সংবাদ সংস্থা: আদানি বিতর্ককে হাতিয়ার করে মঙ্গলবার লোকসভায় ঝড় তুলেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। এই আবহে বুধবার লোকসভায় বক্তৃতা দিতে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।রাহুলকে এদিন ‘খোঁচা’ দিতে ছাড়লেন না নরেন্দ্র মোদী। সংসদে মোদী বলেন, ‘গতকাল দেখেছিলাম, একজনের ভাষণের সময় বেশ কয়েকজন তো আনন্দের সঙ্গে বলছিলেন যে এটাই হতে হত। ওঁরা হয়ত ভালোভাবে ঘুমিয়েছেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় উঠতে পারেননি। দেশের ১৪০ কোটি মানুষ যে ঘটনার জন্য গর্বিত, তাতে কয়েকজন মানুষ দুঃখিত।
এই ধরনের মানুষদের আত্মসমীক্ষা করা উচিত।’ মোদী এদিন বলেন, ‘নিজেদের স্বভাব, চরিত্র অনুযায়ী সবাই নিজেদের বক্তব্য পেশ করেছেন। সেইসব বক্তব্য যদি ভালোভাবে শোনেন, তাহলে বুঝতে পারবেন যে কার যোগ্যতা কত, কার লক্ষ্য কী। এটা বলে বলে আমরা নিজেদের সান্ত্বনা দিচ্ছি যে ওটা এখন চলে গিয়েছে, ও এখন আসছে।’ কংগ্রেসকে আক্রমণ শানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘নৈরাশ্যে ডুবে থাকা কিছু লোক দেশের উন্নতি মেনে নিতে পারছেন না। দেশের মানুষের উন্নতি তাঁদের নজরে আসছে না। এই নৈরাশ্য এমনি-এমনি আসেনি।
বারবার জনতার কাছে ধাক্কা খেয়ে এই অবস্থা। শুধু তাই নয়, আরও একটা কারণ আছে। যা শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। ২০১৪ সালের আগে ভারতের অর্থব্যবস্থার হাল খারাপ ছিল। তাই ভালো কিছু দেখলেই নৈরাশ্য ঘিরে ধরে।’ ইউপিএ সরকারকে তোপ দেগে মোদী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সবথেকে বেশি দুর্নীতির সাক্ষী থেকেছে ভারত। ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যখনই কোনও সুযোগ এসেছে, তখনই সেটা সমস্যায় পরিণত করে ফেলেছে। যখন প্রযুক্তির বিকাশ হচ্ছিল, তখন টুজি দুর্নীতিতে ডুবেছিল। ২০১০ সালে কমনওয়েলথ গেমসেও তাই হয়েছিল। পুরো বিশ্বের সামনে ভারতের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছিল।
২০১৪ সালের আগের ১০ বছরকে ‘হারিয়ে যাওয়ার দশক’ হিসেবে দেখা হয়। আর এই বিষয়টা অস্বীকার করা যাবে না যে ২০৩০-র দশক হবে ‘ভারতের দশক’।’গান্ধী পরিবারকে খোঁচা দিয়ে এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ কেউ নিজের পরিবারের জন্য বাঁচছেন। মোদী তো দেশের ১৪০ কোটি মানুষের পরিবারের সদস্য হয়ে উঠেছে। এটাই আমার সুরক্ষাকবচ।’ মোদী বলেন, ‘আজ জম্মু-কাশ্মীরে লোকতন্ত্রের উৎসব হচ্ছে। প্রত্যেক বাড়িতে তেরঙা পতাকা উড়ছে। কিছু জন বলতেন, তিরঙা উড়লে উপত্যকায় অসুবিধে হবে।
সময়ের মজা দেখুন, এখন তাঁরাও সেখানে শামিল হয়েছেন। এখন উপত্যকায় সিনেমা হল হাউসফুল হচ্ছে।’ আদানি-বিতর্কে প্রধানমন্ত্রীর জবাব, ‘মোদীর বিরুদ্ধে শুধু শুধু অভিযোগ করে লাভ নেই।ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। মোদী সরকার তা করেনি।’লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে, কীভাবে বিরোধী দলগুলি তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে সরব হচ্ছে। বললেন, ‘এখন দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে। আর তদন্তকারী সংস্থাকে গালি দেওয়া হচ্ছে। সংসদে তদন্তকারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে অনেক কথা বলা হয়েছে।
আমি দেখেছি, বিরোধীদের অনেকেই এতে সুরে সুর মেলাচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রী লোকসভায় হালকা মেজাজে বলেন, তিনি ভাবতেন দেশের সাধারণ মানুষ এবং নির্বাচনী ফলাফল বিরোধী দলগুলিকে নিশ্চয়ই একমঞ্চে নিয়ে আসবে। কিন্তু তা হয়নি। বরং, ইডি বিরোধী দলগুলিকে একজোট করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, বিরোধী দলগুলির উচিত সেই কারণে ইডিকে ধন্যবাদ দেওয়া। বলেন, ‘যে কাজ দেশের ভোটাররা করতে পারেননি, তা ইডি করে দেখিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, “ওরা ভাবে মোদিকে গালি দিলেই আমাদের উন্নতি হবে। কিন্তু এত কোনও কোনও লাভ হবে না। ২২ বছরেও ওরা শিখল না মোদিকে গালি দিয়ে লাভ নেই। দেশের মানুষ মোদিকে ভরসা করে। আর এই ভরসা ২২ বছর ধরে কাজ করার ফল। মোদির দাবি, ওরা একটা পরিবারের কথা ভাবে। আমি ২৫ কোটি পরিবারের কথা ভাবি।