
বান্টি মুখার্জি, ক্যানিং: বুধবার দুপুরে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের ১২ নম্বর রুমে রোগীদের চিকিৎসা করছিলেন অস্থি বিশেষঞ্জ ডাঃ কার্তিক নাসিপুরি। সেই সময় এক ব্যক্তি তাঁর মাকে নিয়ে আসেন চিকিৎসার জন্য। হাত ভেঙে গিয়েছে। চিকিৎসার প্রয়োজন। ডাঃ নাসিপুরি তড়িঘড়ি ওই মহিলার হাতে প্লাস্টার করেন। প্লাস্টার করার পর রোগী ও তাঁর পরিবারের লোকজন পালিয়ে যান। সঙ্গে চুরি করে নিয়ে যান চিকিৎসকের দু’টি দামি মোবাইল ফোন।চিকিৎসার কাজ সেরে ফোন না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন চিকিৎসক।
ফোন দুটি খোঁজার জন্য হাসপাতাল চত্বরে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। না পেয়ে ভেঙে পড়েন ওই চিকিৎসক। ঘটনার খবর শুনে স্থানীয় যুবক চন্দন সাহা ও গোপাল মন্ডলরা এগিয়ে আসেন। তাঁরা জানতে পারেন, ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে যাঁরা চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন, তাঁদের বাড়ি ঘুটিয়ারি শরিফ এলাকায়। আর বিলম্ব না করে ওই দুই যুবক ক্যানিং স্টেশনে চলে আসেন। ট্রেনে উঠে পড়েন। দেখতে পান, তিন মোবাইল চোর ট্রেনের মধ্যে রয়েছে। ততক্ষণে অবশ্য আপ শিয়ালদহ-ক্যানিং লোকাল ক্যানিং স্টেশন থেকে শিয়ালদহের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। চলন্ত ট্রেনে তিন চোর মোবাইল ফোনের সিম কার্ড খুলতে থাকে। সেই মুহূর্তে ট্রেনের মধ্যে ফোন চেয়ে বসেন চন্দন বিশ্বাস।
বেগতিক বুঝে মহিলা চোর নিজের ব্লাউজ খুলে চন্দন বিশ্বাসকে দোষারোপ করতে থাকে। ট্রেনের কামরায় থাকা অন্যান্য যাত্রীরা ঘটনা বুঝতে পেরে তিন চোরকে গণধোলাই দিয়ে তালদি স্টেশনে নামায়। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি হাজির হয় ক্যানিং স্টেশনের জিআরপি পুলিশ।এক মহিলা সহ তিনজনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন তাঁরা। ক্যানিং জিআরপি অবশ্য মীরা লস্কর, নাজিম শেখ ও সাহিন শেখকে ক্যানিং থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। ক্যানিং থানার পুলিশ ধৃত তিনজনের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
যার মধ্যে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের অস্থি বিশেষঞ্জ ডাঃ কার্তিক নাসিপুরির দু’টি মোবাইল ফোন রয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ক্যানিং থানার পুলিশ।ডাঃ কার্তিক নাসিপুরি বলেন, এক রোগীর হাত প্লাস্টার করার সময় পকেট থেকে ফোন টেবিলের উপর রেখেছিলাম। প্লাস্টার করার পর রোগীরা চলে যায়। পরে বুঝতে পারি, আমার দু’টি ফোন চুরি হয়েছে। চন্দন সাহা ও গোপাল মন্ডলদের তৎপরতায় মোবাইল সহ তিন চোর ধরা পড়ে তালদি স্টেশনে। ওদের ধন্যবাদ।
চোর ধরা প্রসঙ্গে চন্দন জানিয়েছেন, চিকিৎসকের ফোন চুরির ঘটনা জানতে পেরে প্রথমে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ঘড়ি দেখে বেরিয়ে পড়ি। ট্রেনের মধ্যে চোরের হদিশ পেয়ে যাই। তবে মহিলা চোর নাটক করে শ্লীলতাহানির দোষ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসে। না হলে আমাকেই ফাঁসানোর চেষ্টা করছিল। যদিও সাধারণ মানুষের চেষ্টায় ট্রেন থেকে তালদি স্টেশনে চোরেদের নামিয়ে আনে সাধারণ মানুষ। পরে পুলিশের হাতে তুলে দিই।