Tuesday, April 16, 2024
spot_img
Homeবিনোদন২৮ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হচ্ছে ১৫ ডিসেম্বর, থাকছে দেশী...

২৮ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হচ্ছে ১৫ ডিসেম্বর, থাকছে দেশী ও বিদেশী মিলিয়ে ১৩০ টি

বিমল বন্দ্যোপাধ্যায়, ( শিশিরমঞ্চ) কলকাতা: বৈচিত্রময় গোটা দুনিয়ার মানুষের হাসি, কান্না, দুঃখ, যন্ত্রণা,
আবেগ, হিংস্রতা, মানবিক অনুভূতিকে এক ছাতার তলায় এনে দেখানোর একটি মাত্র মাধ্যম, তা হল চলচ্চিত্র।
সেখানে বাংলার উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রবি ঘোষ থেকে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তাদের গোত্রীয়
বিদেশের নামী অভিনেতার ছবি যদি শোভা পায়, তা হলে কেমন হয়? আবার যদি দেখা যায়, চার্লি চ্যাপলিন গম্ভীর করে
বসে আছেন, আর তার পাশে পথের পাঁচালীর ছোট অপু-র আনমনা হয়ে হারিয়ে যাওয়ার মুখের ছবি? এমন হলে অবাক
হতেই হয়। বাস্তবে এবার এইভাবে ছবি দিয়ে বিশ্ব সিনেমাকে এক বিন্দুতে এনে মিলিয়েছে ২৮ তম কলকাতা
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্যোক্তারা। এমনই চমকদার ছবি দিয়ে গোটা কলকাতা শহর ভরিয়ে দেওয়া
হয়েছে। এজন্য একটাই স্লোগান তৈরি হয়েছে তা হল, ‘বিশ্ব মেলে ছবি মেলায়’। চলচ্চিত্র উৎসবে নানা ধরনের ছবি
দেখানো হবে। কিন্তু প্রতিটি ছবির ভিতর ন’ টা করে রস থাকে। যা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির অংশ। তাই ছবি দেখার
পর সেই রসের প্রভাবে মানুষ নানাভাবে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর
পর্যন্ত এই সাতদিন কেমন কেমন রসের ছবি হতে পারে- তার উপর একটি আবেগঘন স্লোগান তৈরি হয়েছে-‘নবরস
সাতদিনে’। ২৮ তম এই উৎসবে স্লোগান নিয়ে এতটা মৌলিকত্ব এর আগে পাওয়া যায়নি। ফলে এদিন বিকেলে কলকাতা
শিশির মঞ্চে চলচ্চিত্র উৎসব উপলক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে উদ্যোক্তারা যখন এই স্লোগান দু’টি প্রকাশ করলেন,
তখন হাজির সকলে মনে মনে তারিফ করেছেন। বলা যায়, ছবি দেখার জন্য এই স্লোগান এবার অনেককে টেনে নিয়ে
আসবে এই চলচ্চিত্র উৎসব প্রাঙ্গণে। শনিবার এমনটাই দাবি করেছেন উদ্যোক্তা কমিটির অন্যতম বরিষ্ঠ
পদাধিকারি মিত্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি এজন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উৎসাহ দেওয়ার কথাও উল্লেখ
করেন।
করোনার কারণে চলতি বছরের মে মাসে গত বারের চলচ্চিত্র উৎসব করতে হয়েছিল রাজ্য সরকারকে। তারপর এত
স্বল্প সময়ের ভিতর একই বছরের ডিসেম্বরে ফের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করা খুব কঠিন
কাজ। সে কথা এদিন হাজির প্রাক্তন উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান ও সুপারস্টার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বার বার
সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, আমি জানি এটা কত কঠিন। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর ও নন্দনে এই
চলচ্চিত্র নিয়ে যারা কাজ করেন, বিগত দু’ থেকে তিনমাস ধরে এর পিছনে তাদের পরিশ্রম দিতে হয়। তারপর এত
সুন্দর একটা চলচ্চিত্র উৎসব আমাদের সকলের সামনে এসে দাঁড়ায়। আমরা আনন্দ মনে তার উপভোগ করি।
প্রসেনজিৎ বলেন, আমাদের যখন বয়স কম, তখন এমন উৎসব হত না। ফলে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ভালো ছবি
দেখতে হত। কিন্তু এখন সেই দিন পাল্টেছে। এবার নিয়ে ২৮ বছর হবে কলকাতায় এই চলচ্চিত্র উৎসব। আগের
তুলনায় অনেক দেশি ও বিদেশী ভালো ভালো ছবি এখানে নিয়ে আসা হচ্ছে। যা আগে কল্পনা করা যেত না। এই কলকাতা
শহরের মানুষ সিনেমা দেখার ব্যাপারে খুব উৎসাহী। এক কথায় পাগল বললে ভুল হবে না। ফলে এই সব ছবি,
তথ্যচিত্র, স্বল্প দৈঘ্যের ছবি দেখার মতো এতবড় প্ল্যাটফর্ম আর কোথাও পাওয়া যাবে না। সেদিক থেকে এখনকার
এবং আগামী দিনের অভিনেতা, পরিচালক, সাংবাদিক থেকে সিনেমা নিয়ে কাজ যারা করেন, তাদের কাছে এই চলচ্চিত্র
উৎসব হল হাতে-কলমে পড়াশুনা শেখার পবিত্র জায়গা। এজন্য আগ্রহী সকলের এগিয়ে এসে সেই সুযোগকে কাজে
লাগানো উচিত। তিনি এও বলেন, ভারতের বিভিন্ন জায়গাতে চলচ্চিত্র উৎসব হয়। সব জায়গাতে যাইও। কিন্তু এটা
বলতেই হবে, কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মতো এমন আয়োজন অন্য কোথাও হয় না। এদিন
সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির থেকে এর শুভ সূচনা করেন বিদ্যুৎ ও যুব ও ক্রীড়া দপ্তরের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং
তথ্য এবং সংস্কৃতি ও টেকনিক্যাল এডুকেশন দপ্তরের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। উভয় এই উৎসব কমিটির
পদাধিকারি। দুই মন্ত্রী উৎসবের আয়োজন ও কি কি ছবি দেখানো হবে তা নিয়ে আলাদাভাবে বক্তব্য রাখেন।
পাশাপাশি এই গোটা ব্যবস্থার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগ এবং লাগাতার তাগাদার প্রসঙ্গ টেনে এনে তাঁর ভূয়সী
প্রশংসা করেন। এছাড়া এদিন হাজির ছিলেন বন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীমতি বীরবাহা হাঁসদা, তথ্য ও সংস্কৃতি
দপ্তরের সচিব শান্তুন বসু, বিধায়ক অভিনেত্রী জুন মালিয়া, চেয়ারম্যান রাজ চক্রবর্তী ও হরনাথ চক্রবর্তী
প্রমুখ। কলকাতার নন্দন সহ ১০ টি জায়গাতে দেশী ও বিদেশী মিলিয়ে ১৩০ টি ছবি দেখানো হবে। এছাড়া স্বল্প
দৈঘ্যের ও তথ্য চিত্র দেখানো হবে ৫৩ টি। মোট ৪২ টি দেশ এই উৎসবে যোগ দিচেছ। ৬৬ টি ছবি প্রতিযোগিতায়
অংশ নেবে। প্রতিযোগিতার বাইরে দেখানো হবে ১১৪ টি ছবি।

Most Popular