Friday, December 8, 2023
Homeকলকাতাস্বপ্নে দেখা দেবী দুর্গার রূপ দিলেন শিল্পী রূপক, পূজোও করেন নিজের উদ্যোগে

স্বপ্নে দেখা দেবী দুর্গার রূপ দিলেন শিল্পী রূপক, পূজোও করেন নিজের উদ্যোগে

বিমল বন্দ্যোপাধ্যায়, বজবজ : পাঁচ বছর বয়স থেকে মাটি দিয়ে খেলার ছলে পুতুলের রূপ দিয়ে দূর্গা প্রতিমা তৈরি করতেন রূপক মণ্ডল। সেই প্রতিমার সামনে ফুল, বেলপাতা দিয়ে পুজো করতেন মা ভক্ত রূপক নিজে। একটু যখন বয়স ও বোধ তৈরি হল, তখন একদিন ঘুমের ভিতর স্বপ্ন দেখলেন। ধোঁয়ার কুন্ডলী পাক খেয়ে তার সামনে এসে থামলো। তার মধ্যে থেকে বেরিয়ে এলেন মা দশভূজা। স্বপ্নে দেখা সেই মায়ের চোখ ছিল টানা টানা।

স্বপ্নে দেখা দেবী দুর্গার রূপ দিলেন শিল্পী রূপক, পূজোও করেন নিজের উদ্যোগে

তারপর থেকেই মায়ের রূপ পাল্টে গেল। স্বপ্নে যেভাবে মাকে দেখেছিলেন, হুবহু সেই রকম টানা চোখের প্রতিমা তৈরি করলেন শিল্পী রূপক। চোখ দান থেকে মায়ের অঙ্গসজ্জা সবই করেন তিনি। তাঁর হাতে গড়া মৃন্ময়ী দশভূজা এতটাই সুন্দর হয়, পড়শি ও সংলগ্ন
এলাকার মানুষ দেখতে আসেন। বজবজ পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের পোকপাড়ির সিইএসসি ক্যাশ অফিসের কাছে মণ্ডল বাড়ির এই পুজো। রূপকবাবুর কথায়, ১১ বছর আগে যখন এই পুজো বড় করে শুরু করেছিলাম।

স্বপ্নে দেখা দেবী দুর্গার রূপ দিলেন শিল্পী রূপক, পূজোও করেন নিজের উদ্যোগে

তখন থেকেই নিজে হাতে প্রতিমা তৈরি করে আসছি। তবে এখন আর নিজে পুজো করি না। এর দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে কুলোপুরোহিত বিকাশ ভট্টাচার্য মহাশয়ের হাতে। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, বেশ নিষ্ঠার সঙ্গে তৃতীয়ার দিন চন্ডীপাঠ করে মা কে আহ্বান জানানো হয়। তারপর সেদিন ঘটস্থাপন হয়। ১০ ফুটের একচালার ভিতর সিংহবাহিনী ও তাঁর পুত্র-কন্যাদের রাখা হয়। এমনভাবে তা হয়, যাতে বিসর্জনের সময় তা আলাদা করা যেতে পারে।

স্বপ্নে দেখা দেবী দুর্গার রূপ দিলেন শিল্পী রূপক, পূজোও করেন নিজের উদ্যোগে

আমাদের নিজের প্রতিষ্ঠিত পুকুর রয়েছে। সেখানে প্রতিমা বিসর্জন হয়। তবে তা জলে ফেলার পর মাটি গলে যাওয়ার পর তার কাঠামো তুলে আনা হয়।দত্ত বাড়ির পুজোর বয়স একশো বছর হয়ে গেল। ধর্মপ্রাণ অমূল্য দত্ত-র হাত ধরে এই দুর্গাপুজোর সূচনা হয়েছিল বজবজ-২ এর গ্রামীণ এলাকা নোদাখালিতে। সেই একশো বছর আগে অমূল্যবাবুদের জমি-জমা ছিল অনেক।

স্বপ্নে দেখা দেবী দুর্গার রূপ দিলেন শিল্পী রূপক, পূজোও করেন নিজের উদ্যোগে

দক্ষিণেশ্বরের আদলে তাই বাড়ির চারপাশ ঘিরে তৈরি করা হয় শিবমন্দির, নারায়ণ মন্দির এবং দুর্গা মন্দির। বাবা-কাকা তাদের ছেলেমেয়ে ছাড়াও আত্মীয় মিলে সেই সময় পুজোর ক’ দিন একশো মানুষের পাত পড়ত প্রতিদিন। পরবর্তী সময়ে বজবজ পুরসভার শহর চড়িয়াল বাজারে ব্যবসায়িক কাজের সূত্রে চলে আসেন অনেকে। ধীরে ধীরে দত্ত পরিবারের অধিকাংশ বজবজ পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেন।

স্বপ্নে দেখা দেবী দুর্গার রূপ দিলেন শিল্পী রূপক, পূজোও করেন নিজের উদ্যোগে

নোদাখালিতে সেই শিবমন্দির, নারায়ণ মন্দির এখনও রয়েছে। কিন্তু দুর্গাপুজো সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে ৯ নম্বরে। তাও প্রায় ৫০ বছর আগে। দত্ত পরিবারের চতুর্থ পুরুষ কুনাল দত্ত বলেন, জাঁকজমকভাবে পুজো হত। আলাদা পুজোর দালান ছিল। গ্রামের লোকজনকে পুজোর সময় খাওয়ানোর চল ছিল। অনেকদিন পর্যন্ত সেই রীতি পালন করা হয়েছে। এখনও এখানে বাড়ির সামনে পুজোর জন্য আলাদা ১০ কাঠা জায়গা রয়েছে।

স্বপ্নে দেখা দেবী দুর্গার রূপ দিলেন শিল্পী রূপক, পূজোও করেন নিজের উদ্যোগে

সেখানে ১৬ ফুটের প্রতিমা আনা হয়। পঞ্চমীর আগে মণ্ডপ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। কারণ, ওইদিন ঠাকুর এসে যাবে। এখনও আত্মীয়রা আসেন। তবে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন উঠে গিয়েছে। কারণ, কয়েক বছর ধরে প্রচুর খাওয়ার নষ্ট হয়েছে। তবে নিয়ম নিষ্ঠা মেনে পুজো এখনও হচ্ছে।

Most Popular