তাঁরা সন্দেশখালি থানা অভিযানে যান। কিন্তু পুলিশ থানার আগেই তাঁদের আটকে দেয়। প্রতিবাদে রাস্তায় বসে পড়েন মহিলারা। পুলিশ এসে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি। উল্টে, ক্ষোভের পারদ আরও মাথাচাড়া দেয়।গ্রামবাসীদের অভিযোগ, শাহজাহান, শিবু, উত্তমরা গ্রামবাসীদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালাতেন। কখনও গ্রামের রাস্তা বন্ধ করে আবার কখনও চাষের জমি কেড়ে নিয়ে তাতে মাছের ভেড়ি বানাতে সিদ্ধহস্ত শিবু, উত্তমরা।
এমন কি খেলার মাঠকে পুরোপুরি কেটে রাতারাতি ভেড়ি বানিয়ে দেওয়ার কীর্তিও রয়েছে এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতাদের ঝুলিতে। তাঁদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলেই জুটত বেধড়ক মার। বহিরাগত দুষ্কৃতীদেরও গ্রামবাসীদের উপর লেলিয়ে দিতেন শাহজাহানরা, বলে অভিযোগ গ্রামের মহিলাদের। কিন্তু শাহজাহান পালাতেই ভয় ঝেড়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা নিজেদের তৃণমূলের সমর্থক হিসাবে পরিচয় দিয়ে এলাকায় তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতারির দাবিতে বৃহস্পতিবার পথে নেমেছেন।
গ্রামবাসীদের আরও অভিযোগ, “আমাদের ছোটো ছোটো বাচ্চাদের ডেকে নিয়ে বলছে রাজনীতি করতে হবে। রাজনীতি না করলে ভাত হবে না তোদের। ভাত দিচ্ছে তো দিদি। তাহলে রাজনীতি না করলে ভাত পাবি কোথা থেকে?আমাদের বাচ্চাগুলোকে স্কুল থেকে নিয়ে গিয়ে ডান হাতে বন্দুক আর বাঁ হাতে মদের বোতল দিয়ে দিচ্ছে। এবার বলে তোর মাকে মার, তোর বাবাকে মার, কোনও পরিচিত নেই, যাকে ইচ্ছা তাকে মারার নির্দেশ দিত ওরা।
আমাদের বাচ্চাগুলোকে বলা হয়, চল ঘর ভাঙতে যেতে হবে, চল ওকে মারতে হবে, জমি আদায় করে নিতে হবে। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর। বেশি কথা বললে, পুরুষ মানুষকে তুলে নিয়ে এসে কোদালের বাঁট দিয়ে মারছে।” বুধবারও গণরোষ আছড়ে পড়েছিল সন্দেশখালিতে। গ্রামবাসীরা তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি উত্তমকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। বৃহস্পতিবার সকালে সেই গ্রামবাসীরাই দাবি করছেন, পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হলেও এখনও উত্তমকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও সেই তালিকায় শিবু, উত্তমদের নাম নেই বলে দাবি বিক্ষোভকারী গ্রামবাসীদের। পত্রিকাটি মুদ্রণে যাওয়া পর্যন্ত পুলিশ উত্তেজিত মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছে।পুলিশ কর্তা তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, “কেস হয়েছে, গ্রেফতার হয়েছে?” উত্তর দিতে পারেননি পুলিশ কর্তা। পুলিশকে ঘিরে রাখেন গ্রামের মহিলারা।
যদিও তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। বুক চিতিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন।মহিলারা চান, দ্রুত গ্রেফতারি।সন্দেশখালির মহিলাদের এখন একটাই দাবি। তাঁরা শান্তি চান। যদিও তৃণমূলের একাংশ এটাকে জনরোষ বলতে নারাজ। তাঁদের দাবি, এর পেছনে বিজেপি ও সিপিএম ষড়যন্ত্র করে এই কাজ ঘটাচ্ছে। তবে গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, তারা তৃণমূল করেন কিন্তু অত্যাচারী তৃণমূল নেতাদের বিপক্ষে তারা জড়ো হয়েছেন।
এদিকে এই সন্দেশখালি বাংলায় পথ দেখাবে বলে দাবি করছে বিরোধীরা।এই ঘটনায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “এই দিন বেশিদিন বাকি নেই। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের মানুষ চোর চোর বলে ধাওয়া করবে।সন্দেশখালি বাংলায় পথ দেখাবে।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “সন্দেশখালির মানুষই তো বলতে পারবে, কেন তাঁরা ঝাঁটা লাঠি নিয়ে তাড়া করছেন!
তাঁরা অতিষ্ঠ, লুঠ-সন্ত্রাসে। শাহজাহান সরকারের লোক কি শাহজাহানকে ধরবে?” সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “তৃণমূল নেতারা বাহিনী নিয়ে আক্রমণ করেছে, তাই মানুষ আজ রুখে দাঁড়িয়েছে। সর্বত্র মানুষ ফুঁসছে।”