অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: ‘আগামী লোকসভা ভোটের ঠিক আগে সাংসদ সদস্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
ঘোষণা করেছেন, তিনি এবার শুধু ডায়মন্ডহারবার নিজের কেন্দ্রে মনোনিবেশ করবেন। এর বাইরে কোথাও প্রচার ও
অন্য কোনও কর্মসূচিতে যাবেন না।’ এটা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে রাজ্য জুড়ে চর্চা চলছে। শোরগোল পড়েছে।
এটা নিয়ে বিরোধী দল বিজেপি ও সিপিএম প্রচারে নেমে পড়েছে। তা হল, অভিষেক ভয় পেয়েছেন বলে এখন নিজের কেন্দ্র
ছেড়ে যেতে চাইছেন না। শাসকদলের অন্দরে ও বাইরেও শোনা যাচ্ছে নানা মত। কেউ বলছে, শারিরীকভাবে অসুস্থ বলে
এমন বলেছেন সাংসদ। কেউ বলছেন, আসলে চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছে, খুব বেশি ধকল হয় এমন কাজ করবেন না।
সেই কারণে সাংসদ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভিন্ন মত যাই থাকুক, এটা আমজনতার কাছে বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তিনি দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড হয়ে ঠিক লোকসভা ভোটের মুখে কেন আচমকা এমন
ঘোষণা করলেন অভিষেক। কি এমন ঘটনা ঘটল যে, এত বড় স্পর্শকাতর বিষয় জেনেও তিনি চেপে রাখতে পারলেন না?
তা হলে কি দলের কারও সঙ্গে বড় কোনও মতান্তর হয়েছে? যারজন্য অভিষেক নিজেকে নিজের কেন্দ্রে গুটিয়ে রাখার
কথা ভেবেছেন। রাজনৈতিক ওয়াকিবহালের মত হল, এখন তৃণমূল দলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর
সেকেন্ড ইন কমান্ড হচ্ছেন অভিষেক। সংগঠন ও প্রশাসনের অধিকাংশ ক্ষেত্রে কার্যত তিনিই শেষ কথা বলেন।
ফলে তাঁর উপর কেউ কথা বলার সাহস রাখে না। তাই সংগঠনের ভিতর কোথাও কারও সঙ্গে সংঘাতের কোনও অবকাশ
নেই। একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী র সঙ্গে যদি কোনও বিষয় নিয়ে মন কষাকষি হয়ে থাকে, তাহলে এমন একটা পরিস্থিতি
তৈরি হতে পারে। বেশ কয়েক বছর আগে মুকুল রায় যখন দলে সর্বাধিনায়ক ছিল, তখন এমন একটা পরিস্থিতি
হয়েছিল।
কিন্তু তারপর এখন দল ও সংগঠনে অভিষেক হল মূল মাথা। সেখানে এমন কেউ নেই যার প্রতি তাঁর অভিমান
হতে পারে। শাসকদলের একটি অংশের কথায়, আসলে ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্র নিয়ে অভিষেক এবার
যারপনাই চিন্তিত। তাঁর উদ্বেগ বাড়িয়েছে ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি যখন থেকে ঘোষণা করেছেন, তিনি এবার
ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হবেন।
আর সেটা অভিষেকের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে দল এ নিয়ে একটি সমীক্ষা করিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, নওশাদ প্রার্থী হলে তৃণমূলের একচেটিয়া সংখ্যালঘু ভোটে ভাঙন হয়ে যাবে। এমনিতে নওশাদ হলেন একজন ধর্মীয় গুরু। স্বাভাবিকভাবে সংখ্যালঘুরা যতই তৃণমূল অনুগত থাকুক, ধর্মীয় গুরু প্রার্থী হলে তখন ভোটের স্রোত অভিষেকের দিক থেকে নওশাদ সিদ্দিকির দিকে ঘুরে যেতে পারে।
শুধু তাই নয়, এক্ষেত্রে বিজেপি এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভোট ব্যাঙ্ক এ আরও ভাঙন ধরিয়ে দিতে পারে। কারণ, বিগত কয়েকটি লোকসভা ভোটে সংখ্যালঘু ভোট অভিষেকের দিকে গিয়েছে। কারণ, তখন এইভাবে কোনও সংখ্যালঘু ধর্মীয় গুরু এখান থেকে প্রার্থী হয়নি। এবার যদি তা হয়, তা হলে সংখ্যালঘুদের ভোট কাটাকাটির জেরে বিজেপি র ফায়দা হবে।
বিপদে পড়তে পারে তৃণমূল। সেই কারণে অভিষেক এবার কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না। যদিও তাঁর নির্দেশে অনেক আগে থেকে বাড়ি বাড়ি জন সংযোগ, বাধ্যর্ক্য ভাতার আবেদন পত্র সংগ্রহ থেকে আরও একাধিক কাজ চলছে। ভোটারদের ভিতর যাতে
বিরোধী দল কোনও ভাবে দাগ কাটতে না পারে তারও চেষ্টা চলছে প্রতিদিন।