অনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: সংক্রমণ এর কারণ যাচাই না করে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই এখন অধিকাংশ মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাচ্ছেন। ফলে এমন অহেতুক ওই ধরণের ওষুধ খাওয়ার ফলে ভবিষ্যতে এই শরীরের ক্ষতি হতে বাধ্য। এ সম্পর্কে শিক্ষিত ও পড়াশুনা কম জানাদের মানসিকতা এক। কলকাতা কিংবা বাইরের কোনও শহর ও গ্রামীণ এলাকায় গেলে এই ছবিটাই দেখতে পাওয়া যায়।
ওষুধের দোকানগুলিতেও এ ব্যাপারে জানা থাকলেও বিক্রি বেশি হবে এই লোভে ক্রেতারা এসে চাইলে দিয়ে দিচ্ছে। কখনও ক্রেতারা এসে বলছেন, তাঁর জ্বর , সর্দি ও ব্যাথা। কি খেলে কমতে পারে। দোকানদার সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের পাতা বের করে দিলেন। বললেন, এটা খাও। কমে যাবে। একবারের জন্য বললেন না আগে চিকিৎসক কে দেখান। তারপর ওষুধ দিতে পারব।
এইভাবে মুড়ি মুড়কির মতো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনের ফল যে মারাত্মক হতে পারে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এর উপর সমীক্ষা করেছে। তাতেই উঠে এসেছে ভয়ঙ্কর সব তথ্য। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রক ” ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিসিস কন্ট্রোলের” দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে ১০ হাজার রোগীদের মধ্যে ৯৪ শতাংশ রোগী সংক্রমনের ভয়ে বা সেই রোগের লক্ষণ দেখেই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলেন ।
তা সে ডাক্তারের দেওয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী হোক বা নিজের একক মতে হোক। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে এর মধ্যে ১৫ টি রাজ্যের কিছু নামী হাসপাতালের নাম রয়েছে । যার মধ্যে প্রতিবছর ১১,৫৮৮ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয় । সেখানেই ৯৬৫২ রোগীর মধ্যে ৭২ শতাংশ রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় । যার মধ্যে আবার ৪৫ শতাংশ রোগীকে রোগ নির্ধারণের পরে এবং বাকি ৫৫ শতাংশ রোগ প্রতিরোধের জন্য বা সংক্রমনের বিস্তার রোধ করবে বলে দেওয়া হয়।
এই বিষয় নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে জনস্বাস্থ্যের জন্য এই অ্যান্টিবায়োটিক একটি ভয়ানক হুমকি যা পরবর্তীকালে মারণ রোগের আকার নিতে পারে । তার কারণ স্বরূপ এরা জানাচ্ছে যেহেতু ব্যাকটেরিয়া নানান কারণে বিকশিত হচ্ছে, এই জন্য আমাদের শরীর সব ধরণের অ্যান্টিবায়োটিকের ধাক্কা সহ্য করতে পারছে না। ফলে দুর্বল হয়ে পড়ছে । পরিণতি প্রকৃত চিকিৎসার জন্য যে সকল ওষুধ দেওয়া হচ্ছে তখন সেগুলি শরীরের উপরে কাজ করতে পারছে না।
কারণ সাধারণ মানুষ প্রেসক্রিপশন ছাড়া যে সকল অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে, তার সাথে মোকাবিলা করা ও কঠিন হয়ে উঠছে। এই কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হাসপাতালের নির্ধারিত অ্যান্টিবায়োটিক এর ব্যবহারের উপর যে পরিবর্তন ঘটছে সেটিরও একটি সমীক্ষা করেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে হাসপাতাল থেকে ৩৭ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। কিন্তু প্রেসক্রিপশনের বাইরে ও অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হয় ১০০ শতাংশ। “
ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল” সংস্থাটির মূল কিছু কাজের মধ্যে একটি হল অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের উপর নজরদারি করা। এর জন্য কিছু নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান আছে যা এই তথ্য তাদের প্রদান করে । তার উপরে ভিত্তি করেই সংশ্লিষ্ট রাা জানিয়েছে আগামী ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে মানব শরীরের উপর অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে।
নানান ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে অ্যান্টিবায়োটিক শরীরের মধ্যে গেলেও তা শরীরের মধ্যেই জমা হবে। যার ফলে নানা রকমের রোগ (যেমন ক্যান্সার) দেখা দিতে পারে। তাই প্রেসক্রিপশন ছাড়া বা ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া যে কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক কেনা এবং বিক্রি করা উপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিয়ম লাগু করা উচিত।