বিশ্ব সমাচার, গোসাবা: দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত সুন্দরবনে গোসাবা ব্লকের বালি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের গোমর নদীর তীরে মথুরাখণ্ড গ্রামে বুধবার দুপুরে ব্যাঘ্রবিধবা মা ও তাঁদের শিশুসন্তাদের নিয়ে বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠিত হল। এলাকার প্রায় শতাধিক বিধবা মা ও তাঁদের সন্তানরা উপস্থিত ছিল এই অনুষ্ঠানে।
উল্লেখ্য, সুন্দরবনের গহীন জঙ্গল পীরখালিতে সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের আনাগোনা রয়েছে। ঠিক তার বিপরীত দিকে গ্রাম মথুরাখণ্ড। জীবনজীবিকার তাগিদে পরিবারের সকলের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার জন্য এই গ্রামের পুরুষরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে যান মাছ, কাঁকড়া, কাঠ এবং মধু সংগ্রহের জন্য। অনেকে হাসি মুখে ফিরতেন।
অনেকেই আবার বাঘের আক্রমণে চিরতরে হারিয়ে গেছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীর এমন করুণ পরিণতিতে অসহায় হয়ে পড়ে তাঁর পরিবার। এই মথুরাখণ্ড গ্রামে এমন পরিবারের সংখ্যা শতাধিক।গোসাবা, বালি, আমলামেথী, মথুরাখণ্ড, সত্যনারায়ণপুর, কুমিরমারী, ঝড়খালি, লাহিড়ীপুর, সাতজেলিয়ার অসংখ্য মানুষ প্রতিনিয়ত জীবন সংগ্রাম লড়াই চালিয়ে কীভাবে বেঁচে রয়েছে,
তা নিজের চোখে উপলব্ধি করেছেন বিশিষ্ট সমাজসেবী তথা বাসন্তী হাইস্কুলের শিক্ষারত্ন প্রাপ্ত প্রাক্তন শিক্ষক অমল নায়েক। সেই কারণে তাঁদের দুঃখ, দুর্দশার করুণ মর্ম বেদনায় অংশীদার হয়ে বাঘ কিংবা কুমিরের হাতে নিহতদের পরিবারগুলির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এযাবৎ প্রায় ৩০০ মহিলাকে স্বনির্ভর করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন অমলবাবু।
পাশাপাশি শতাধিক শিশুর পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়ে কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাক্তন শিক্ষক অমল নায়েক। ২০১৪ সালে তিন গঠন করেন ‘সেভ টাইগার অ্যাফেক্টেড ফ্যামিলি (স্টাফ)’। চলতি বছরের শারদোৎসবের আগেই জেলার বিভিন্ন প্রান্তের এই সমস্ত দুঃস্থ পরিবারগুলির হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন।
পুজো ভালো কাটলেও অসহায় দরিদ্র ব্যাঘ্রবিধবা পরিবারগুলির কথা মনে পড়তে দশমীর সকালে তাঁর হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। সিদ্ধান্ত নেন, ব্যাঘ্রবিধবা মায়েদের নিয়ে বিজয়া সম্মিলনী করে মিষ্টিমুখ করাবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। বুধবার দুপুরে রওনা দেন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপ মথুরাখণ্ড গ্রামে।
তাঁর সঙ্গে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপে রওনা দেন অধ্যাপক ডঃ অভয় মণ্ডল, বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব তথা চলচিত্র পরিচালক জয়শ্রী ভট্টাচার্য, চিত্রশিল্পী সুস্মিতা ভট্টাচার্য, সমাজসেবী অর্ঘ্য নায়েক সহ অন্যান্য বিশিষ্টরা।সেখানে শতাধিক ব্যাঘ্রবিধবা মা ও তাঁদের সন্তানদের মুখে মিষ্টি তুলে দিয়ে পালন করেন বিজয়া সম্মিলনী।
পাশাপাশি ৬০ জন মায়ের হাতে তুলে দেন শীতের চাদর। ব্যাঘ্রবিধবা মা ললিতা মণ্ডল, দুর্গামণি দাস, বন্যা রাধিকারা জীবনে প্রথম বিজয়া সম্মিলনীর স্বাদ পেয়ে খুশি হন। বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব তথা চিত্র পরিচালক জয়শ্রী ভট্টাচার্য বলেন, অমলবাবুর ডাকে সাড়া দিয়ে এমন জীবন্ত দুর্গা মায়েদের নিয়ে বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে এসে নিজেকে ধন্য মনে হয়েছে।