
বান্টি মুখার্জি, ক্যানিং: বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ সুন্দরবন। নদীখাঁড়ি, ম্যানগ্রোভ ঘেরা গহীন অরণ্য জঙ্গলের মধ্যে অবাধ বিচরণ করে সুন্দরবনের বিখাত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সহ হরিণ, কুমির, বন্য শূকর সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। তাদের পাশাপাশি রয়েছে আশ্চর্যজনক খলসে ফুল। যা সুন্দরবন ছাড়া বিশ্বের অন্য কোথাও কোন অরণ্যে নেই। এই খলসে ফুলের সুস্বাদু মধু আবার পৃথিবী খ্যাত। এবার সেই খলসে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। ভিড় জমাচ্ছে মৌমাছিরাও। ২০২০ সালে করোনা আর লকডাউনের জোড়া ফলায় বিধ্বস্ত ছিল সমগ্র দেশ তথা বিশ্ব। তার জেরে বন দফতর সুন্দরবনের জঙ্গলে মধু সংগ্রহের জন্য অনুমতি দেয়নি।
করোনা আর লকডাউন কিছুটা স্বাভাবিক হলে ২০২১ সালে মধু সংগ্রহের জন্য মৌলিদের মধু সংগ্রহে অনুমতি দিয়েছিল বন দফতর। কিন্তু একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় আছড়ে পড়েছিল সুন্দরবনের বুকে। তছনছ করে দিয়েছিল সমগ্র সুন্দরবনকে। ফলে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল খলসে ফুল গাছ। নষ্ট হয়েছিল মৌচাকও। যার ফলে মধু সংগ্রের জন্য বন দফতরের অনুমতি মিললেও সেভাবে মধু মেলেনি সুন্দরবনে।বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২১ সালে ৩৫০০ কেজি মধু মিলেছিল। অন্যান্য বছর ১০ থেকে ২০ হাজার কেজি মধু সংগ্রহ হয় সুন্দরবন থেকে। ২০২২ সালে মিলেছিল ১২ মেট্রিক টন মধু। চলতি বছরে প্রাকৃতিক আবহাওয়া অত্যন্ত ভালো।
জঙ্গলে খলসে ফুলও ফুটেছে প্রচুর।অন্যান্য বছরের ন্যায় মৌমাছিদের আনাগোনা অত্যধিক বেড়েছে। ফলে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন মৌলি থেকে বন দফতর।সতাঁদের আশা, চলতি বছরে প্রচুর পরিমাণে মধু সংগ্রহ হবে সুন্দরবন থেকে।সূত্রের খবর, সাধারণত এপ্রিল থেকে সুন্দরবন জঙ্গলে মৌলিরা প্রবেশ করে মধু সংগ্রহ করেন ১৫ মে পর্যন্ত। অনুমতি নিয়েই মূলত মৌলিরা সুন্দরবনের বসিরহাট এবং পাখিরালয় থেকে জঙ্গলে প্রবেশ করেন। পরে সেখান থেকে জঙ্গলের মধ্যে চার-পাঁচ জনের এক-একটি দলে বিভক্ত হয়ে মধু আহরণ করেন।
অন্যদিকে, চলতি বছর বাঘের আক্রমণে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে বাঘের আনাগোনাও। আর সেই কারণে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে মৌলিদের প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে বিমার ব্যবস্থা থাকবে বলে সূত্রের খবর।সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন জানিয়েছেন, খলসে ফুল ভালো মতো ফুটেছে। ফলে চলতি বছর ১৬ মেট্রিক টনের বেশি মধু সংগ্রহ হবে বলে আশা করা যায়।
তিনি আরও বলেন, আগামী ৭ এপ্রিল থেকে সুন্দরবন জঙ্গলে মধু সংগ্রহের কাজ শুরু হবে। চলবে এক মাস ধরে। জানা গিয়েছে, মৌলিদের সংগ্রহ করা মধু নির্দিষ্ট দামে কিনে নেবে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট কর্পোরেশন। সেই মধু সংশোধন করে প্যাকেজিং হবে। পরে তা ‘মৌবন’ নামে খোলাবাজারে বিক্রি করা হবে।