রবীন্দ্রনাথ মন্ডল ও গোপাল মন্ডল, গঙ্গাসাগর : এবারের গঙ্গাসাগর মেলাতে পুণ্যার্থীদের জনস্রোত, এমনটাই জানালেন রাজ্যের মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস।রবিবার দুপুর পর্যন্ত সাগরমেলায় ৬৫ লক্ষ পুণ্যার্থীর সমাগম হয়েছে। বাকি রয়েছে আরও তিন দিন। এবারের মেলায় ভিড়ের নয়া রেকর্ড হবে বলে অনুমান জেলা প্রশাসনের।
শাহি স্নানের যোগ রবিবার রাত ১২টা ১৩ মিনিট থেকে শুরু হচ্ছে। চলবে পরের দিন বেলা ১২ টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে গঙ্গাসাগর মেলায় পৌঁছে গিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস, সুজিত বসু, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, স্নেহাশীষ চক্রবর্তী, বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা, পুলক রায়, পার্থ ভৌমিক ও ইন্দ্রনীল সেন।
পুণ্যার্থীদের সুবিধার জন্য এই বছর দশ হাজারেরও বেশী শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। বাবুঘাট থেকে কাকদ্বীপের লট নম্বর আট ও কচুবেড়িয়া থেকে সাগরমেলা পর্যন্ত আড়াই হাজার অতিরিক্ত বাস চালানো হচ্ছে। নদীতে চালানো হচ্ছে ৩৮টি ভেসেল, ৬টি বার্জ ও ১১০টি লঞ্চ। কাকদ্বীপের লট নং আট, কচুবেড়িয়া, বেনুবন মিলিয়ে এবার ২২টি জেটি করা হয়েছে।
রবিবার রাতভর পুণ্যার্থীরা আসার কারণে চাপ বাড়বে প্রশাসনের। সেজন্য ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য কলকাতা থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত একাধিক বাফার জোন করা হয়েছে। পুণ্যার্থীরা এখানে বিশ্রাম নিতে পারবেন। এদিন পর্যন্ত সাত জন পুণ্যার্থীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় জন্য হেলিকাপ্টারে করে কোলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
গঙ্গাসাগরে আসার পথে দুইজন পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়েছে। অপরাধ মূলক কাজের জন্য ২৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মোট ২৮৪৬ জন নিখোঁজ হয়েছিল, তার মধ্যে ২৮১০ জনকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। তাঁদেরকে পরিবারের কাজে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। অপরাধ দমনে ১৮টি বিশেষ টিম রাখা হয়েছে। মোট ১৪ হাজার পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
সমস্ত পয়েন্টে ৪৩টি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। সবমিলিয়ে ২০২৪ সালের গঙ্গাসাগর মেলা অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে, এমনটাই মনে করছে জেলা প্রশাসন। এছাড়াও গঙ্গাসাগর মেলায় বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মেলাকে পরিবেশ বান্ধব ও প্লাস্টিকমুক্ত ‘গঙ্গাসাগর মেলা-২০২৪’ সফল রুপায়ণের স্বার্থে গঙ্গাসাগর- বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রচার অভিযান কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।
যেমন পদযাত্রা, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, একক ব্যবহার্য প্লাস্টিক বর্জনের বার্তা নিয়ে ট্যাবলো। এছাড়াও বিনামূল্যে পরিবেশ বান্ধব সামগ্রীও তীর্থযাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরন করা হয়। ২নং সমুদ্রতটে পরিবেশ মেলার উদ্বোধন হয়েছে গত ১১ জানুয়ারি।
গঙ্গাসাগর মেলাকে তথা সাগর তটভূমির পরিবেশ রক্ষা জনিত সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কপিল পেট্রোল পাম্প থেকে ৫নং তটভূমি পর্যন্ত রান ফর ক্লিন গ্রীন গঙ্গাসাগর’ নামে দক্ষিণ ২৪ পরগণা প্রশাসন, পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে এক বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। এবং ৫নং তটভূমি সাফাই কর্মসূচীও পালন করা হয়।
গঙ্গাসাগর মেলার সময় সমুদ্রতট পরিস্কার রাখার জন্য ১ হাজারেরও বেশি সৈকত প্রহরী নিযুক্ত করা হয়েছে। মেলায় ব্যবহৃত কঠিন আবর্জনা নিরাপদে নিষ্কাশনের উদ্দেশ্যে ২০ জন সুপার ভাইজারের নেতৃত্বে ২০০ জন প্রশিক্ষিত কর্মীর দ্বারা ৭টি অস্থায়ী কঠিন আবর্জনা নিষ্কাশন ইউনিট ও পচনশীল আবর্জনা শ্রেডার স্থাপন করা হয়েছে।
পুণ্যার্থীদের ফেলে দেওয়া পোশাক থেকে বসার আসন ও পাপোষ এবং কাচের বোতল, প্লাস্টিকের বোতল, ইত্যাদি থেকে বিভিন্ন উপহার প্রস্তুত করার জন্য ৪নং রাস্তার ধারে লাইভ ওয়ার্কশপ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও পচনশীল আবর্জনাকে থেকে ‘জৈব সার’ তৈরি করা হয় যার নাম ‘মৃত্তিকা মিত্র’।
গঙ্গাসাগর মেলা-২০২৪ এর কঠিন আবর্জনা নিরাপদ নিষ্কাশনের উদ্যোগ গুলির মধ্যে দিয়ে আনুমানিক ১৫০০ পরিবারের জীবন ও জীবিকার মনোন্নয়ন ঘটেছে।