অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী করার ব্যাপারে পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের অনেক বেশি অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য এবার তৃণমূলের অন্দরে একটা চাপা ক্ষোভ তৈরি হচেছ। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিগত দিনে এমনটা ছিল না। পঞ্চায়েতে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে দলের পুরুষদের অগ্রাধিকার দেওয়া হত। এছাড়া মহিলাদের আসন যতটা সংরক্ষণ থাকতো, সেখানে মহিলারাই ছিলেন শেষ কথা। কিন্তু এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই আগের ব্যবস্থাই উল্টে দেওয়া হয়েছে।
১০০ শতাংশ আসনের ভিতর সংরক্ষণের বাইরেও সাধারণ আসনেও মহিলা মুখ বেশি করে নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে
জোর দেওয়া হয়েছে। তাতে করে পঞ্চাশ শতাংশের চেয়েও আসনে মহিলারা প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। তাতে
করে দলের পুরুষ প্রার্থীদের ইচ্ছে থাকলেও তারা সেই সুযোগ পাচ্ছেন না। এ নিয়ে ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে ঠারেঠোরে
দলের উপরতলায় বলার চেষ্টা করেছে বঞ্চিতরা। কিন্তু সেইভাবে দাগ কাটতে পারেনি। কারণ, এবার গোটা বিষয়টি
মনিটরিং করছেন দলের মুখ্য সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
বঞ্চিত পুরুষ শিবিরের অনেকেই জানিয়েছেন,
মহিলাদের প্রার্থী করা নিয়ে তাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু অনেক জায়গাতে যেখানে বিগত পঞ্চায়েতে
মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ ছিল। তা এবার সাধারণ হয়ে গিয়েছে। সেখানেও পুরুষদের সুযোগ না দিয়ে মহিলাদের
দেওয়া হচ্ছে। এখানেই তাদের অভিমান। কারণ, এমনিতে বিগত কয়েকটি পঞ্চায়েতে নির্বাচনে মহিলারা জনপ্রতিনিধি
হয়ে আসার পর অনেকে জায়গাতে কেউ জেলা পরিষদের সভাধিপতি, কেউ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, কেউ প্রধান
হয়েছেন। কেউ কেউ কর্মাধ্যক্ষ হয়েছেন।
হাতে গোনা কয়েকজনকে বাদ দিলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই সব মহিলা
সভাধিপতি, সভাপতি থেকে প্রধানদের সামনে রেখে পিছন থেকে তাঁদের স্বামীরাই ছড়ি ঘুরিয়েছেন। যা কখনও
আমজনতার ভালো হয়নি। এ নিয়ে রাজ্য পঞ্চায়েত দপ্তরের কাছে সেই সব জায়গা থেকে নানা ধরণের অসচ্ছ
কাজকর্মের ভুরি ভুরি অভিযোগ এসেছে। স্বাভাবিকভাবে মহিলাদের যত বেশি সংখ্যায় প্রার্থী করা হলে ভষিষ্যতে
তাদের স্বামীরাই তা চালাবেন। এখানে সেই সব মহিলাদের কোনও ক্ষমতা থাকবে না। তাতে লাভ হবে না বলে
শাসকদলের অন্দরমহলের অনেকে মনে করেন।
দলের অনেকে মনে করছেন, এর চেয়ে দক্ষ মহিলা কিংবা পুরুষ বাছাই
করে প্রার্থী করা হোক। তাতে দলের কাজ করতে সুবিধা হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কথায়, গ্রামীণ এলাকায়
মহিলাদের ভোট ব্যাঙ্ক অনেক বেশি শক্তিশালী। গত বিধানসভা ভোটে তা বুঝতে পেরেছে তৃণমূল। মহিলাদের ভোট
এগিয়ে দিয়েছে জোড়া ফুলকে। এবার এই জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাই মহিলাদের মুখ বেশি করে সামনে আনার
একটাই কারণ হল, ওই ভোট ব্যাঙ্ককে একজোট রেখে তা থেকে জয়কে আরও সুনিশ্চিত করা।