খবরজেলা

লোকের বাড়ির দরজায়, দোকানঘরে ধুনোর গন্ধ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন মহম্মদ আলি

বান্টি মুখার্জি, ক্যানিং: ধুনোর গন্ধ বিলিয়ে জীবিকা নির্বাহ। তাও আবার হয়! হ্যাঁ, ঠিকই। ধুনোর গন্ধ ছড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন মহম্মদ আলি সেখ। বছর সত্তরের মহম্মদ আলির বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘুঁটিয়ারি শরিফ এলাকায়। পরিবারে স্ত্রী ও এক মেয়ে রয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী মহম্মদ। প্রথম দিকে দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে সেই কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন কয়েক যুগ আগে।

বাড়িতে বসে থাকলে সংসার চলবে কী করে?হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়। ধূপ কিংবা ধুনো সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ ব্যবহার করে থাকেন। মন্দির, মসজিদ এবং গির্জাতে ধুনোর ব্যবহার আছে। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। একটি ধুনুচি কিনে ফেলেন। ধুনুচিতে ধুনোতে আগুন ধরিয়ে সকাল ও সন্ধ্যায় বেরিয়ে পড়েন হাটেবাজারে, স্টেশনে। বাড়িতে কিংবা দোকানে গিয়ে ধুনোর গন্ধ ছড়িয়ে দেন। প্রথম দিকে অনেকের কাছে মুখঝামটা শুনতে হয়েছে। অনেকেই আবার হাসিঠাট্টা করতেন। কিছুতেই কান দিতেন না মহম্মদ।

বেঁচে থাকার তাগিদে দু’বেলা দু’মুঠো অন্নসংস্থানের জন্য এই কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। এখন সকাল কিংবা সন্ধ্যার সময় ঘুটিয়ারি শরিফ, তালদি, বেতবেড়িয়া(ঘোলা), ক্যানিং স্টেশন সহ এলাকার বিভিন্ন বাজারহাট এলাকার দোকানে দোকানে ধুনোর গন্ধ ছড়িয়ে দেন। বিনিময়ে দোকানদাররা মহম্মদকে দু’টাকা, পাঁচ টাকা দিয়ে থাকেন। একদিন না এলে পরের দিন তাঁর খোঁজখবর শুরু হয়

মহম্মদ আলি সেখের কথায়, সাধারণ মানুষের দড়জায় দরজায় সকাল-সন্ধ্যা ধুনোর গন্ধ বিলিয়ে বেড়াই। প্রতিদিনই ২০০ টাকা খবচ হলেও আয় হয় ৩০০-৪০০ টাকা। এভাবেই সংসার চলে যায়। পাশাপাশি মানুষের ভালোবাসা জীবনে অনেক বেশি বড় পাওয়া।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান সকলেরই দোকান কিংবা বাড়িতে অবাধ বিচরণ মহম্মদ আলির। প্রতিদিন ধুনোর ধোঁয়া বিলিয়ে থাকেন। আমরা যা দিই, তাতেই খুশি মহম্মদ। সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি।

Related Articles

Back to top button
error: Content is protected !!