
স্টাফ রিপোর্টার : দু’জন দুটি জেলে বন্দি। ফলে দেখা সাক্ষাতের সুযোগ নেই। কেউ নিজে মুখে স্বীকার না করলেও, এখন সবাই জানেন যে ওঁরা একে অপরের ‘ঘনিষ্ঠ’।বহুদিন পর মঙ্গলবার ভারচুয়াল শুনানিতে দেখা হতে নিজেদের আবেগকে সামলাতে পারলেন না পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। ভার্চুয়াল শুনানির মধ্যে দুই ক্যামেরার দুই প্রান্তে থাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে যে নির্বাক কথোপকথন হল, তাঁকে অনেকেই ‘প্রেমালাপ’ বলে দাবি করছেন।ব্যাঙ্কশাল কোর্টে এ দিন দুপুরে শুরু হয় নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানি।
প্রেসিডেন্সি জেল থেকে ভার্চুয়াল শুনানিতে যোগ দেন পার্থ। আর আলিপুর মহিলা সংশোধনাগার থেকে যোগ দেন অর্পিতা। তখন দুপুর ঠিক ২টো ৫০ মিনিট। আদালতের স্ক্রিনে দেখা যায় পার্থ ও অর্পিতাকে। অডিয়ো বন্ধই থাকে। যে যখন কথা বলে, তখন তাঁর ক্যামেরার অডিয়ো অন করা হয়। তবে ভিডিয়ো সব সময়েই দেখা যায়। সেই সুযোগে কারও দেখার তোয়াক্কা না করেই চোখে চোখে কথা বললেন পার্থ ও অর্পিতা।প্রথমেই একে অপরকে দেখে মুচকি হাসলেন। ইশারায় জানতে চাইলেন ভাল আছেন কি না।
দু’জনেই জানালেন তাঁরা ভাল আছেন। মিনিট চারেক বাদে পার্থ ইশারায় অর্পিতাকে জিজ্ঞেস করলেন, খেয়েছেন কিনা। পালটা একই প্রশ্ন করেন অর্পিতা। অর্পিতা ইশারায় জিজ্ঞেস করেন পার্থ শুনতে পাচ্ছেন কি না। পার্থ উত্তরে জানান, শোনা যাচ্ছে না। শুনতে পাচ্ছিলেন না অর্পিতাও। এরপরই অর্পিতার সঙ্গে মশকরা করেন পার্থ। জিভ ভেঙাতে দেখা যায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে। তা দেখে হেসে ফেলেন অর্পিতা। আবার অর্পিতার প্রশ্ন, খাওয়া হয়েছে কিনা?কথোপকথনের মাঝে পার্থ চট্টোপাধ্যায় অর্পিতার দিকে হার্ট সাইন দেখান।
এতে আবার লাজুক হাসি দেন অর্পিতা। ৩ টে বেজে ৮ মিনিট নাগাদ নিজের নীল রঙের ফতুয়া হাত দিয়ে দেখান পার্থ। তা দেখে অর্পিতা মাথা নেড়ে সম্মতি জানান। তবে কী বোঝাতে চেয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। ঘড়িতে ৩ টে বেজে ১০ মিনিট, অর্পিতা এবার ইশারায় পার্থকে জিজ্ঞেস করেন চা খাওয়া হয়েছে কিনা। ঠিক ওই সময় পার্থ বুকের বাঁদিকে আঙুল দিয়ে কিছু লেখার ইশারা করেন। ফের একে অপরকে দেখে হাসতে থাকেন।৩ টে বারো নাগাদ হঠাৎ পার্থ সামান্য সময়ের জন্য ডিসকানেক্টেড হয়ে যায়। তখন অর্পিতার চোখে মুখে দুশ্চিন্তা দেখা যায়।
পার্থর কানেকশন ফিরতেই স্বস্তি পান তিনি। এরপর অর্পিতাকে চুল সামনে আনতে দেখা যায়। তা দেখে আবার মুচকি হাসি দেন পার্থ। পালটা পার্থর গোঁফের প্রশংসা করেন অর্পিতা। কিছুক্ষণের মধ্যে আবারও ডিসকানেক্টেড হয়ে যান পার্থ। ফিরে পার্থ জানান, তিনি চা খাচ্ছিলেন। দীর্ঘদিন পরে দেখা হওয়ায় একেবারে তরুণ প্রেমিক যুগলের মতো নিজেদের নিয়ে মেতে থাকতে দেখা যায় পার্থ ও অর্পিতাকে। ঠোঁট দেখিয়ে অর্পিতা পার্থকে ইশারায় কিছু বলেন, তাতে প্রাক্তন মন্ত্রী বলেন, মাথা কী খারাপ হয়ে গিয়েছে?
৩.৩০ নাগাদ মানিক ভট্টাচার্য বলতে শুরু করলে প্রেমালাপ বন্ধ করে আদালতে মন দেন দুজনই। ঠিক যেন, ‘কাবাব মে হাড্ডি’। থেমে যায় ওঁদের কথা (মানে ইশারা)। দু’জনেই মন দেন শুনানিতে। ৩টে ৩০ মিনিট। ৪০ মিনিট পার করে শুনানি শেষ। দেখা হওয়াও শেষ। যেতে যেতে পার্থ ‘থামস আপ’ দেখান অর্পিতাকে। আর অর্পিতা? ইশারায় কিছু লিখতে বললেন। কী বললেন তিনি? পৌঁছে চিঠি দিও?