খবরজেলা

নামখানায় ঐতিহ্যবাহী শীতলামাতার পুজো শুরু

বিশ্ব সমাচার, নামখানা: সালটা ছিল বাংলার ১৩৬৪। সেই সময় গুটিকয়েক লোকজনের উদ্যোগে লৌকিক দেবতা হিসেবে শীতলামাতার পুজো শুরু হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লকের শিবনগর আবাদ গ্রামে। যা ধীরে ধীরে ঐতিহ্যবাহী পুজোয় পরিণত হয়েছে। যা বর্তমানে কাঁকড়াবুড়ি নামে পরিচিত। এই পুজো নিয়ে এক কাহিনি বর্ণিত রয়েছে। এই পুজো নিয়ে বনবিহারী সামন্ত বলেন, ১৩৬৪ বঙ্গাব্দে নামখানা এলাকায় বসন্ত রোগ মহামারী আকার ধারণ করেছিল। গ্রামের প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছিল।

নামখানা এলাকার ইটভাটাগুলির প্রচুর শ্রমিক মারা যাচ্ছিলেন। সেই সময় নামখানার শিবনগর আবাদ এলাকায় কার্তিকচন্দ্র সামন্তর বাড়িতে শিবপুজো হত। পুজো করতেন মেদিনীপুরের এক তান্ত্রিক ব্রাহ্মণ। তিনি স্বপ্নাদেশ পান, এই মহামারী থেকে রক্ষা পেতে গেলে শীতলা অষ্টমীতে তিন রাস্তার মোড়ে মূর্তি স্থাপন করে তান্ত্রিক মতে পুজো করতে হবে। সেই মতো মূর্তি তৈরি করে পুজো শুরু করা হয়। তান্ত্রিক ব্রাহ্মণ পুজো শুরু করেন। প্রথম বছর একদিনের পুজো ছিল। মায়ের ঘট তুলতে গিয়ে দেখা যায়, মায়ের দু’টি পদচিহ্ন রয়েছে।

তান্ত্রিক ব্রাহ্মণ জানান, মা সত্যি এখানে এসেছেন। আমি যতদিন বেঁচে থাকব, এই পুজোটা করব। পুজো শুরু হওয়ার পরে বেশ কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। এইভাবে চলতে থাকে। পুজোয় শঙ্খচিল উড়তে দেখা যায় এবং দুয়ানিয়া নদীতে কাঁকড়া উঠতে দেখা যায়। শঙ্খচিল ওড়ার পরেই মায়ের ঘট উত্তোলন করা হয় এবং ব্রাহ্মণ সেই ঘট নিয়ে এসে মন্দিরে স্থাপন করেন। এই পুজো এখন সাতদিন ধরে চলে। বেশ কয়েক বছর আগে ফেজারগঞ্জের এক ব্যক্তির বাড়িতে কাঁকড়া ধরে রাখা ছিল।

এই পুজোর সময় ওই বাড়ির কর্তাকে মা স্বপ্নাদেশ দেন, এই কাঁকড়া মায়ের মন্দিরে দিয়ে আসতে হবে। স্বপ্নাদেশ মতো সেই ব্যক্তি কাঁকড়া নিয়ে মায়ের মন্দিরে এলে ব্রাহ্মণ ওই কাঁকড়ার ভোগ রান্না করে মায়ের কাছে নিবেদন করেন। তখন থেকে এই মন্দির কাঁকড়াবুড়ি নামেও পরিচিতি লাভ করে। প্রত্যেক বছর পুজোর সময় মায়ের কিছু অলৌকিক ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়।

বুধবার থেকে এই মায়ের পুজো শুরু হয়েছে শঙ্খচিল ওড়া ও কাঁকড়া ওঠার মধ্য দিয়ে। ঘট উত্তোলন দেখার জন্য সুন্দরী কা দোয়ানিয়া নদীর দু’পাশে বহু ভক্ত ভিড় জমান। এদিন থেকে সাতদিন ধরে পুজো চলবে। মায়ের এখন নতুন মন্দির তৈরি হয়েছে। কিন্তু পুরনো মন্দির আজও সেখানেই রয়ে গিয়েছে। সেখানে প্রথম পুজো দিয়ে নতুন মন্দিরে পুজোর কাজ শুরু করা হয়। তবে সেই পুরনো তান্ত্রিক ব্রাহ্মণ এখন আর বেঁচে নেই।

তবে এখন তাঁর ছেলে এই পুজো করেন। এই পুজোর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট শ পরমেশ্বর মণ্ডল, গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান, শ্রীমন্তকুমার মালি, বিশিষ্ট সমাজসেবী ধীরেনকুমার দাস, বিদ্যুৎকুমার দিন্দা, সজল ঘোড়ুই, নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্পনা মালি মণ্ডল প্রমুখ।

Related Articles

Back to top button
error: Content is protected !!