খবররাজ্য

হঠাৎ স্কুল-কলেজ ছুটির সিদ্ধান্ত, অন্য গন্ধ পাচ্ছে বিরোধীরা!

স্টাফ রিপোর্টার: অত্যধিক গরমের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের আগেই গ্রীষ্মকালীন ছুটির ঘোষণা করা হয়েছিল সরকারের তরফে। নির্দেশিকা অনুযায়ী, ২ মে থেকে গ্রীষ্মের ছুটি পড়ার কথা। তবে হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে, আগামী চারদিন কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হবে। এই পরিস্থিতিতে এবার সোমবার থেকে অর্থাৎআজ থেকে শনিবার পর্যন্ত রাজ্যের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকেও এই ছুটি দেওয়ার আরজি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

রবিবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিকাশ ভবন জানিয়েছে, তাপপ্রবাহের কারণে ১৭ এপ্রিল থেকে রাজ্যের সব সরকারি, বেসরকারি, কেন্দ্রীয় সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল বন্ধ থাকবে। আপাতত এক সপ্তাহের জন্য। তবে বিকাশ ভবন জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশিকা জারি না হওয়া পর্যন্ত স্কুল বন্ধই থাকবে। দার্জিলিং এবং কালিম্পঙে স্কুল যদিও খোলাই থাকবে। এই সময়কালে স্কুলের শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীদেরও ছুটি থাকবে। তবে স্কুল খোলার পর পড়ুয়াদের স্বার্থে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হবে স্কুলের শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীদের, যাতে পড়াশোনার কোনও ক্ষতি না হয়। এই ছুটির কারণে পড়ুয়ারা যাতে পিছিয়ে না পড়ে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মীদের। আর এই নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছে বিকাশ ভবন।

এদিকে সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সরব হল তিন বিরোধী দল। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘‘এই ছুটির ঘোষণা আসলে মিড মে মিল চুরি করার জন্য করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি ধরা পড়েছে। আরও টাকা কামাতে চায়। এই ঘোষণায় যে সব স্কুলে প্রাতঃকালীন বিভাগ রয়েছে, সেগুলিও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। যেনতেনপ্রকারেণ স্কুলগুলি বন্ধ করে মিড ডে মিলের চাল চুরির বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ছুটি দিয়ে স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধ করে দেওয়া কোনও কাজের কথা নয়। সে ক্ষেত্রে স্কুলগুলিকে সকালের দিকে করে দিলেই ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠন বন্ধ হত না। বিকল্প পথে পঠনপাঠন চালু রাখাই সরকারের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু শিক্ষার চেয়ে চুরিই রাজ্য সরকারের কাছে বেশি প্রাধান্য পায়।’’

প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘ছুটি দিয়ে দেওয়া কোনও স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। গরমের জন্য যখন দুপুরে স্কুল করা যাচ্ছে না, তখন সকালে কিংবা সন্ধ্যায় স্কুলের সময় করা যেতেই পারে। প্রাথমিক স্কুলগুলিও এই সময় বন্ধ করে দেওয়ার কোনও যুক্তি হয় না। বিকল্প পদ্ধতিতে পঠনপাঠন চালুর রাখার নীতি রাজ্য সরকারের নিতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেখা গেল কোনও বিকল্প নীতি তৈরি না করেই ছুটি দেওয়ার ঘোষণা করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘এমনিতে তো গরমের ছুটি এগিয়ে ২ মে থেকে করা হয়েছে। তার ওপর আরও এক সপ্তাহ ছুটির ঘোষণা হয়ে গেল।

এই ছুটির ফলে তাঁদের পড়াশুনোয় যে ঘাটতি তৈরি হবে, তা পূরণ করার জন্য কে দায়িত্ব নেবে?গ্রীষ্মকালে শহরের তাপমাত্রা যে বাড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই সব ক্ষেত্রেই সরকারের বিকল্প ভাবনা রাখা উচিত ছিল। কিন্তু কোনও বিকল্প পথ না রেখে ছুটিকেই একমাত্র রাস্তা হিসেবে বেছে নিয়েছে সরকার। কারণ মুখ্যমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন, তিনি ডিএ দিতে পারবেন না তাই ছুটি দিয়েছেন। সেই মতো তিনি ছুটিই দিয়েছেন। তাঁর আর কিছু দেওয়ার নেই।’’

তবে সেই অভিযোগ খারিজ করে বিরোধী দলগুলির বাস্তব ভাবনা প্রসঙ্গেই প্রশ্ন তুলেছে শাসকদল তৃণমূল।রাজ্যসভার দলনেতা শান্তনু সেন বলেন, ‘‘যে বিরোধীরা প্রায় প্রত্যেক নির্বাচনেই মানুষের আস্থা হারাচ্ছেন, তাঁদের বাস্তব বুদ্ধি নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নেন, তা বার বার ঠিক প্রমাণ করেছে সময়। এ বারও তার ব্যতিক্রম হবে না। বাস্তব বুদ্ধিহীন, বিবেচনাহীন বিরোধীরা আবার যথা সময়ে জবাব পেয়ে যাবেন।’’

তবে বিরোধীদের এমন সমালোচনার মধ্যে স্কুলশিক্ষকদের সংগঠন আবার আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে দ্রুত স্কুল খোলার দাবি করেছেন। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা কোনও রাজনীতির মধ্যে নেই। মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। তবে আবহাওয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই যেন স্কুল খোলা হয়।’’

Related Articles

Back to top button
error: Content is protected !!