Thursday, March 28, 2024
Homeরাজ্যবাংলার ৬২ জনের মৃত্যু, শনাক্ত হয়নি ১৮২ দেহ, মানসিক ট্রমায় থাকাদেরও অর্থ...

বাংলার ৬২ জনের মৃত্যু, শনাক্ত হয়নি ১৮২ দেহ, মানসিক ট্রমায় থাকাদেরও অর্থ সাহায্য, জানালেন মমতা

স্টাফ রিপোর্টার: করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় বাংলার ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনটাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে আরও অনেক আছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। হতাহতের পরিসংখ্যান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলার ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত তাঁদের শনাক্ত করা হয়েছে। তবে আরও অনেক আছে। আহত ২০৬ জনকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে এনে কলকাতায় হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এছাড়া ওড়িশায় হাসপাতালে ৭৩ জন ভর্তি রয়েছেন। ৫৬ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছাড়া হয়েছে। আর পরিচয় মেলেনি এরকম ১৮২ জন রয়েছেন।” তাঁদের ছবি প্রতিটি জেলায় শেয়ার করা হয়েছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ও তাঁদের পরিবারদের সাহায্য করতে ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং সেল চলছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, “হাওড়া, খড়্গপুর, সাঁতরাগাছিতে ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং সেল আছে। কয়েকজন আইএএস অফিসার বর্ডারে কাজ করছেন। আমাদের এখানকার লোক দেখলেই বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে। কাল ৭০০ জন এনে দিয়েছে।” দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে রেলমন্ত্রক-সহ বিভিন্ন রাজ্য আর্থিক সাহায্যের কথা জানিয়েছে। শনিবার তৃণমূলের তরফে নিহত পরিবারগুলিকে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছিল। আর রবিবার মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, ৫ লক্ষ টাকা সরকারি সাহায্য দেওয়া হবে। আহত ও যাঁরা নিরাপদে বাড়ি ফিরেছেন, তাঁদের সবাইকে ১০ হাজার টাকা করে দেবে সরকার। পরবর্তী সময়ে স্বনির্ভর হতে সাহায্য করবে এই অর্থ, এমনই মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এই মুহূর্তে অজ্ঞাতপরিচয় ১৮২ জনকে শনাক্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে রাজ্য সরকার। করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর রাত থেকে রাজ্য সরকার কাজ শুরু করেছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তাঁর কথায়,, “আমরা ওড়িশা সরকারের সঙ্গে কথা বলে কাজটা করেছি। দুর্ঘটনা ঘটার পর থেকেই মনিটরিং করছি। মেদিনীপুর থেকে মেডিক্যাল টিম, অন্যান্য আধিকারিক, ১৫০টি অ্যাম্বুলেন্স, ৫০ জন চিকিৎসক পাঠিয়ে রাত থেকেই উদ্ধারকাজ শুরু করেছি।দুর্ঘটনা ঘটার পর থেকেই নজর রাখছি। সেদিন দুর্ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে মানস ভুঁইয়া, দোলা সেন ও মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের আধিকারিক জয়ন্ত সাহাকে পাঠিয়েছিলাম। তারা ওখানে ৩ – ৪ ঘণ্টা ছিল। সাথে সাথে আমরা মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক ও প্রচুর অফিসারদের টিম দিয়ে প্রায় ১৫০টা অ্যাম্বুল্যান্স, ৫০ জনের মতো চিকিৎসক ও নার্স, বাস পাঠিয়েছি। বিপর্যয় মোকাবিলা দল পাঠিয়েছি। আমরা রাত থেকেই উদ্ধারকাজে সাহায্য করি। সেন্ট্রাল কথা বলে বেশি, করে কম। কাজটা রাজ্য সরকারই করে। আমরা উড়িষ্যা সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজটা করেছি।” তাঁর জমানায় রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর যে সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে তাকে ভুয়ো বলে দাবি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘উইকিপিডিয়া বলছে আমার সময় রেল দুর্ঘটনায় ৩০০-র কাছাকাছি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এরা কোথা থেকে বানিয়ে বানিয়ে সংখ্যা বলছে। কেন্দ্রীয় সরকার ইতিহাস বদলে ফেলতে পারে। যে কোনও সংখ্যা বদলে ফেলতে পারে।’ রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তিনিই দুর্ঘটনা ঠেকাতে ট্রেনে অ্যান্টি কলিউশন সিস্টেম চালু করেছিলেন বলে দাবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, “আমি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে মৃতের প্রত্যেক পরিবারের সদস্যদের ১ জনকে চাকরি দিতাম। আমিই নতুন সিগন্যালিং ব্যবস্থা করি। প্রায় ৪০০ আনম্যানড লেবেল ক্রসিং ছিল, সেগুলি ম্যানড করি। অ্যান্টি কলিউশন সিস্টেম ছিল না। সেটা চালু করি। আমি দুরন্ত এক্সপ্রেস করেছিলাম।এর জন্যই দুর্ঘটনার সংখ্যা কমেছে।” সেই দুরন্ত এক্সপ্রেসের আজ বেহাল দশা বলেও আক্ষেপ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এপ্রসঙ্গে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বন্দে ভারত নামটা ভাল। কিন্তু, সেদিন একটা গাছ পড়েই ট্রেন আটকে গেল। সেই ঘটনার উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, বন্দে ভারতের ইঞ্জিন কোথা থেকে করেছে? এই ইঞ্জিন কি বন্দে ভারতের জন্য ফিট?” বিজেপিকে নিশানা করে মমতা বলেন, ‘আমি যদি জিজ্ঞাসা করি গোধরায় কতজন মারা গিয়েছিল। আমি তো সব করে দিয়ে এসছিলাম বলে রেলটা স্বাভাবিক ছিল। যাদের দায়িত্ব ছিল নৈতিকতার তারা দায়িত্ব না নিয়ে আমার সময়ে কত মরেছে হিসেব করতে বসেছে। সেই সময় চলন্ত ট্রেনে আগুন লাগানো হয়েছিল। কতজন মানুষ মারা গিয়েছিলেন? আপনাদের সময় অনেক দুর্ঘটনা হয়েছে। আমরা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলিনি কারণ দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। এত মানুষের মৃত্যুর পর তো ক্ষমা চাইতে পারতেন। এটা সম্পূর্ণ গাফিলতি। কোনও কো-অর্ডিনেশন ছিল না। না হলে ৮-১০ মিনিটে কলিশন হতে পারে না।’ শনিবার সকালে বালাসোরে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা দাবি করেছিলেন ‘কবচ’ প্রযুক্তি থাকলে ওই ভয়াবহ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। যদিও রবিবার রেলমন্ত্রী বৈষ্ণব বলেন, ‘এই দুর্ঘটনার সঙ্গে কবচের (যে প্রযুক্তি থাকলে দুটি ট্রেনের ধাক্কা হবে না, একই লাইনে দুটি ট্রেন নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে চলে এলে প্রযুক্তিই ট্রেনকে দাঁড় করিয়ে দেবে) কোনও সম্পর্ক নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কারণ বলেছেন, সেটা মোটেও আসল বিষয় নয়। উনি যেমন বুঝেছেন, সেরকম বলেছেন।’

Most Popular