লুকোচুরি খেলতে খেলতে বিহার থেকে ট্রেনে চেপে বাংলায়, দু’বছর পর বাড়িতে ফিরল শিশু
বান্টি মুখার্জি, ক্যানিং: হ্যাম রেডিও ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সহায়তায় দীর্ঘ প্রায় দু’বছর পর বাড়িতে ফিরলে ছোট্ট শিশু করিনা হরিজন(৭)। হারানো মেয়েকে ফিরে পেয়ে খুশি তার বাবা-মা এবং পরিবারের অন্যান্যরা।
জানা গিয়েছে, বিহারে, কটিহারের বকিয়াসুখইয়ের বকিয়া দিয়ারার বাসিন্দা মন্টু হরিজনের স্ত্রী রীনাদেবী ও দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সংসার। ঝুড়ি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
সেই ঝুড়ি বিক্রি করে সংসার চলত হরিজন পরিবারের।২০২০ সালের আগস্টে পরিবার সহ ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ জেলার তালঝারি এলাকার স্থানীয় রেল স্টেশনে ঝুড়ি বিক্রি করতে গিয়েছিলেন মন্টু হরিজন। সেই সময় করিনা ও তার দুই ভাই স্টেশন চত্বরে খেলছিল। স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠেও লুকোচুরি খেলছিল।
হঠাৎ ট্রেন ছেড়ে দেয়। বাবা-মায়ের অগোচরেই মেয়েটি চলে আসে কলকাতার রেলস্টেশনে। বিস্তর খোঁজাখুজি করে মেয়েকে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে হরিজন পরিবার।অন্যদিকে, ছোট্ট করিনা হরিজন কলকাতার চিৎপুরের জনবহুল স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে কেঁদে চলে। কর্তব্যরত পুলিশের নজরে পড়ে তা।জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। কোনও তথ্য না পেয়ে ওই শিশুকে তুলে দেওয়া হয় চাইল্ড লাইনের কাছে।
সিডব্লিউসি মারফত চাইল্ড লাইনে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। শিশুটির পরিবারের হদিশ পেতে বিভিন্ন জেলায় চিঠি যায় জেলাশাসকদের কাছে। কোন হদিশ না পেয়ে করিনাকে পার্ক সার্কাসের সিন্নি অর্গানাইজেশনে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে মাত্র তিন মাস থাকে। তার কান্নাকাটিতে জেরবার হয় সিন্নি অর্গানাইজেশন।
এরপর সেখান থেকে ওই শিশুকে সমবয়সী মেয়েদের সঙ্গে রাখার জন্য বেহালার ক্রিস্টিকা চাইল্ড প্রোটেকশন হোমে রাখা হয়। সেখান থেকে তাকে বেহালার বাণী নিকেতন প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করানো হয়। হিন্দি ভাষী মেয়েটি বাংলা স্কুলে ভর্তি হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির পরীক্ষায় নব্বই শতাংশ নম্বর পেয়েছে। যা দেখে অভিভূত হয় ওই হোম কর্তৃপক্ষ। তাঁরা ঘটনার কথা হ্যাম রেডিও ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবকে জানান।
হ্যাম রেডিও খোঁজখবর শুরু করে। একসময় ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ জেলার তালঝারিতে পাওয়া যায় ওই শিশুর বাবা-মাকে।তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দু’বছর আগে হারিয়ে যাওয়া করিনাকে তার বাবা মন্টু হরিজন ও মা রীণাদেবীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। করিনা আবারও বাংলা ফিরে আসতে চায়। তেমনটাই জানিয়েছে স্কুলের দিদিমণিদের।
করিনা চলে যাওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন বাণী নিকেতন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকারা।অন্যদিকে, হারানো মেয়েকে তার পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন হ্যাম রেডিও ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগবিশ্বাস। তিনি বলেন, ঘটনার কথা জানার পর আমাদের চোখে জল এসে গিয়েছিলে।
ভেবেছিলাম প্রচুর মানুষকে তাদের পরিবারের হাতে যখন তুলে দিতে পেরেছি, তখন করিনা নামে ওই ফুটফুটে শিশুকেও যেভাবে হোক তার পরিবারের হাতে তুলে দিতেই হবে। তারপর আমরা আমাদের ক্লাবের মাধ্যমে খোঁজখবর করতেই পেয়ে যাই তার পরিবারকে। বৃহস্পতিবার করিনাকে তার বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।