স্টাফ রিপোর্টা: রেশন ‘দুর্নীতি’ কাণ্ডে শনিবার সকাল থেকেই জেলায় জেলায় ইডির তল্লাশি অভিযান চালালো ইডি।শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ থেকে নদিয়ার রানাঘাট ও জায়গায় জায়গায় চালল অভিযান এবং জিজ্ঞাসাবাদ।জানা গিয়েছে, শনিবার সকালে বনগাঁর রাধাকৃষ্ণ আটাকল এবং চালকলে হানা দেয় ইডির আধিকারিকেরা।
একই সঙ্গে চাল ও আটাকলের মালিক বাড়িতে হানা দেয় ইডির তদন্তকারী দল। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে নিয়েই ইডি আধিকারিকেরা তল্লাশিতে ঢোকেন। রাধাকৃষ্ণ আটাকলের মালিক মন্টু দাস। তাঁর সঙ্গে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কোন যোগ ছিল কিনা তা যোগ ছিল কি না তা খতিয়ে দেখছেন আধিকারিকরা।
রেশন দুর্নীতি কাণ্ডের সঙ্গে তিনি যুক্তি কি না তাও খয়িয়ে দেখছে তদন্তকারী সংস্থা।এ ছাড়া চালকলের মালিক কালীদাস সাহাকেও জিজ্ঞসাবাদ করেন ইডির আধিকারিকেরা। দুজনেরও বাড়িতে হানা তল্লাশি চালায় ইডি।তল্লাশি চালানোর মিলের ভিতরে কাউকে ঢুকতে-বের হতে দেওয়া হয়নি।
এদিন জ্যোতিপ্রিয় ঘনিষ্ঠ দু ব্যবসায়ীর বাড়ি ও চালকল আটাকলে তল্লাশি চালায় ইডি। কারখানা-বাড়ি দুদিকে একসঙ্গে হানা চালিয়েছে তদন্তকারী আধিকারিকেরা। অন্যদিকে, শনিবার সকালে ইডির চার সদস্যের একটি দল পৌঁছে যান রানাঘাটে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে রানাঘাটের এক রেশন ডিলারের বাড়িতে যান তদন্তকারীরা। বাইরে থেকে বাড়ি ঘিরে রাখেন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানেরা।
রানাঘাট স্ট্যান্ড রোডের পাশে রেশন ডিলারের প্রাসাদোপম বাড়িতে তল্লাশি শুরুর কিছু ক্ষণ বাদে রানাঘাট পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সড়ক পাড়ায় এক রেশন ডিলারের বাড়িতেও ইডি হানার খবর মিলেছে।তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, রানাঘাট স্ট্যান্ড রোডে খাদ্য দফতর অনুমোদিত ন্যায্য মূল্যে রেশন দোকান চালান নিতাই ঘোষ নামে এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরেই অভিযোগ আসছিল যে তিনি রেশনে বরাদ্দ চাল এবং আটা খোলা বাজারে বিক্রি করে দেন।
অভিযুক্ত নিতাইয়ের সঙ্গে রেশনের খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের বরাত পাওয়া বাকিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে দাবি করেছেন স্থানীয়দের একাংশ। এমনকি, নদিয়ায় বাকিবুরের চাল এবং আটাকলে যাতায়াতও ছিল নিতাইয়ের। এমনটা ইডি সূত্রে খবর। জানা যাচ্ছে, বাকিবুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যে একাধিক ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে, তাঁদের অন্যতম নিতাই।
তদন্তকারী সূত্রে দাবি, ভুয়ো রেশন কার্ড ব্যবহার করে কয়েকশো চালকল এবং আটাকলের মাধ্যমে বছরের পর বছর কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ন্যায্য মূল্যের রেশন সামগ্রী খোলা বাজারে বিক্রি করেছেন নিতাই। রানাঘাট পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সড়ক পাড়ায় আর এক রেশন ডিলার সিদ্ধেশ্বর বিশ্বাসের বাড়িতেও গিয়েছে ইডি। রেশন দুর্নীতিতে ধৃত বাকিবুর রহমানের সঙ্গে নিতাই বা সিদ্ধেশ্বরের কী যোগ রয়েছে, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
রেশন ‘দুর্নীতি’-র তদন্তে নদিয়ার একাধিক জায়গায় আগেও হানা দিয়েছে ইডি। নদিয়ার শান্তিপুরের বাইপাস সংলগ্ন বাবলা কন্দখোলায় সপ্তাহ দুয়েক আগেই অভিযান চলে। কয়েক দিন আগে কৃষ্ণনগর-১ এবং ২ ব্লকের একাধিক মুদির দোকান এবং খোলা বাজারে রেশন সামগ্রী বিক্রয়কারী একাধিক ব্যবসায়ীর বাড়িতে তল্লাশি হয়েছে।এর মধ্যে হাওড়ার ডোমজুড়ে জালান কমপ্লেক্সের অঙ্কিত ইন্ডিয়া লিমিটেড নামে একটি আটা তৈরির কারখানা এবং গোডাউনে ইডি হানার খবর মিলেছে।
তদন্তকারী সূত্রে দাবি, এখান থেকেই রেশন দোকানে আটা, ময়দা এবং অঙ্গনওয়াড়ি স্কুলের শিশুদের খাবার সরবরাহ করা হত।রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া বাকিবুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, নিজের প্রভাব খাটিয়ে বেশি দামে কম পরিমাণ খাদ্য শস্য বিক্রি করতেন বাকিবুর। অভিযোগ, ৮০০ বা ৬০০ গ্রাম আটা বিক্রি করে এক কেজির দাম নিতেন বাকিবুর। এমন কী কিছু ব্যবসায়ীর সূত্রে চাল যেত বাংলাদেশে।
সেই রফতানির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে অনেক প্রভাবশালী নাকি বাকিবুরের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন। এর ফলে বাকিবুরের ব্যবসা আরও ফুলে ফেঁপে উঠেছিল। সম্প্রতি দিঘায় একটি বিলাসবহুল হোটেলও তৈরি করেছিলেন বাকিবুর। বাকিবুরের ব্যবসার সূত্রে ধরেই বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে ইডি।
কলকাতার এজেসি বোস রোডে আটা প্যাকেজিং সংস্থার দফতরে ইডি। মূলত আটা কল মালিকদের ভূমিকা কি ছিল? বাকিবুরের সঙ্গে কতটা ঘনিষ্ঠতা ছিল আটাকল মালিকদের তা জানতে চাইছে ইডি।