খবরদেশ

লোকসভা পর্যন্ত কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন সিদ্দারামাইয়া, তারপর হবেন ডি শিবকুমার, এই রফাসূত্রে বরফ গলল উভয় শিবিরের

অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়
ডি শিবকুমার ও সিদ্দারামাইয়ার ভিতর কে মুখ্যমন্ত্রী হবে তা নিয়ে ওই দুই নেতার সঙ্গে কংগ্রেস হাইকমান্ডের
দীর্ঘ বাতবিতন্ডা ও যুক্তি ও পাল্টা যুক্তির লড়াই শেষে এর সমাধান সূত্র বের হল। তাতে উভয় শিবির ও নেতাদের
সন্তুষ্ট করতে হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী পদে
থাকবেন সিদ্দারামাইয়া। এই সময় পর্যন্ত ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকবেন ডি শিবকুমার।

পাশাপাশি তিনি কর্ণাটকের কংগ্রেস দলের প্রদেশ সভাপতি পদেও বহাল থাকবেন। লোকসভা ভোটের পর মুখ্যমন্ত্রী পদে বসবেন ডি
শিবকুমার। আগামী ২০ মে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে। পর্যায়ক্রমে মন্ত্রীদের নামও ঘোষণা
করা হবে। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব কর্ণাটকের সরকার গঠনের বিষয়টি এদিন এইভাবে
নিস্পত্তি করলেন। এই ঘোষণায় অবশ্য আপাতত সিদ্দারামাইয়া ও ডি শিবকুমার দুই শিবির খুশী। স্বস্তির নিঃশ্বাস
ফেলেছে কংগ্রেস হাইকমান্ডও।

তবে বিরোধী দল বিজেপি এ নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েনি। এইভাবে ডি শিবকুমারকে
মুখ্যমন্ত্রী না করে কার্যত তাঁকে হেয় করা হল বলে প্রচার করেছে। কংগ্রেস এ নিয়ে চুপ থাকেনি। তারাও পাল্টা
বলেছেন, বিজেপির কর্ণাটক নিয়ে কোনও কথা বলাই ঠিক নয়। কারণ, ভোটারদের রায়ে পদ্মর গ্রহণযোগ্যতা কমেছে।
তবে এটাও ঠিক যে, মুখ্যমন্ত্রী কে হবে তা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে দিল্লিতে কংগ্রেস হাইকমান্ড অফিসে উভয়
গোষ্ঠীর নেতাদের দাবি ও পাল্টা দাবিতে ভয়ঙ্কর মানসিক চাপ তৈরি হয়েছিল।

তা থেকে সর্বভারতীয় সভাপতি
মল্লিকার্জ্জুন , রাহুল গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী সহ তাবড় তাবড় নেতারা দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন। কোনও ভাবে ওই
দু’জনকে বোঝানো যাচ্ছিল না যে, এইভাবে তাঁরা দাবিতে অনড় থাকলে ভোটারদের কাছে কংগ্রেস সম্পর্কে খারাপ
বার্তা যাবে। শুধু তাই নয়, এর সুযোগ নিয়ে বিজেপি আরও জলঘোলা করলে আগামী লোকসভা ভোটে কংগ্রেস অনেকটা
ব্যাকফুটে চলে যাবে। যদিও এসব কথায় ডি শিবকুমার ও সিদ্দারামাইয়া নরম হতে চাননি। ডি শিবকুমার স্পস্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করতে হবে। এর বাইরে অন্য কোনও পদ তিনি নেবেন না।

কেন তিনি এই কথা বলছেন,
সেটাও পরিস্কার করেন। বলেন, সিদ্দারামাইয়া এর আগে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি বয়সে প্রবীণ। সেখানে ডি
শিবকুমার নবীন। তাঁদের মতো নেতাদের এবার মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেওয়া উচিত। কেননা তিনি দলের একনিষ্ঠ
অনুগত। দলের জন্য তাঁকে জেল খাটতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, এবারে তিনি সংগঠনকে যে ভাবে একছাতার তলায় এনে
লড়াই দিয়েছেন। তাতে মুখ্যমন্ত্রী পদ তার পাওয়া উচিত।

পাল্টা সিদ্দারামাইয়া বলে দেন, তিনি ডি শিবকুমারকে
মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়তে নারাজ। কারণ, এবারে ১৩৫ টি আসনের ভিতর সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক তাঁর অনুগত। ফলে তাঁকে
মুখ্যমন্ত্রী করা না হলে অনুগত বিধায়করা ছেড়ে কথা বলবে না। তাতে দলের ভিতর অন্য স্রোত বইতে পারে। কংগ্রেস
হাইকমান্ড বুঝতে পারে, উভয় পক্ষর এই লড়াইয়ে কার্যত দলে ভাঙন অনিবার্য হয়ে যেতে পারে। যদি এ ব্যাপারে
সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নেওয়া না যায়।

শেষ পর্যন্ত ম্যারাথন বৈঠক করে সিদ্দারামাইয়া ও ডি শিবকুমারকে বোঝানো
হল, দু’জনকে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে। তবে এক সঙ্গে করা যাবে না। বরং, সিদ্দারামাইয়া আগে মুখ্যমন্ত্রী হোক।
পরবর্তী ধাপে ডি শিবকুমারকে করা হবে। তবে আপাতত মুখ্যমন্ত্রী মতো সম্মান যাতে ডি শিবকুমার পান সেজন্য
তাঁকে ডেপুটি সিএম পদ দেওয়া হবে।

এই রফাসূত্র মোতাবেক উভয় শিবির এ ব্যাপারে তাঁদের সম্মতি দিয়েছেন। সব
মিলিয়ে এ ক’দিনের কর্ণাটকের নতুন মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রী সভা গঠন নিয়ে যে টাগ অব ওয়ার চলছিল, তাতে যবনিকা
পাত হল। এদিন এই ঘোষণার পর দিল্লি ছেড়ে অনেকে কর্ণাটকের দিকে চলে গিয়েছেন।

Related Articles

Back to top button
error: Content is protected !!