
বিমল বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা : এবার তীর্থযাত্রীদের জন্য সুখবর হল সাগরসঙ্গমের স্নান এবার টানা ২৪ ঘন্টা ধরে চলবে। শুরু হবে ২০২৩ এর ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬ টা থেকে। পরদিন ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত চলবে। ফলে তীর্থযাত্রীদের কোনও তাড়াহুড়ো করতে হবে না।
নিশ্চিন্তে মেলায় এসে স্নান ও পুজো দুটোই করতে পারবেন। এমনটাই জানিয়েছেন সাগর মেলা কমিটির কর্তারা। তবে স্নানের মাহেন্দ্রযোগ নিয়ে প্রশাসন সেভাবে আলোকপাত করতে পারেনি।প্রতি বছরের মতো আসন্ন সাগরমেলায় তীর্থযাত্রীদের জন্য কি কি ব্যবস্হা থাকছে, এবং রাজ্য সরকার ও জেলা প্রশাসনের পুরো টিম কি কাজ করছে তা নিয়ে শুক্রবার বিকেলে আলীপুরে নব প্রশাসনিক ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করেন জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা ও জেলা পরিষদের সভাধিপতি শামিমা শেখ। সেখানে অতিরিক্ত জেলাশাসক রা সকলে হাজির ছিলেন।
এছাড়াও জেলা পরিষদের উপাধ্যক্ষ ও কর্মাধ্যক্ষ রা ও ছিলেন।জেলাশাসক ও সভাধিপতি উভয়ে বলেছেন এবার মেলায় ভিড় হতে পারে। লক্ষাধিক তীর্থযাত্রী আসতে পারে। পরে সভাধিপতি দাবি করেন বিগত মেলায় কুড়ি লাখের কাছাকাছি তীর্থযাত্রী এসেছিল। এবার তার চেয়ে বেশি হবে আশা করি। আমরা চাই সারা ভারত থেকে মানুষ আমাদের এই মেলায় আসুক। তিনি বলেন সাগরমেলা এক সময় খুব আগোছালো ছিল। এর পরিকাঠামো দুর্বল ছিল। এখনকার রাজ্য সরকার তার অল্প সামর্থ্য নিয়ে ধীরে ধীরে এই মেলার চেহারার ভোল বদলে দিয়েছে। আলো দিয়ে সাজানো ছাড়া তীর্থযাত্রীদের জন্য যাতায়াত থেকে বিভিন্ন পরিষেবা দিচ্ছে। যা আগে কখনও ভাবা যায়নি।
এই কারণে আমরা চাই সকলে মিলে একটা আওয়াজ তুলুন একে জাতীয় মেলার স্বীকৃতি দেওয়া হোক। জেলাশাসক এদিন বলেন বিগত দিনে মেলার পরিকাঠামোগত উন্নতির জন্য যে যে কাজ হত। এবারও তাই হয়েছে। তবে সব ক্ষেত্রে এর কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত বছরে সাগরতটরেখা প্রাঙ্গণে আরতি র ব্যবস্হা করা হয়েছিল। তবে তা একদিন হয়েছে। এবার তীর্থযাত্রীদের জন্য ১২ জানুয়ারি থেকে ১৪ জানুয়ারি এই তিনদিন সাগর আরতি হবে। আরতি র সময় একশো জন ঢাকি চল্লিশ জন পন্ডিত এবং একশো জন মহিলা তাতে অংশ নিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন।
সাগরতটের বিভিন্ন জায়গাতে যাতে তা দেখা যায় এজন্য আলাদা এলইডি স্ক্রিন লাগানো হবে। সাগরে এসে তীর্থযাত্রীরা যাতে তাদের এই ভ্রমণ স্মৃতির মণিকোঠায় রাখতে পারে এজন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। জেলাশাসক বলেন তীর্থযাত্রীদের সঙ্গে সরকারের নৈকট্য যাতে আর ও ঘনিষ্ঠ হয় এজন্য একটি পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। তার নাম দেওয়া হয়েছে বন্ধন। এখানে তীর্থযাত্রীরা সাগরে আসার পর তাদের ছবি তুলে তাদের হাতে সরকার একটি সার্টিফিকেট তুলে দেবে। তাতে তীর্থযাত্রীদের এখানে আসার পর কেমন অনুভূতি হল তা লিপিবদ্ধ থাকবে। এটা সরকারের পক্ষ থেকে তীর্থযাত্রীদের শ্রদ্ধার একটা পদক্ষেপ।
জেলাশাসক বলেন এবার মেলার কদিন প্রতিদিন যাতে কুড়ি ঘন্টা ভেসে ল চলতে পারে। সেইভাবে সেচ দফতর কাজ করেছে। এখনও কিছু কাজ বাকি। তবে তিন থেকে চারদিনের ভিতর তা শেষ হয়ে যাবে। বাংলার হেরিটেজ কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বর , তারপীঠ, তারকেশ্বর সহ পাঁচটি মন্দিরের ফটো কপি তৈরি করা হচ্ছে। তীর্থযাত্রীদের এই সব মন্দির এর মাহাত্ম্য সম্পর্কে অবগত করা হবে। ওই সব মন্দিরে যখন যখন আরতি ও পুজো হয় তার লাইভ এখানে দেখানো হবে। জেলাশাসক বলেন মেলায় এত বড় কাজ চলছে। তা র অধিকাংশ কাজ করে জনস্বাস্থ্য দপ্তর।
পানীয় জল থেকে তীর্থযাত্রীদের শেড সহ অন্য কাজকর্ম ও। এছাড়াও সেচ দফতর, পূর্ত দফতর, বিদ্যুৎ, জিবিডিএ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়াও বিপর্যয়, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, দমকল ও পুলিশ সব সময় কাজ করছে। এবার তিনটি হেলিপ্যাড সাগরে হয়েছে। এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে রোগীদের হাসপাতাল পৌঁছে দিতে গ্রিণ করিডোর করা হয়েছে। করোনার আতঙ্ক নিয়ে যতই উদ্বেগ থাকুক সে ব্যাপারেও প্রশাসন সজাগ।
রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে যে গাইডলাইন দেবে সেই অনুসারে মেলায় কাজ হবে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে এবারও মেলার কাজ দেখতে আগামী ৪ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী সাগরে আসতে পারেন। ৫ জানুয়ারি তিনি চলে যাবেন।