রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল, নামখানা: সোমবার ছিল তেভাগা আন্দোলনের ৭৬ তম বর্ষপূর্তি উদযাপন। আট বীরের স্মরণে দিনটি উদযাপন করা হয় সারা ভারত কৃষকসভার পক্ষ থেকে। এদিন শহীদ বেদীতে মাল্যদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার কৃষক সমিতির সম্পাদক অলোক ভট্টাচার্য বলেন, এই চন্দনপিড়ির মাটিতে তেভাগা আন্দোলনে শহিদ হয়েছিলেন অহল্যা বাতাসী, সরোজিনী মায়েরা সহ আট জন।
এই আটজন শহীদের স্মরণে আমরা আজ এই দিনটি পালন করলাম। তাঁরা যেভাবে কৃষকদের স্বার্থে আন্দোলন করেছিলেন, তার থেকে শিক্ষা নিয়েই ভবিষ্যতে কৃষকদের লড়াই দীর্ঘ এবং বড় করার শপথ নেওয়া হয় এদিন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কৃষক সমিতির সহ সভাপতি বিমল মিস্ত্রি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কৃষক সমিতির সদস্য কবির শেরওয়ানি, নামখানা থানার কৃষকসভার সম্পাদক প্রবীর পাল,
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কৃষক সমিতির সদস্য সজল ঘোড়ুই, শহিদ বাতাসি সিংহের পুত্র গুরুপদ সিংহ, শহিদ গজেন্দ্রনাথ ভুঁইয়ার নাতি তপন ভুঁইয়া প্রমুখ।১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। তার এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে এদেশের জোতদার জমিদাররা কৃষকদের উপর নির্মমভাবে অত্যাচার করতে থাকে।
সেই সময়ে জমিদার নিয়ম করে দেন যে কৃষকদের ফলানো ফসলের তিন ভাগের এক ভাগ পাবে কৃষকরা। আর দুই ভাগ যাবে জোতদার জমিদারদের গোলায়। কিন্তু কৃষকদের দাবি ছিল, তিন ভাগের দুই ভাগ পাবে কৃষকরা, একভাগ যাবে জমিদারদের গোলায়। আর এই নিয়েই মতবিরোধ শুরু হয় কৃষকদের সঙ্গে জমিদারদের।
যা পরে রূপ নেয় আন্দোলনের। এই আন্দোলন তেভাগা আন্দোলন নামে পরিচিত। সেই সময় নামখানা থানা ছিল না। ১৯৪৮ সালের ৬ নভেম্বর তৎকালীন কাকদ্বীপ থানার দক্ষিণ চন্দনপিড়িতে জমিদারদের বিরুদ্ধে জোর আন্দোলন শুরু হয়। এদিন প্রচুর মানুষ প্রতিবাদ মিছিলে হাঁটেন। মিছিল জনসমুদ্রের রূপ নেয়।
এই আন্দোলনকে বন্ধ করতে তৎকালীন সরকারের পুলিশ ও জমিদাররা নির্বিচারে এই মিছিলের ওপর গুলি চালায়। মুহূর্তে দক্ষিন চন্দনপিড়ির মাটি রক্তে লাল হয়ে ওঠে। পুলিশের গুলিতে আটজন আন্দোলনকারী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পুলিশের গুলিতে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন আন্দোলনকারী অহল্যা দাস।
পুলিশের গুলিতে শহিদ হন অহল্যা দাস, বাতাসী সিংহ, সরোজিনী দাস, দেবেন্দ্রনাথ বর্মন, নগেন্দ্রনাথ দোলুই, উত্তমী ভুঁইয়া, অশ্বিনী দাস, গজেন্দ্রনাথ ভূঁইয়া। তেভাগা আন্দোলনের আট বীর শহিদের স্মৃতির উদ্দেশে দক্ষিণ চন্দনপিড়ির যেই মাটিতে রক্ত ঝরেছিল, সেই মাটিতে তৈরি করা হয়েছে শহিদ বেদী।