খবরজেলা

সুন্দরবনে মধু ছিনতাই করতে এসে ৫ বাংলাদেশী জলদস্যু গ্রেপ্তার

বান্টি মুখার্জী, ক্যানিং : ৫ বাংলাদেশী জলদস্যুকে গ্রেফতার করল বনদফতর। ঘটনাটি ঘটেছে, প্রত্যন্ত সুন্দরবনের বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া বাঘমারা ফরেষ্ট এলাকায়। ধৃতরা হল ওলিউর রহমান, মহম্মদ আসাদুল, মহম্মদ মোফিজুর রহমান, সৈদুল সেখ, আলম গাজী। ধৃতদের বাড়ি বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার আটুলিয়া, পদ্মপুকুর, প্রতাপনগর, উত্তর আটুলিয়া গ্রামে।

ধৃতদের কাছ থেকে একটি নৌকা, ১৮টি খালি প্লাস্টিকের ড্রাম, ৪৫ কেজি করে মধু ভর্তি ৪টি ড্রাম, ২টি দা, ১টি মোবাইল ফোন সহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্র উদ্ধার হয়েছে।ধৃতদের জিঞ্জাসাবাদ করে তদন্ত শুরু করেছে বনদপ্তর ও পুলিশ। পাশাপাশি ধৃতদেরকে শনিবার আদালতে তোলা হয়।উল্লেখ্য, গত ৭ এপ্রিল সুন্দরবনের জঙ্গলে মধু সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন মৌলিরা।

মাত্র ১৫ দিনের বৈধ অনুমতি নিয়েই ৭৫ টি দলে বিভক্ত হয়ে রসিরহাট রেঞ্জ ও সজনেখালি রেঞ্জ অফিস থেকে মোট ৫৭৬ জন মৌলি সুন্দরবনে প্রবেশ করেছেন।অন্যদিকে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ শুরু হতেই বাংলাদেশী ডাকাত, জলদস্যুদের উপদ্রব বেড়ে গিয়েছে। গত কয়েকদিন আগেই সুন্দরবন জঙ্গলে মধু সংগ্রহের সময় বাংলাদেশী জলদস্যুরা হামলা চালিয়েছিল মধু সংগ্রহকারীদের ওপর।আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ জন মধুসংগ্রহকারী।

বর্তমানে জলদস্যুদের হানায় শঙ্কিত মৌলিরা। যদিও নিরাপত্তার বিষয়ে কোন ফাঁকফোকর রাখতে রাজী নয় বনদপ্তর।মধুসংগ্রকারীদের নিরাপত্তার জন্য তৈরী হয়েছে ‘অপারেশান গোল্ডেন হানি’ নামে এক বিশেষ টিম। ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে আবারও বাংলাদেশী জলদস্যুদের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায়, তৎপরতার সাথে উদ্যোগ গ্রহণ করেন বনদপ্তরের অপারেশান গোল্ডেন হানি।

প্রত্যন্ত সুন্দরবনের চামটা, লুধিরদুয়ানী ও ভুরকুন্ডা রেঞ্জ এলাকায় দিনে রাতে প্রেট্রোলিং করতে থাকেন অপারেশান গোল্ডেন হানি’র সদস্যরা। গত ১৮ এপ্রিল তাঁরা যখন নজরদারী চালাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই একটি নৌকায় পাঁচ জন দ্রুততার সাথে বাংলাদেশের দিকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। টহলদারি দল দুরবীণের সাহায্যে দেখতে পায়। তড়িঘড়ি স্পীডবোট নিয়ে তাদের পিছু ধাওয়া করেন অপারেশান গোল্ডেন হানি’র সদস্যরা।

সেই মুহূর্তে জলদস্যুরা নৌকা নিয়ে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গেল লুকিয়ে গা ঢাকা দেয়। তাদেরকে ধরতে গোসাবা রেঞ্জ অফিসার স্বপন মাঝি’র নেতৃত্বে চামটা বিট অফিসার নিরঞ্জন সরদার, লুধিরদুয়ানী ক্যাম্পের অফিসার অভিজিৎ মন্ডল, ফরেস্ট গার্ড সুকুমার মন্ডল, হেড কোয়ার্টার গোসাবা রেঞ্জ অফিসার নবকুমার সাউ চামটা, লুধিরদুয়ানী ও ভুরকুন্ডা এলাকায় চিরুনী তল্লাশি অভিযান শুরু করেন।

এক দিকে বাঘের ভয় আর অপর দিকে অপারেশান গোল্ডেন হানি’র সদস্যদের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে শুক্রবার সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে ৪ জলদস্যু সাঁতরে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। অপারেশান গোল্ডেন হানি তৎপরতার সাথে সমুদ্রে সাঁতার দিয়ে দুই জলদস্যুকে ধরে ফেলেন। অপর দুই জলদস্যু মৎস্যজীবীদের নৌকায় উঠে বাঁচার চেষ্টা করে।

তবে মৎস্যজীবীরা তাদেরকে ধরে বনদপ্তরের হাতে তুলে দেন।ধৃতদের শনিবার সুন্দরবন কোষ্টাল থানার পুলিশের হাতে হস্তান্তর করেন বনদপ্তরের কর্মীরা। ধৃতদের শনিবার আদালতে তোলা হয়েছে।উল্লেখ্য, বিগত ২০১৮ সালের আগে এতবড় সাফল্য পায়নি সুন্দরবন ব্যাঘ্রপ্রকল্প ও বনদপ্তর।

ঘটনা প্রসঙ্গে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডাইরেক্টর জোন্স জাস্টিন জানিয়েছেন, “৫ জন বাংলাদেশী জলদসুকে ধরা হয়েছে। তাদের থেকে একটি নৌকা ও ৪ ড্রাম মধু সহ অন্যান্য বেশকিছু জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।ধৃতদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।”

Related Articles

Back to top button
error: Content is protected !!